পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুঙ্কটিকা ও কিরণ শ্রীরামপদ মুখোপাধ্যায় বেলার বিবাহে মিত্ৰ-বংশের যে যেখানে ছিলেন আসিয়৷ জড় হইলেন। খুড়তুত, জ্যাঠতুত, মাসতুত, পিসতুত ছাড়া বেলার বাপেরাই সাত ভাই বৰ্ত্তমান। ভগিনী ছয় । জন্মপল্লীতে সেই জীর্ণ বাড়ীখানি সংস্কার-অভাবে স্বপূর অতীতের বিশ্বত ইতিহাসের ছিন্ন পৃষ্ঠাখানি মেলিয়া ভাবী বংশধরদের পানে করুণনয়নে চাহিয়া আছে। অতটুকু বাড়ীতে স্থান-সঙ্কলান না হওয়ায় ও পল্লীর সহস্ৰ কল্পিত আকল্পিত অস্ববিধার মধ্যে চাকুরিয়ার জীবনকে দু'একদিনের জন্যও দুঃখ-তাপে জর্জরিত করিবার আকাঙ্ক্ষা না থাকায়, কেহই সেই ভগ্ন জন্মভিটার মমতাময় চাহনিটুকু দেখিয়াও দেখেন নাই। বিলীন অতীত বিস্কৃতিতে ডুবিয়াছে, সোনার বর্তমান স্ত্রী-পুত্র-পরিজনের সাহচর্য্যে সুখেই কাটিয়া যাইতেছে । ভারতের প্রাস্ত হইতে প্রাস্তান্তরে ইহাদের কৰ্ম্মক্ষেত্র প্রসারিত। কেহ বা হিমালয়ের শিরোদেশে,—কেহ বা কুমারিকার প্রাস্তসীমায়; পৰ্ব্বত, মরুভূমি, সমুদ্র—সৰ্ব্বত্রই এই অভিজাত বংশীয়ের চরণচিহ্নে চিহ্নিত । অনন্তশূন্যে ঘূর্ণ্যমান গ্ৰহতার স্ব স্ব গতিপথে যেমন প্রতিনিয়ত আবৰ্ত্তিত হইবার সময় সহসা এক একবার অতিনিকটবর্তী হইয় পড়ে ও পরস্পরের জ্যোতিরেখার সংঘর্ষে উজ্জল দীপ্তি বিচ্ছুরিত করিয়া জানাইয় দেয়, তাহারা সমধম্মী বা সমজাতীয়, তেমনি এই হিমালয়কুমারিক-প্রাস্তবাসীবর্গ কখনও কেহ কাহারও সন্মুখবর্তী হইলে আদর-আপ্যায়নে পরস্পরকে প্রীতি-সম্ভাষণ জানাইয়া লোকের বিস্ময়োৎপাদন করিয়া বুঝাইয়া দেন– বংশপরম্পরায় উহাদের ধমনীতে একই শোণিত প্রবাহিত। তা যাহাই হউক, বেলার পিতা মণিমোহন মোটা মাহিনার চাকুরী করেন, একজন নামজাদা অফিসার তিনি। সন্মান ও অর্থ দুই-ই অপৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে সংগ্ৰহ করিয়াছেন। সেইজন্ত তাহার মনে রক্তের সম্বন্ধটা এতকাল পরে বেলার বিবাহে সহসা জাগিয়া উঠিল এবং বেশ একটু গভীর আন্দোলনেরই স্বষ্টি করিল। অসংখ্য সম্বন্ধ-সুত্রের ন্যায় ভারতের বিস্তীর্ণ প্রাস্তরে উৰ্ণনাভের জাল বিস্তার করিয়াছে ; তিনি দৃঢ়করে তাহ। টানিয়া তুলিবার প্রয়াস করিলেন। নিমন্ত্রণ-পত্র গেল, অর্থ প্রেরিত হইল, লোক ছুটিল । সমগ্র ভারতবর্ষ কলিকাতার ক্রোড়ে আসিয়া আশ্রয় লইল । প্রকাণ্ড প্রাসাদ । অসংখ্য কক্ষে অগণ্য আলোক জলিতেছে এবং আগন্তুকগণের কোলাহলে সে স্থান মুখরিত। সকলেই নিকট-আত্মীয়-সকলেই অভ্যাগত । দীর্ঘ দিন বিচ্ছেদের পর মিলনের ব্যগ্রতাটুকু কাহারও নয়নে বা অস্তরে রেখাপাত করে নাই । দশজন নিঃসম্পৰ্কীয় পরিবার ট্রেনে বা ষ্টীমারে যেমন কয়েক ঘণ্টার জন্য একত্র মিলিয়া মুহূৰ্ত্তের তরে সাংসারিক পরিচয় ও মুখ-দুঃখের সংবাদ লইয়া থাকে এবং গন্তব্যস্থানে আসিবার পূর্ব মুহূৰ্ত্তে ক্ষণিকের পরিচয় বিস্তৃত হইয়া আপন আপন পোটলাপুটলি লইয়া মুখ ফিরাইয়৷ নামিয়া যায়, উহাদের অস্তরেও নিকটতম আত্মীয়ের স্থখ-দুঃখের স্পর্শ অমনি নির্লিপ্ততার অনাসক্তিতে ফুটিয়া উঠিতেছিল । এই বিবাহ মিলনের উপলক্ষ মাত্র, কয়েক দিনের বিদেশ-বাস । যে যাহার পুত্রপৌত্রের স্বথ-স্বাচ্ছন্দ্য লইয়াই বিভোর। ইহাদের বিলাইয় যেটুকু উদৃত্ত থাকে তাহ লইয়া যত কিছু আত্মীয়তার শিষ্টাচার। প্রিয়পরিজনের স্বর্থ-স্বার্থের প্রাচীর-পাশ্বে—তাই এই আত্মীয় বন্ধুর পরিচয়ের এতটুকু শীত-সঙ্কুচিত কিরণ আসিয়া জমিয়াছে ! গৃহলক্ষ্মীরা যে যাহার পুত্রকন্যা লইয়। এক একখানি কক্ষ দখল করিয়া বাক্স পেটরা বিছানা গুছাইয়া অপর কক্ষের ংবাদ সংগ্রহে তৎপর। বাহিরে ঠাকুর, চাকর-কাজকৰ্ম্ম, রন্ধন-আয়োজনের ভার লইয়াছে। অর্থের অপ্রতুলত।