পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানুষের মন ডাঃ ঐগিরীন্দ্রশেখর বস্থ, ডি-এসসি, এম-বি অপবিজ্ঞান এক এক সময়ে এক একটা কথার ভূত আমাদের ঘাড়ে চাপিয়া বসে। কয়েক বৎসর পূর্বে “বিজ্ঞান” কথাটি এইরূপ আমাদের স্বন্ধে অধিষ্ঠান করিয়াছিল। তখন সব বিষয়ে আমরা বিজ্ঞানসম্মত কারণ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক যুক্তি’র আশ্রয় লষ্টতাম। পরে “বিদ্যুৎ” কথাটা ঘাড়ে চাপিল। তখন টিকিতে বিদ্যুৎ, ‘কোষকুমীতে বিদ্যুৎ, ‘তুলসী গাছে বিদ্যুৎ, ‘জীবনী শক্তির মূলে বিদ্যুৎ দেখিতে লাগিলাম। সম্প্রতি “মনস্তত্ব” কথাটা সাধারণের স্বন্ধে ভর করিয়াছে। ‘বুদ্ধের মনস্তত্ত্ব,’ ‘শিশুর মনস্তত্ত্ব,’ ‘বোমার মনস্তত্ত্ব, ‘géo Mao, psychological moment, slave mentality ইত্যাদি কথা শুনিতে শুনিতে কান পচিয়া গেল। অতি-আধুনিক সাহিত্যে পাচ বৎসর বয়স্ক নায়কও এখন মনস্তত্ত্বের দোহাই না দিয়া কথা বলে না । যখন যে বিজ্ঞানের কথা সাধারণের মধ্যে প্রচলিত হয় তখনই সেই বিজ্ঞানের আশ্রয়ে এক একটি অপবিজ্ঞান গড়িয়া ওঠে। মনোবিদ্যারও এইরূপ অপবিজ্ঞান স্বষ্টি হইয়াছে এবং তাহারই প্রভাবে যেখানে সেখানে মনোবিদ্যার বুক্‌নি শোনা যাইতেছে। ভুল পথেই হোক, আর ঠিক পথেই হোক, মনোবিদ্যা সম্বন্ধে সাধারণের কৌতুহল জাগিয়াছে—সে বিষয়ে সন্দেহ নাই । মনোবিদ্যা আধুনিক বিজ্ঞান মনোবিদ্যা অতি-আধুনিক বিজ্ঞান। বহু পুরাকাল হইতে মনোবিদ্যার চর্চা প্রচলিত থাকিলেও মাত্র কিঞ্চিদধিক পঞ্চাশ বৎসর হইল ইহা বিজ্ঞানের আসন পাইয়াছে। যে মন লইয়া সকলকেই কারবার করিতে হয় তাহারই বিজ্ঞানের উৎপত্তি অস্তান্ত বিজ্ঞানের পশ্চাতে হইয়াছে। ভূতবিদ্যা বা Physics, কিমিতি বিদ্যা বা Chemistry, জ্যোতিষ, ইত্যাদি জড়বিজ্ঞান বহুকাল পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এখনও অনেক পণ্ডিত মনোবিদ্যাকে বিজ্ঞানের আসন দিতে প্রস্তুত নহেন। বিজ্ঞানের ইতিহাসে মনোবিদ্যার আসন যে সকলের শেষে তাহাতে আশ্চৰ্য্য হইবার কিছু নাই । মানুষের অতুসন্ধান-প্রবৃত্তির উপর বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত। একটু ৰিচার করিয়া দেখিলেই বুঝা যাইবে যে, বহির্বস্তু সম্বন্ধে মানুষ যতটা কৌতুহলী, তাহার নিজের মনে কি হইতেছে সে সম্বন্ধে ততটা নহে। এই কারণেই মানুষ মনোবিদ্যার দিকে বিশেষ আকৃষ্ট হয় নাই । সকল অবস্থায় অন্তদর্শনের চেষ্ট ভিন্ন মনোবিজ্ঞানের উন্নতি হইতে পারে না, কিন্তু অতি অল্পলোকেরই অন্তদর্শনের ইচ্ছা মনে উঠে । কঠোপনিষদে আছে,— so পরাঞ্চিখানি ব্যতৃণৎ স্বয়ন্ধু তস্মাৎ পরাঙ পশুতি নান্তরাত্মম্। কশ্চিন্ধীরঃ প্রত্যগাত্মানমৈক্ষ দাবৃত্ত চক্ষুর মৃতত্বমিচ্ছন ॥ ১ ॥ পরমুখী হলদ্বার স্বয়ষ্ণু বিধানে দৃষ্টি পরমুখী নহে অন্তরাত্মা পানে কদাচিৎ কোনো ধীর অমৃত সন্ধানে আবরিয়া চক্ষু দেখে প্রত্যক আত্মনে। অতএব মানুষের কি অপরাধ ! স্বয়ম্ভু ভগবান সাধারণ মানুষের দৃষ্টি বহিমুখ করিয়া স্বষ্টি করিয়াছেন। বাহিরের জড়বস্তু লইয়াই মানুষের তৃপ্তি। কদাচিৎ কোন ধীর ব্যক্তির আত্মদর্শনের ইচ্ছা দেখা দেয়। এইজন্তই মনোবিদের সংখ্যা অন্যান্য বৈজ্ঞানিকের তুলনায় কম এবং মনোবিজ্ঞানেরও উন্নতি অন্যান্ত বিজ্ঞানের পরেই হইয়াছে। মামুষের নিজের মন পৰ্য্যবেক্ষণ করিতে স্বভাবগত অনিচ্ছা আছে। আমরা যখন রাগি তখন যাহার উপর রাগ হইয়াছে তাহাকে শাস্তি দিতে মন নিবন্ধ থাকে। রাগের সময় নিজের মনোভাবের কি পরিবর্তন হইতেছে