পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سو8 (يا প্রবাসী-আষাঢ় ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড চেতনার ছেদ । সহচারবাদীর মতে, এই যোগস্থত্র দৈহিক হইতে পারে না ; তাহা মনেতেই অবস্থিত, অতএব চেতনার অভাবে মনের অস্তিত্ব লুপ্ত হয় নাই। মনের এক নিজ্ঞর্ণন অবস্থা আছে। যে মানসিক ব্যাপার স্মৃতি হইতে লুপ্ত হয় বা জ্ঞানগোচরে থাকে না তাহা এই নিজ্ঞান মনে আশ্রয় পায়, এবং সেখান হইতে পুনরায় স্মৃতিপথে আসিতে পারে। বুঝাইবার স্ববিধার জন্য আপাততঃ মনের এই দুই ভাগকে সংজ্ঞান ও নিজ্ঞান বলিব । যে-সকল মানসিক ঘটনা আমাদের চেতনায় বা জ্ঞানগোচরে ঘটিতেছে তাহা সংজ্ঞানে অবস্থিত বলিব । আর যাহা চেতনার বহির্ভূত, যাহার অস্তিত্ব আমরা জানি না অথচ যাহা মনে আছে বলিয়া অনুমান করা যায়, যেমন স্বযুপ্তির পূৰ্ব্বাপর ঘটনার যোগস্থত্র, তাহ নিজ্ঞানে অবস্থিত বলিব । মনকে নদীর স্রোতের সহিত তুলনা করিলে বলা যাইতে পারে নৌকা, তরঙ্গ ইত্যাদি দৃষ্টিগোচর পদার্থ যেমন জলের উপরেই দেখা যাইতেছে, সেইরূপ আমাদের চেতনার অন্তর্গত মানসিক ব্যাপারসমূহ উপরের মনেই ঘটিতেছে। মৎস্য প্রভৃতি জলজন্তু যেমন আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে জলের নীচে থাকে, সেইরূপ আমাদের মনের নীচের তলেও নানা মানসিক বৃত্তি আশ্রয় লাভ করে । অবশ্ব বাস্তবিক পক্ষে মনের উপর-নীচ বলিয়া কিছু নাই, কারণ মন সাধারণ জড়বস্তু নহে এবং তাহার কোনো আকার নাই এবং মন কোনো স্থানও অধিকার করে না। কেবল বর্ণনার স্থবিধার জন্যই উপরের মন, নীচের মন বলা যাইতে পারে। নিজ্ঞর্ণন মানিতে আপত্তি সাধারণের ধারণ, উপরের মন বা সংজ্ঞানই বুঝি সমস্ত মন। মনে যাহা কিছু ঘটে সমস্তই বুঝি আমরা জানিতে পারি। হঠাৎ কোনো বিষয় স্মৃতিপথে আসিলে পূৰ্ব্ব ঘটনার সহিত তাহার কি যোগ আছে, সাধারণে তাহ লইয়া মাথা ঘামান না। কাজেই একটা নিজ্ঞর্ণন মন আছে, এ কথা জানিবার তাহাদের দরকার নাই। দেহবাদী বৈজ্ঞানিকও বলিবেন, যে-সকল ব্যাপারের আমাদের প্রত্যক্ষ মানসিক অনুভূতি আছে তাহা লইয়াই মন । যাহা জানি না, চেতনার বাহিরে, তাহাকে মন বলা যায় না । চেতনাই মনের একমাত্র অপরিবর্তনীয় সত্তা বা গুণ । চেতনাহীন মন বা নিজ্ঞান মন আর সোনার পাথরবাটি একই কথা । স্মৃতির আশ্রয় মন নহে,—মস্তিষ্ক । গানের ছাপ যেমন গ্রামোফোনের রেকর্ডে থাকে, তেমনি মানসিক ঘটনার ছাপ মস্তিষ্কে থাকিয়া যায়। তাহাই স্মৃতির মূল । গ্রামোফোন-যন্ত্রে চড়াইলে যেমন রেকর্ডে গান বাহির হয়, মস্তিষ্কের রেকর্ডেও তেমনি উত্তেজিত হইলে লুপ্ত স্মৃতি জাগিয়া উঠে ; এক সংজ্ঞান মনই আছে,-—নিজ্ঞর্শন মন বলিয়া কিছু নাই । সহচারবাদী বলিবেন, মস্তিষ্কে চিন্তা উৎপন্ন হয় মানিতে যে বাধা, মস্তিষ্কে স্মৃতির আরোপেও সেই বাধা । মস্তিষ্কে স্মৃতির ছাপ নিজ্ঞর্ণন মনের সহচারী ঘটনামাত্র, তাহা স্মৃতির কারণ নহে। তাহা ছাড়া স্মৃতিকে মস্তিষ্কের ছাপ বলাও যা, গানকে রেকর্ডের দাগ বলাও তা । অমুক রেকর্ডে এই প্রকার উচ-নীচু দাগ আছে বলিলে লোকে কিছুই বুঝিবে না, কিন্তু যদি বলা যায় অমুক গান আছে, তবে সহজেই তাহ লোকের বোধগম্য হইবে । মস্তিষ্কের স্মৃতির ছাপ কেহ কথন দেখেন নাই, তাহ অম্লমান মাত্র ; অতএব ছাপ আছে বলা অপেক্ষ অমুক ঘটনার স্মৃতি নিজৰ্ণন মনে আছে বলা ভাল । মনের সমস্ত ব্যাপার কেবল চেতনায় নিবদ্ধ, বলিলে মনের সঙ্কীর্ণ সংজ্ঞা দেওয়া হয়। জড়জগতে প্রত্যক্ষ অনুভূত পদার্থ ব্যতীত যেমন অদৃষ্ট পদার্থের বাস্তবতা স্বীকার করা হয়, সেইরূপ মনোজগতেও প্রত্যক্ষ মন ছাড়া নিজ্ঞর্ণন মনের কল্পনা যুক্তিযুক্ত। যাহা নিজ্ঞানের প্রমাণ অন্য একদিক দিয়াও আমাদের নিজ্ঞান মন স্বীকার করিতে হয়। মানসিক রোগের নিদান আলোচনা করিলে দেখা যায় যে, নিজ্ঞর্ণন মন না মানিলে মানসিক লক্ষণের সঙ্গত ব্যাখ্যা করা যায় না। কোনো রোগিনী হয়ত তাহার পুত্রকে খুবই ভালবাসে কিন্তু তাহার মনে ক্রমাগত চিন্ত উঠিতেছে “ছেলেকে কাটিয়া ফেলিব।’ এই চিন্তু রোগিনী ইচ্ছা করি লেও