পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] মানুষের মন চলে। দর্শক দেখিতেছে, এই দুই যন্ত্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ বৰ্ত্তমান'। প্রথমদুষ্টিতে মনে হয়, এই দুই যন্ত্র পরস্পরকে চালাইতে সক্ষম। অনভিজ্ঞ দশক কৌতুহলী হইলে বাশী ও বেহালা আনিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখিবে যে ইহাদের বাজাইবার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ পৃথক । কি করিয়া একটা যন্ত্র আর একটাকে চালাইতে পারে তাহ বোঝা সহজ নহে, অথচ সে স্পষ্ট শুনিতেছে, বাশীর সুর চড়িলে বেহালার স্বর চড়ে, এবং বেহালা দ্রুত বাজিলে বঁাশী দ্রুত বাজে । মৃদঙ্গে আঘাত করিলে যেমন শব্দ উৎপন্ন হয়, তেমনি বেহালায় আঘাত করিলে কি বঁাশী বাজিয়া ওঠে, না বঁাশীতে ফু দিলে বেহালা বাজে ? দুই যন্ত্র একসঙ্গে চলে, ইহা অতি স্পষ্ট কথা ; কিন্তু কি করিয়া চলে ভাবিতে গেলেই গোলে পড়িতে হয় । অনভিজ্ঞ দশক বৈজ্ঞানিকের চিন্ত-প্রণালী অবলম্বন করিলে বলিবে বাশী বেহালাকে চালাইতেছে, কিংবা বেহাল বাণীকে চালাইতেছে এমন কথা বলা চলে না ; কি করিয়া এই দুই যন্ত্র একসঙ্গে চলিতেছে বলিতে পারি ন, তবে এই দুই যন্ত্র যে একত্রে মুর মিলাইয়া চলে ইহ। স্বম্পষ্ট। কৌতুহলী দর্শকের বৈজ্ঞানিক চিন্তা তাহাকে নুতন কোন তথ্য জানাইল ন সত্য, কিন্তু কোনো ভ্ৰমেও পড়িতে দিল না । একে অপরকে চালাইতেছে, এই যে স্পষ্ট অনুভূতি তাহা ভুল বলিয়। সে জানিল । ইহাই তাহার লাভ । এই দর্শক যে-ভাবে সমস্যার সমাধান করিল, একদল মনোবিদও সেইভাবে দেহ ও মনের সম্বন্ধের মীমাংস করেন। তাহারা বলেন,দেহের উপর মনের প্রভাব বা মনের উপর দেহের প্রভাব আছে মানিব না। তবে আপাতদুষ্টতে দেহের পরিবর্তনে যে মনের পরিবর্তন ও মনের পরিবর্তনে দেহের পরিবর্তন সাধিত হইতেছে বলিয়। মনে হয় তাহার কারণ এই যে উদাহরণের বঁাশী ও বেহালার মত দেহ ও মন একই সঙ্গে চলিতেছে। বিজ্ঞানের ভাষায় এই মতকে মনোদৈহিক সহচারবাদ (Psychophysical parallelism ) Til KY I (5ffTS (Tff:T= কাৰ্য্যকারণ সম্বন্ধ মানিবার আবশ্বকতা থাকে না অথচ i 8 م= 88 S8Gr প্রাত্যহিক ঘটনায় দেহমনের যে সম্বন্ধ দেখা যাইতেছে তাহাও অস্বীকার করিতে হয় না । সহচারবাদীর সমস্যা পূর্বের উদাহরণের অনভিজ্ঞ দর্শক যদি বাস্থ্যকরদিগের নেতাকে দেখিতে পান তবে তিনি বলিবেন, বঁাশী ও বেহালা যে একই স্বরে চলিতেছে তাহার কারণ উভয় যন্ত্রই একই ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইতেছে। দেহ ও মনের সহচারিতার কারণ অনুমান করিতে পারি যে, উভয়কেই একই শক্তি একই সময়ে চালিত করিতেছে । বাদ্যকরদিগের নেতার ইঙ্গিত বংশীবাদক ও বেহালাবাদক উভয়েই বুঝিতে পারে, অর্থাৎ তাহার সঙ্কেতের মধ্যে বঁাশী ও বেহালা এই দুই বিভিন্ন যন্ত্রকে চালাইবার মত দুই বিভিন্ন শক্তি আছে স্বীকার করিতে হয়। সেইরূপ একই শক্তি দেহ ও মনকে চালাইতেছে বলিলে তাহার মধ্যে চিংশক্তি ও জড়শক্তি উভয়ই আছে অম্লমান করিতে হয়,নতুবা গোল মেটে না। সেজন্য অধিকাংশ মনোদৈহিক সহচারবাদীরা বলেন যে, যখন আমরা ব্যাণ্ডমাষ্টারকে দেখি নাই তখন মাত্র দেহমনের সহচারিত মানিয়াই ক্ষান্ত হইব। এই সহচারিতার মূলে কি আছে, , তাহা অনুসন্ধান করিবার মত মালমশল আমাদের নাই এবং সেইরূপ গবেষণার আবশ্যকতাও নাই । দেহের উপর মনের ক্রিয়া সহচারবাদের যবনিকা এইখানেই ফেলিয়া দিতে আমার আপত্তি আছে । কেন আছে তাহা বলিতেছি । ইচ্ছা করিলেই হাত তুলিতে পারি এবং ইচ্ছ না করিলে হাত তুলি না। সহচরবাদী বলিবেন, ইচ্ছা করা-নাকরার উপর বাস্তবিক হাত তোলা-না-তোলা নির্ভর করে না । আমাদের ইচ্ছ। স্বাধীন নহে। ঘড়ির র্কাটা যদি মনে করে বারটার দাগে গিয়া তবে বাজিব নচেৎ বাজিব ন, তাহা হইলে তাহার ইচ্ছার স্বাধীনতার মূল্য যেরূপ, মাহুষের ইচ্ছার স্বাধীনতার মূল্যও ঠিক সেইরূপ। পূৰ্ব্ব মানসিক ঘটনাপরম্পরার ফলেই ইচ্ছার উৎপত্তি। এই সকল মানসিক ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক পরিবর্তনও ঘটিতেছে। যখন মনে হাত তুলিবার ইচ্ছা উৎপন্ন হইল