পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిజఆ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড সেই সময় শরীরও তাহার জন্য প্রস্তুত হইল। ইহার ফলে মনে হইল আমার ইচ্ছার বশেই হাত উঠিল । সহচারবাদীর শরীরের উপর মনের তথাকথিত প্রভাব বুঝিতে বিশেষ বেগ পাইতে হইল না । মানসিক ব্যাপারের কারণ মনে খুজিতে হইবে এবং শারীরিক ব্যাপারের কারণ শরীরে খুজিতে হইবে, ইহাই সহচারবাদীর প্রধান কথা । মনের উপর দেহের ক্রিয়া এখন মনের উপর শরীরের ক্রিয়ার ব্যাখ্যা দেখা যাক । শরীরের রোগ হইলে মনের অবসাদ হয় । সহচারবাদী বলিবেন যে, এখানেও কার্য্যকারণ সম্বন্ধ নাই। শরীরের অবসাদের সঙ্গে সঙ্গে মনের অবসাদ হয় বটে, কিন্তু মনের অবসাদের কারণ মনের মধ্যেই আছে । ইহাও না হয় মানিলাম, কিন্তু মদ খাইলে মনে যে আনন্দ আসে তাহার ব্যাখ্যা কি ? মদ ত জড়বস্তু, তাহা কেবল শরীরের উপরই ক্রিয়া করিতে পারে । মনে তাহার প্রভাব কি করিয়া বিস্তৃত হয় ? মনের পরিবর্তন চিৎশক্তি ভিন্ন হইতে পারে না। এই চিৎশক্তি কোথা হইতে আসিল ? সহচারবাদী এ প্রশ্ন বিচার করেন নাই । তিনি হয়ত বলিবেন, কোন মুহূর্বে কোন ব্যক্তি মদ খাইবে, বা কোন সময়ে কে কাহাকে মদ খাওয়াইবে, তাহা পূৰ্ব্ব হইতেই স্থির আছে এবং যে মদ খাইল তাহার মনও এমনভাবে প্রথম হইতেই স্বল্প হইয়াছে যাহাতে ঠিক উপযুক্ত মুহূৰ্ত্তে তাহার মনে পূৰ্ব্ব মানসিক ঘটনাপরম্পরার ফলে আনন্দ জাগিয়া উঠে। কঠিন নিয়তি বা ভগবান জন্মের পূর্ব হইতেই মন ও দেহের সহচারিত বিধান করিয়া রাখিয়াছেন । কোনো মনোবিং ঠিক এই প্রকার ব্যাখ্যা করিয়াছেন কিনা আমার জানা নাই, তবে মনের উপর দেহের প্রভাব বুঝাইতে হইলে সহচারবাদীর ইহাই সম্ভাব্য ব্যাখ্যা । জড়ে চিৎশক্তি এটা খুবই সত্যকথা যে, প্রায় সমস্ত বৈজ্ঞানিকই কাৰ্য্য কারণ শৃঙ্খলা মানিয়া থাকেন। এই হিসাবে তাহারা নিয়তিই মানিতেছেন, কিন্তু আমার মনে হয়, নিয়তি বা ভগবানকে টানিয়া না আনিলেও মনের উপর দেহের প্রভাবের সঙ্গত ব্যাখ্যা করা যাইতে পারে । মদ খাওয়ার উদাহরণেই বা যাই কেন ? প্রত্যেক জড়বস্তুই আমাদের মনে কোনো-না-কোনো পরিবর্তন আনে। রূপ রস গন্ধ স্পর্শ শব্দ বোধ প্রত্যেকটি মানসিক ব্যাপার এবং তাহা জড়বস্তুর দ্বারাই সংঘটিত হয়। মদে যেমন আনন্দ আনে, জড়দ্রব্যে সেইরূপ রূপরসাদি বোধ আনে । অতএব সমস্ত জডন্দ্রব্যে এমন গুণ মানিতে হয় যাহাঁতে মনের পরিবর্তন হওয়া সম্ভব, নচেৎ জড়দ্রব্যের কোন অনুভূতি বা জ্ঞানই থাকিত না। জড়দ্রব্যে যেমন জড়শক্তি নিহিত আছে সেইরূপ চিৎশক্তিও আছে মানিলে কোনো গোল হয় না। আমার মনে হয় ইহাই সৰ্ব্বাপেক্ষা সঙ্গত ব্যাখ্যা । মদের জড়শক্তি শরীরে বিকার আনে এবং মদেরই চিৎশক্তি মনের বিকার আনে। কম্পমান বস্তুর জড়শক্তি কর্ণপটহ আন্দোলিত করে এবং তাহারই চিৎশক্তি শব্দবোধ জন্মায়। ব্যাপারটা দাড়াইল এই,—কোনো জড়বস্তুই নিছক জড় নহে। প্রত্যেক জড়ের মধ্যেই নিহিত চৈতন্যশক্তি আছে এবং তাহারই প্রভাবে জড়বস্তু চৈতন্যে প্রতিভাত হয় । জড়ে চৈতন্যশক্তি আছে বলিলাম তাহা অকুমান মাত্র । অকুমান হইলেও ইহা ন্যায়সঙ্গত অনুমান । বৈজ্ঞানিককে এইরূপ অনুমান বা থিওরী বা উহের আশ্রয় সৰ্ব্বদাই লইতে হয়। যে থিওরী বা উহ মানিলে প্রত্যক্ষ সকল ঘটনার সহজ ও সঙ্গত ব্যাখ্যা হয় তাহ। গ্রাহ। কোনো কোনো জড়বাদী বৈজ্ঞানিক হয়ত বলিবেন, জড়ে চিৎশক্তির অবস্থান অসম্ভব। চিৎশক্তি প্রাণী ভিন্ন অপর কোনো আশ্রয়ে থাকিতে পারে না। জড়ে চৈতন্যশক্তির আরোপ কষ্টকল্পনা । তাহা । দার্শনিকের একপ্রকার রহস্যবাদ (mysticism ) মাত্র। উত্তরে বলা যাইতে পারে, যখন পদার্থবিৎ বলেন যে, আমরা ঈথর-সমূদ্রে ডুবিয়া আছি এবং ঈথরের মধ্য দিয়াই গতায়াত করি অথচ এই ঈথর ইস্পাত অপেক্ষা চল্লিশগুণ ঘন, তখন তাহার কল্পনা অধিকতর অবিশ্বাস্ত বলিয়াই মনে হয়। পক্ষাস্তরে ভাবিয়া দেখিলে বুঝা যাইবে, জড়ে চিৎশক্তি থাকা এমন কিছু অসম্ভব বিষয়