পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা মানুষের মন ~58> তাড়াইতে পারে না। বলা বাহুল্য, এইরূপ চিন্তা রোগিনীর স্বভাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। রোগিনী অনেক সময় বলে কে যেন জোর করিয়া তাহার মনে এই চিন্তা ঠেলিয়া দিতেছে । হিষ্টিরিয়া রোগী ফিটের সময় হয়ত এমন আচরণ করে যাহার জন্য পরে সে অত্যন্ত লজ্জিত হয় । এক প্রকার মানসিক ব্যাধি আছে যাহাতে রোগীর মনে হয় কে যেন তাহার কানে কানে কথা বলিতেছে ও তাহাকে নানারূপ অবৈধ কাৰ্য্য করিতে প্ররোচিত করিতেছে। রোগী সহস্ৰ চেষ্টা করিয়াও তাহার কথা শোনা বন্ধ করিতে পারে না । সাধারণে অনেক সময়ে এই সকল রোগীকে ভূতাবিষ্ট বলিয়া মনে করে । কারণ রোগীর ব্যবহারে মনে হয় তাহার নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট হইয়াছে এবং সম্পূর্ণ বিভিন্ন প্রকৃতির এক আত্মার বশে সে চলিতেছে। ভূত মানিলে এই সকল রোগীর ব্যবহারের একটা সঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ভূত রোগীর স্বন্ধে অধিষ্ঠান করিয়া তাহার শরীর মন দখল করিয়াছে ও তাহাকে ইচ্ছামত চালাইতেছে, কাজেই রোগী তাহার স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ করিতেছে বা ভূতের কথা শুনিতে পাইতেছে। নিজ্ঞর্ণন মন মানিলে এই সকল লক্ষণের ব্যাখ্যা করিবার জন্য ভূত ডাকিতে হয় না। নিজ্ঞানবিং বলেন, মানুষের স্বভাবে নানা প্রকারের বিরুদ্ধ বৃত্তির সমাবেশ দেখা যায়। মানুষ যে অবস্থায় পড়ে, সেই অবস্থাচুযায়ী মানসিক বৃত্তি প্রকাশ পায়। ছোটছেলে চোরের মধ্যে প্রতিপালিত হইলে চোর হইয়া দাড়ায় । সামাজিকহিসাবে মানসিক প্রবৃত্তিগুলিকে ভাল ও মন্দ—এই দুই ভাগে ফেলা যায়। যাহার মধ্যে ভাল প্রবৃত্তি অধিক, সে ভাল লোক ; যাহার মন্দ প্রবৃত্তি অধিক, সে মন্দ লোক । অবস্থাবিশেষে পড়িয়াই মাতুষ অধিকাংশ সময়ে ভাল মন্দ হয়। ভাল লোকের মন্দ প্রবৃত্তি একেবারে নাই তাহ বলা চলে না । সাধারণতঃ আমাদের মন্দ প্রবৃত্তিগুলি সামাজিক আবেষ্টনের গুণে নিজ্ঞর্ণন মনে নিৰ্ব্বাসিত হয় ও আমরা তাহাদের অস্তিত্ব স্বীকার করিতে চাই না । মাঝে মাঝে নানা কারণে এই সকল মন্দ প্রবৃত্তি নিজ্ঞর্ণন হইতে সংজ্ঞানে আসিবার চেষ্টা করে। কখনো মন্দ প্রবৃত্তিগুলি স্বরূপে আসিয়াই চেতনায় দেখা দেয়। কখনও বা তাহারা ছদ্মবেশে সংজ্ঞানে আসে । নিজ্ঞর্ণনে অবস্থিত নিরুদ্ধ প্রবৃত্তিই মানসিক রোগের মূল। এইজন্যই মানসিক রোগের লক্ষণ রোগীর স্বভাববিরুদ্ধ মনে হয় এবং সম্পূর্ণ পৃথক স্বভাবের এক মন রোগীর দেহ আশ্রয় করিয়াছে, এইরূপ অনুমান হয়। মানসিক লক্ষণগুলি নিজ্ঞান হইতে উঠে বলিয়াই তাহ যুক্তিতর্কের দ্বারা নিবারিত হয় না । যুক্তিতর্কের ফলে কেবল সংজ্ঞানের মনোভাবের পরিবর্তন সম্ভব ; নিজ্ঞর্ণন মনে তাহাদের প্রভাব প্রবেশ করিতে পারে না। বিশেষ প্রক্রিয়ার দ্বারা চিকিৎসা করিলে নিজ্ঞর্গনস্থিত মনোভাব সংজ্ঞানে আসিয়া উপস্থিত হয় ও তখন তাহা যুক্তিতর্কের দ্বারা প্রশমিত হয়। নিজ্ঞানের বৃত্তি চেতনায় আসিলে রোগী অনেক সময়ে ভয়ে ঘৃণায় লজ্জায় অভিভূত হয়, কারণ তখন সে স্পষ্ট বুঝিতে পারে যে, এই অসামাজিক বৃত্তি তাহার নিজের মনেরই এক ংশ। এই সকল প্রমাণ হইতে নিজৰ্ণন মনের অস্তিত্ব সিদ্ধ হইয়াছে । কস্তবিক অপ-মনোবিদ্যার (abnormal psychology ) আতুশীলনে প্রথমে নিজ্ঞান মনের প্রভাব ধরা পড়ে। অপ-মনোবিদই নিজ্ঞর্ণনের স্বরূপ নির্ণয় করেন। নিজ্ঞর্ণনে অবস্থিত বৃত্তিগুলি যে নিশ্চল নহে ইহাও তাহার আবিষ্কার । এই সকল বৃত্তি সৰ্ব্বদাই আমাদের চেতনায় আসিবার চেষ্টা করিতেছে, কিন্তু সংজ্ঞানের বিরোধী প্রবৃত্তিগুলি তাহাদিগকে বাধা দিতেছে। এই সংঘর্ষের ফলে মনের রোগের উৎপত্তি । নিজ্ঞর্ণন মনের আরও প্রমাণ আছে। হিপনটিজম বা সংবেশনের কথা অনেকে শুনিয়াছেন । কোনো ব্যক্তিকে সংবেশিত করিয়া যদি সংবেশক তাহাকে বলেন যে তুমি ১০,০০০ মিনিট পরে অথবা অমুক তারিখে অমুক সময়ে মাথার উপর তিমবার হাত তুলিবে, তবে দেখা যায় যে, নিদিষ্ট সময় গত হইলে ঐ ব্যক্তি আদেশমত কাজ করে। আশ্চৰ্য্য এই যে, সংবেশিত অবস্থা হইতে উঠিবার পর সংবেশকের আদেশের কথা তাহার কিছুই মনে থাকে না এবং সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যক্তির মতই ব্যবহার করে। এক