পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেফালি ঐনিশিকান্ত রায় চৌধুরী S ঐ যে সামনের গলির মোড়ে ইট-বেরকরা পুরনো বাড়ীটা, ঐ বাড়ীতেই সে থাকে। বাবা নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। বাড়ীতে ঠাকুর আছেন ; তারই পূজোর জন্যে সকাল বেলায় ও ফুল তুলছে। ছোট মেয়েটি, চাপার মত রঙ । দুধের মত সাদা ধোপ দেওয়া কাপড়। মুখপানি ধুয়ে মুছবার অবসর পায়নি। ছুটে চলে এসেছে। গালের উপরে জল চিক্‌ চিক্‌ করছে যেন শিশির। এক পাশে একটা শিউলি গাছ অজস্র ফুল ঝরিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে । ওখানে গিয়ে দু-একবার ফুল কুড়োবার জন্যে ঝুকে পড়লো। তখনি থমকে গিয়ে হাত উঠিয়ে নিল। ওর বাবা ওকে বলেছেন—ধুলোয় লুটানো ফুলে ঠাকুরের পূজো হয় না। ও ভাবতে লাগলে ; ঠাকুর যে ফুলকে ধূলোয় ফেলেন তাকে তুলে নেন না কেন ? সে কি দোষ করেচে ? R ওদের বাড়ীর পাশের ঐ হলদে বাড়ীট গলি পড়েছিল। সেখানে ভাড়াটে বাবুরা এসেছেন। তাদের ছোট দুটি মেয়ে ওরই বয়সী । ওর সঙ্গে আলাপ হয়েছে । তারা এল ছোট ছোট চুপড়ী নিয়ে ফুল তুলতে। ও বল্পে-ভাই তোমাদের তো ঠাকুর নেই, কার জন্যে ফুল তুলবে ? তারা বল্পে-সই, আমরা শিউলি ফুল কুড়োবে। রোজ রোজ । ফুলের বেঁটা রদ রে শুকিয়ে শুকিয়ে জমাব। তাই দিয়ে কাপড় রঙানো হবে। এই রকম রঙের কাপড় । এক জনের পরণে ছিল শিউলি বোটার রঙ-করা কাপড় । পূজোর ফুল তোলা সারা হয়েচে । তখন ও আর একটি চুবড়ীতে শিউলি ফুল ভরতে লাগল। ঠাকুর-ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওর বাবা বলেন—ওরে পাগলী, ও ফুলগুলো কিসের জন্যে ? ও বলে—সইদের মত রঙীন কাপড় পরবো। ওর বাবা তাই শুনে মুখ ফিরিয়ে চলে যান। ঘরের থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে ওর মা আঙ্গিনার মাঝখানে ডুকরে কেঁদে ওঠেন । কপালে হাত চাপড়ে বলেন- ওরে হতভাগী তোর আবার রঙীন কাপড় পরবার সাধ কেন ? তোকে যে ঐ সাদা থান প’রেই সারাজীবন কাটাতে হবে । ওর সর্থীরা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে, ওর পরনের সাদা কাপড়ের দিকে । কি মনে করে তার চলে যায়। শিউলি ফুল ধূলোয় পড়ে থাকে। অনেক দিনের পুরনো শোক নতুন কোরে মনে পড়ে—ওর মায়ের কান্না আর থামৃতে চায় না। পাড়ার চক্ৰবৰ্ত্তী-খুড়ে সেই পথে যেতে যেতে বলেন—আর কেন বে। সকাল বেলায় কেঁদে কেঁদে অমঙ্গল কর । যা হবার তাতে হয়েই গিয়েছে। কোন পুণ্যের ফল ভোগ করবার জন্যে যে শিশু-বয়সে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছিলে, তা তো বুঝিনে ছাই ! vo তিন চার বছর চলে গেছে । ও বুঝতে পেরেছে ওর অবস্থা। পাশের বাড়ীতে ঢাক-ঢোল উঠলো বেজে । সেই মেয়ে দুটির বিয়ে । এক রাত্রিতেই দুটিকে সম্প্রদান করবার জন্যে তাদের বাবা দুটি ভাল পাত্র জুটিয়েছেন। পর পর দুটো লগ্ন । দেরী করা উচিত নয়। ওর মা গিয়েছেন তাদের বাড়ীতে। ও যায়নি। ও নাকি রাক্ষুসী ; ও নাকি ডাইনি ; বিয়ে-বাড়ীর অমঙ্গল ঘটাবে।