পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ക്ഷബ —যেতে পারলে সুখী হ’তাম। কিন্তু তার দরকার নেই। — কেন ! —তুমিই বল । বনলতা কিছুই বলতে পারলে না । হয়ত, সত্যই আমাদের দেখা হ’বার কোন দরকার ছিল না । কিই-বা থাকতে পারে । পায়ের তলা থেকে ছানাটিকে তুলে নিয়ে ও ফিরে চললে । বনলতাও অভিমান করতে পারে তা’ কে জানত! খানিক পরে ধৰ্ম্মশালায় - কেউ জেগে নেই, কিন্তু ঘুম এলো না চোখে —পুরাণে কথাগুলি বড় বেশী করে মনে পড়চে । গোপাল বোসের লেনে ছোট একটি দোতল বাড়ী। আমরা নীচে, বনলতার উপরে । “আমরা’ বলতে আমি আর মা ; বনলতারাও দু’জন,— স্বামী-স্ত্রী। বনলতার স্বামী মাকে দিদি বলতেন, সেই সূত্রে বনলতা আমার মামী। ওর স্বামী হাবুমামাকে আমার অনেক দিন মনে থাকবে । বিয়ের বয়স যখন পার হয়ে গেছে, তখন বনলতাকে তিনি বিবাহ করেছিলেন ; কেন করেছিলেন তা আজও ঠিক বুঝতে পারি না। রাত্রে বাড়ীর সঙ্গে র্তার সম্বন্ধ থাকতে কচিং, বনলতার নিঃসঙ্গত। দূর করতে হ’ত মাকে। কি করতেন ঠিক জানি না, বোধ হয় রেশ খেলতেন এবং আরও অপ্রকািশু একটা কিছু করতেন। যাই হ’ক, সে বয়সে ও-বিষয়ে মাথা ঘামাবার কথা আমার নয় । একাদশীর দিন রাত্রে মা উপবাসে অবসর হয়ে পড়তেন ; সেদিন—আমার খাবার তৈরী ও পরিবেশনের ভার নিত এই বনলতা। প্রদীপের আলোয়— আমার সামনে বসে বনলতা ছেলেমানুষের মত গল্প করে যে ত ! তার অদ্ভূত ও অকারণ অনেক প্রশ্ন আজ ও আমি মনে করতে পারি। —আচ্ছ, বিয়ে হ’লে মেয়েমানুষের ইস্কুল যাওয়া চলে না বুঝি ? - পুনশ্চ woGo —আচ্ছা, তুমি আরও বড় হ’লে না কেন ? তা' হ’লে এদিন তোমার বিয়ে হ’ত, তোমার বউটর সঙ্গে বসে বসে এতক্ষণ গল্প কবুতাম —আমাদের গায়ের রাধারাণীর বিয়ে হয়েচে এই কলকাতায় । শুনেচি ওর বর খুব বড়লোক, একটি ছেলেও হয়েচে । কতদিন তাকে দেখিনি। ভারি দুষ্ট ছিল ও ! তার খোজ নিয়ে আসবে ? কিন্তু ঠিকানা জানি না । —আচ্ছা, তুমি কটা পাশ দিয়েচ ? মোটে একটা ! আমাদের সেখানকার বিশু-দা তিনটে পাশ দিয়েচে । তুমি দাওনি কেন ? কিন্তু সে তোমার মত সুন্দর নয় । সেদিন মানুষের গহন মনোলোকের কোন কথাই জানা ছিল না ; কিন্তু আজ সেগুলো জোড়াতাড়া দিয়ে একটা স্থলভ এবং লোভনীয় কাহিনী খাড়া করে তোলা হয়ত বিশেষ কষ্টসাধ্য নয়, তবে সে প্রবৃত্তি নেই। বনলত বোধ করি আমার সমবয়সী, অন্তত আমাদের বয়সের ব্যবধানটা খুব বেশী নয় । মনে হয়, এইজন্তেই বনলতা আর আমার মধ্যে এমন একটি অস্পষ্ট রহস্যময় সম্বন্ধ গড়ে উঠেছিল, যা প্রচলিত কতকগুলি শবদ দিয়ে ব্যাখ্যা করবার উপায় নেই । মায়ের কোলে শুয়ে আষাঢ়ের অন্ধকার রাত্রে শিশু যেমন চোখ বুজে রাজকন্যার রূপ-কথা শোনে, তাকে বুঝতে পারে না, অথচ দেখতে পায়, অল্পভব করে- আমিও তেমনি বনলতাকে না বুঝেই মনে করতাম, ওকে আমি জানি ও আমার একান্ত নিকট। কতদিন মনে হ’ত, হাবু যদি মাকে দিদি না বলতেন, তা হ’লে এই বনলতাকে আমি দিদি বলে ডাক্তুম। ‘মামী’র মধ্যে সম্পর্ক আছে বৈ কি, কিন্তু দূরত্ব আছে আরও বেশী ! এমনি পুরো পাচ বৎসর। তারপর হঠাৎ একদিন ওর স্বামী গেল মারা । মা বললেন,—ও-সব লোক এমনিই হঠাৎ মারা যায় রে, দুঃখু করে লাভ নেই। ভারি আশ্চৰ্য্য হয়েছিলাম। অতবড় একটা মানুষ,