পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] মতিলাল సిసి বান্ধবের একে-একে আসা বন্ধ করতে লাগল—দেখতে দেখতে আমাদের কৈশোরের স্মৃতির ওপরে বিরাট প্রাসাদ তৈরী হ’য়ে গেল । মাঠের আঞ্জ উঠে যাওয়ার পর কিছুদিন আমরা এখানে-সেখানে জমায়েং হোতে লাগলুম, কিন্তু আডড আর তেমন জমল না । বছরখানেকের মধ্যেই আমরা একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লুম। তারপরে জীবনে কতবার চাদ উঠল, কত চাদমুখ দেখলুম তার ঠিকানা নেই। অভিজ্ঞ সংসার দেখিয়ে দিলে, চাদে রয়েছে কলঙ্ক আর চাদমুখ—যাক্ সে কথা আর তুলে কাজ নেই। মাঠের আডডা উঠে যাওয়ার বোধ হয় পনেরো বিশ বছর পরে নানা ঘাটের জল খেয়ে তখন এক মাসিকপত্রের সম্পাদকীয় বৈঠকে বেশ কায়েমী হ’য়ে বসা গিয়েছে, এই সময় একদিন সন্ধ্যেবেলা সম্পাদক-মশায় একটি নতুন লোককে আডডায় নিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন—তোমরা কবি শশিশেখরের এত প্রশংসা কর ; ইনিই সেই কবি শশিশেখর ! ভদ্রলোক সভাস্থ সবাইকে নমস্কার করে অতি সঙ্কচিতভাবে ফরাসে একটি কোণে গিয়ে বসে পড়লেন । কবির চেহারাটি ক্টেনি সচরাচর হয়ে থাকে, অর্থাৎ মোটেই কবিজনোচিত নয়। মাথার চুল কদমছাট, পরণে একখানা ময়লা ধুতি, অঙ্গে একটা আধময়লা জামা —সেট না-পাঞ্জাবী, না-সার্ট না-কোট ৷ পায়ের জুতোজোড়া ছেঁড়, শততালি হ’লেও জুতোর মালিক যে সৌধীনতা জুতোর আকৃতি দেখলেই বুঝতে পারা যায়। মাথার চুল কতকগুলো পেকে গিয়েছে। বেশ বুঝতে পারা যায় যে, দুর্দশায় পেকে গিয়েছে। মুখের চেহারাও তার অঙ্গের জামা-কাপড়েরই সামিল। দাড়িগোফ বোধ হয় মাসখানেক আগে কামানো হয়েছিল। লোকটি খাটে বসে আসরের চারদিকে চেয়ে । আমার দিকে একবার দৃষ্টিনিবন্ধ করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলে । তার চোখের ওপরে চোখ পড়তেই আমার মনে হ’ল যেন মুখখান কোথায় দেখেছি। যতই তার মুখের দিকে চাই, ততই মনে হয় যেন এ মুখ পরিচিত। গৃহ-প্রত্যাগত প্রবাসী ঘরে ফিরে তার ۶٧دrvصvvArMrvسیrسیه مهمی বাড়ীর ধ্বংসস্তুপের মধ্যে যেমন করে তার হারাণ রতন খুঁজে বেড়ায় আমিও তেমমি স্থতির ধ্বংসস্তুপে জামা ছেলেবেলাকার বন্ধুদের মুখগুলো খুঁজতে লাগলুম-কে —কে এই কবি শশিশেখর ! আড ভাঙবার কিছু আগে নৰাগত কৰি সকলকে নমস্কার জানিয়ে বিদায় নিলে । তারপরে গুটি-গুটি জামায় কাছে এসে বললে—আমায় চিনতে পারলে না তো ? চীৎকার ক’রে উঠলুম-মতিলাল ! - মতিলাল বললে—হ্যা, চিনেছ ? মতিলালকে ধরে বসালুম। কিন্তু সেদিন তার বড্ড তাড়া ছিল ব’লে আর বসতে পায়লে না। পরের দিন আসব বলে সে চলে গেল। পরের দিন তার অপেক্ষায় উৎকণ্ঠিত চিত্তে ৰসে রইলুম, কিন্তু সে এল না। তার পরের দিন আডড ভাঙবার কিছু আগে মতিলাল এসে হাজির। মতিলালকে কাছে বসালুম। সে ছদ্মনামে কবিতা লেখে । সকালে দৈনিক একখানা বাংলা কাগজে চাকরী করে। মাইনে পঞ্চাশ টাকা, কিন্তু তিন মাস অস্তর একমাসের মাইনে পায়। সন্ধ্যাবেলায় ফু-জায়গায় ছেলে পড়ায়, সেখান থেকে ত্ৰিশ টাকা পায় । আডিডা ভেঙে যাবার পর রাস্তায় এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলুম—কোন দিকে স্বাবে ? মতিলাল উত্তর দিকের একটা রাস্ত দেখিবে দিয়ে বললে—এই দিকে । বললুম—চল, আমিও ঐদিকে যাব। দু-জনে পাশাপাশি অনেকক্ষণ ধরে নীরৰে চলবার পর অত্যন্ত সঙ্কোচের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলুম—বৌদি কোথায় ? মতিলাল একটু হেসে বললে—তাকে মনে পড়ে ? আর সামলাতে পারলুম না। বলে ফেললুম— · রাস্কেল, ছোটলোক, বৰ্ব্বর, অকৃতজ্ঞ ! মনে পড়ে ! আমাদের বন্ধুত্বের যা প্রতিদান তুমি দিয়েছ তাতে তোমাদের কথা আর মনে না রাখাই উচিত— A রাগের ঝোকে তাকে আরও অনেক কথা বলে ফেললুম, কিন্তু সে একটি কথারও উত্তর না দিয়ে চুপ ক’রে সমস্ত শুনে গেল। আমার বক্তর্য শেষ হ’য়ে যাওয়ার