পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] —দাড়াও—ওকে না ত্যাগ করলে আমার বিষয়ের একটি পয়সাও তোমায় দেব না—মনে থাকে যেন । কথাটা শুনে মতিলালের মানমুখে একটুখানি হাসি ফুটে উঠল। অপূৰ্ব্ব সে হাসি। তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সে আমাদের বললে—চল যাই, হিমানী অনেকক্ষণ একলা বসে আছে । আমরা ধীরে-ধীরে বাইরে এসে একে-একে গাড়ীতে উঠে বসলুম। মতিলালের ভাইবোনের ভিড় ক’রে বাড়ীর দরজায় এসে দাড়াল—তাদের সবার চক্ষুই অশ্রুভারাক্রান্ত । কারও মুখে কোনো কথা নেই। হঠাৎ এই নিস্তব্ধত ভেঙে দিয়ে দড়াম ক’রে ওপরকার একটা জানলা খুলে গেল। জানলায় বোধ হয় মতিলালের মা এসে দাড়ালেন, কিন্তু আমরা কেউ আর গাড়ী থেকে মুখ বাড়ালুম না । কয়েক মুহূৰ্ত্ত বাদে হিমানী বলে উঠল—ঠাকুর-পে, ঐ যে দেখছ বাড়ীটা—যেটার দরজায় তালা লাগামো —ঐটে আমাদের বাড়ী। তারপরেই মতিলালের দিকে ফিরে সে হাসতে-হাসতে বললে—তাড়িয়ে দিলেন তো ? তুমিও না যেমন ! কোনো বাপ-ম। কখনও এ-রকম ছেলেকে ঘরে নিতে পারে! কি বল ভাই, খুশী ঠাকুর-পো ? * নিৰ্ম্মল খুব হাস্ত বলে হিমানী তাকে খুশী ঠাকুরপো বলে ডাকৃত। নিৰ্ম্মল বললে—“আমি যদি বাপ হতুম তা হ’লে নিশ্চয় পারতুম। হিমানী আবার মতিলালের দিকে ফিরে বললে—দেখ, তুমি ও-রকম মুখ ক’রে থাকলে আমার ভারি খারাপ লাগে। আমি কিন্তু এক্ষুণি কেঁদে ফেলব—তখন তোমরা তিনজনে মিলে আমায় থামাতে পারবে না । হিমানীর দুই চোখ অশ্রুতে ভরে উঠল। মতিলাল গাড়ী থেকে এবার মুখ বাড়িয়ে গাড়োয়ানকে বললে— · এই, ষ্টেশন চলো । - গাড়ী চলতে আরম্ভ করতেই মতিলাল হিমানীকে বললে—আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে বলে আমার কোনো মতিলাল ›ጳ দুঃখ হয়নি। আমরা সমস্ত দুঃখকে তো বরণ করেই নিয়েছি হিমানী । হিমানীর চোখের জল এক নিমিষে অপসারিত হয়ে গেল। সে তার চোখ দুটোকে বড় বড় ক’রে বললে —তবে তুমি অমন মুখ ক’রে রয়েছ কেন ? মতিলাল বললে—আমার দুঃখ এই যে, আমাদের জন্য বন্ধুর মিছিমিছি বাবার কাছে কতকগুলো গালাগালি খেলে । মতিলালের বাবার গলাগলিতে আমাদের মনের মধ্যে যতটুকু গ্লানি জমা হয়ে উঠেছিল, হিমানীর হাসির আঘাতে ষ্টেশনে পৌছবার আগেই তা উড়ে গেল । যেমন হাসতে-হাসতে আমরা বেরিয়েছিলুম,পরদিন সকালে আবার তেমনি হাসতে-হাসতে আমরা তাদের বেলেঘাটার সেই খোলার বাড়ীর দরজায় গাড়ী থেকে নামলুম। এই ব্যাপারের দিন দশ বারো পরে একদিন বিকেলে মতিলালের বাড়ীতে গিয়ে দেখি নিৰ্ম্মল মুখখানি চুণ ক’রে একখান জলচৌকির ওপরে বসে আছে। এক কোণে হিমানী দাড়িয়ে, তার মুখে হাসির রেখা তখনও মিলিয়ে যায়নি, আর মতিলাল গম্ভীর হয়ে থাটের ওপরে বসে । ঘরে ঢুকেই বুঝতে পারলুম একটা কিছু হয়েছে। জিজ্ঞাসা করলুম—ব্যাপার কি ? নিৰ্ম্মল হিমানীর দিকে হাত বাড়িয়ে বললে—জিজ্ঞাসা কর ওঁদের— হিমানীকে জিজ্ঞাসা করলুম-কি হয়েছে বৌদি ? হিমানী বললে—কি আবার হবে । নিৰ্ম্মল ঝেড়ে-ফুড়ে ঠিক হয়ে বসতে বসতে বললে— আমরা এখানে আসি—ওঁদের সেটা ইচ্ছা নয়। হিমানী বলে উঠল—দেখ খুশী ঠাকুরপো, যা-ত বোলো না বলছি—ত হ’লে এই পাখা-পেট খাবে। আমি তাই বলেছি ! নিৰ্ম্মল গম্ভীরভাবে বললে—ত না তো কি ! যা বলেছ সরল অর্থ ঐ— হিমানী এবার আমার দিকে চেয়ে বললে—আচ্ছা ঠাকুরপো তুমিই বল— · -