পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০ পল্প ধরা-গলায় মতিলাল জিজ্ঞাসা কোথায় ? কেমন আছে সে ? --নিৰ্ম্মল নিৰ্ম্মল চলে গিয়েছে—সে আজ পাচ-ছ বছরের কথা । মতিলাল আর কোনো প্রশ্ন করলে না। কিছুক্ষণ পরে আবার আমি জিজ্ঞাসা করলুম—বৌদি কোথায় ? মতিলাল বললে—এখানেই আছে, দেখৰে তাকে ? —নিশ্চয়, কোথায় কতদূরে, তোমার বাড়ী ? মতিলাল বললে—বাড়ী এখান থেকে অনেক দূরে, সেই বাগবাজারের গঙ্গার ধারে । আজ রাত্ৰি হ’য়ে গিয়েছে, কাল সন্ধ্যাবেলায় এসে তোমায় নিয়ে যাব। সেদিনকার মতন বিদায় নেওয়া গেল। পরদিন সন্ধ্যার সময় মতিলাল এসে বললে—চল । শহরের এক কোণে, বাগবাজারের গঙ্গার ধারে একখানা একতলা বাড়ী। পথটা অত্যন্ত সরু। দূরে দূরে গ্যাস জলছে। হেমন্তের শীতল আবহাওয়ায় উকুনের ধোয়াগুলো আটকা পড়ে পথের মধ্যে ভিড় ক’রে আছে। বিশ বছর আগে এমনি আর এক সন্ধ্যায় বেলেঘাটার সেই খোলার ঘরে হিমানীর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল । ঘরের মধ্যে আসবাবপত্র কিছুই নেই বললেই হয়। এক কোণে একটি ছোট বিছানা পাতা । সেখানে গলা অবধি চাদর ঢাকা দিয়ে কে শুয়ে রয়েছে। ঘরে ঢুকে মতিলাল বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললে—ওগো, চেয়ে দেখ, কে এসেছে ! বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখি সেখানে হিমানী শুয়ে রয়েছে । তপ্তকাঞ্চনের মত রং তার একেবারে কালিবর্ণ,পরিপূর্ণ নিটোল অঙ্গ একেবারে কঙ্কালে পরিণত । তার সেই মূৰ্ত্তি দেখে আমি একেবারে শিউরে উঠলুম। একবার সন্দেহও হ’ল—নিশ্চয় এ অন্ত আর কেউ। হিমানী চোখ দুটো তুলে আমার দিকে চাইলে । তারপরে আস্তে-আস্তে বললে—ঠাকুরপো ! তোমাকে যে আর চেনা যায় না। সেদিন অনেক রাত্রে মতিলালের কাছ থেকে বিদায়ু নিয়ে বাড়ী ফিরলুম। হিমানীর যক্ষ্মা হয়েছে, সে আর বাচবে-না। মতিলাল বললে যে, তারও মুখ দিয়ে করলে—ল্পিৰ্ম্মল প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ ASA SSASAAA AAAAMAMMMMAMMAMMMMMM MMMMMMMM MAMMAeMAMMA AMMA AMMMMAMMMAMMSAMASAMMMAAA AAASAAAA [ ৩০শ ভাগ, »ས་ 한한 خمسين ميميه বার-কয়েক রক্ত উঠেছিল--হিমানী যে তার আগেই যাচ্ছে এইটেই তার মস্ত সাত্বনা। পরদিন থেকে নিয়ম ক’রে তাদের ওখানে যেতে আরম্ভ করলুম। সকালবেলা আমি যাবার পর মতিলাল বেরোয় খবরের কাগজে চাকরী করতে। বেলা বারোটার সময় সে কাজ সেরে ফিরলে পর আমি বাড়ীতে ফিরি। বিকেলে আমি গেলে সে ছেলে পড়াতে যায়, সন্ধ্যার পর ফেরে। রাত্রি দশটা এগারোটা অবধি সেখানে থেকে আমি বাড়ী ফিরি। হিমানীকে চিকিৎসা করছিল এক কবিরাজ । ডাক্তার দেথাতে বিস্তর পয়সা খরচ । খবরের কাগজের আপিস থেকে মাসে-মাসে মাইনে পাওয়া যায় না। ছেলে পড়িয়ে যা ত্রিশ টাকা পাওয়া যায় তাই তখন তাদের সম্বল। এই দুঃসময়ে মতিলাল আমার কাছে সাহায্য চাইলে, কিন্তু আমারও তখন দেবার কিছুই নেই। একদিন মতিলালকে আমরা সাহায্য করতে চেয়েছিলুম, সে তা নেয়-নি। আজ সে সাহায্য চায়, কিন্তু তাকে দেবার কিছুই নেই। নিৰ্ম্মল ইহলোকে নেই, আমি আছি, কিন্তু সোনার বোতাম ও আংটি আর নেই। মাসখানেক এইভাবে কেটে গেল। হিমানী বেশ জানতো সে ধীরে-ধীরে মৃত্যুর মুখে এগিয়ে চলেছে। একদিন সন্ধ্যাবেলায় মতিলাল তখনও বাড়ী ফেরেনি। সমস্ত দিন টিপিটিপি বৃষ্টি পড়ায় শীতটা বেশ জোরে পড়েছে। হিমানী ইদানীং আর নিজে নড়তেচড়তে পাবৃত না, তাকে পাশ ফিরিয়ে দিতে হয়। একখানা শততালি-দেওয়া লেপ তার অঙ্গে ঢাকা দিয়ে ধারগুলো মুড়ে দিচ্ছিলুম এমন সময় ধীরে-ধীরে সে বললে—ঠাকুরপো, তোমার হাতে এই সেবাটুকু পাব বলেই বোধ হয় এতদিন বেঁচেছিলুম— । আমার ওপরে আর রাগ নেই তো ভাই ? আমি বললুম—রাগ তোমার ওপর কোনো দিনই ছিল না, বৌদি। আর কোনো কথা বলতে পারলুম না। হিমানী আরও কিছু শোনবার জন্ত উৎসুক হ’য়ে আমার মুখের দিকে