পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পণ্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন ( সরকারী কাগজপত্রের সাহায্যে লিখিত ) শ্ৰীব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় পলাশী-যুদ্ধের পর প্রথম কয়েক বৎসর বঙ্গদেশে বৃটিশদের শুধু অধিকার-বিস্তারের যুগ। বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজের মন হইতে বিদেশী শত্র কর্তৃক বঙ্গবিহার আক্রমণের শেষ আশঙ্কাটুকু বিদূরিত হইবার পর ক্লাইভের দ্বিতীয় শাসনকালে ও ওয়ারেন হেষ্টিংসের আমলে দেশকে সুশাসন ও শাস্তির বন্ধনে নিয়ম্বিত করিবার আয়োজন মুরু হইল। কর্ণওয়ালিস যখন আসিলেন, তখন ইংরেজ-শাসিত ভারতবর্ষে শাসন-সংস্কারের যুগ উপস্থিত হইয়াছে। এই সময়কার যে-সব রাজকৰ্ম্মচারীর চেষ্টায় ভারতে ইংরেজ-শাসনের ভিত্তি স্থায়ী ও দৃঢ় হয়, র্তাহীদের মধ্যে স্তর উইলিয়াম জোন্স একজন প্রধান । সে-সময় সমস্ত ফৌজদারী মামলার বিচার মুসলমানআইন-মতে, এবং দেওয়ানী মামলার বিচার হিন্দুদিগের জন্য হিন্দুমতে এবং মুসলমানদিগের জন্য মুসলমান আইনমতে সম্পন্ন হইত। বাদশ আওরংজীবের আমলে সঙ্কলিত আইন-সারসংগ্রহ—‘ফতাওয়া-ই-আলমগীরি’র সাহায্যে মুসলমানদের দেওয়ানী মামলার বিচার হইত। কিন্তু হিন্দুদিগের এই ধরণের কোনো লিখিত ব্যবস্থাপুস্তক ছিল না। বিচার-বিভ্রাট উপস্থিত হইলে সাধারণতঃ ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত আনাইয় তাহার মীমাংস করান হইত। হিন্দুদের প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থাদি হইতে কার্য্যোপযোগী একখানি ব্যবস্থা-পুস্তক সঙ্কলিত করাইবার প্রথম আয়োজন করেন—ওয়ারেন হেষ্টিংস । বাংলার এগারজন পণ্ডিতের* উপর তিনি (মে ১৭৭৩) এই কার্য্যের ভার দেন। তাহারা দুই বৎসরে গ্রন্থ-রচনা সম্পূর্ণ করেন ।

  • রামগোপাল স্বায়লঙ্কার, বীরেশ্বর পঞ্চানন, কৃষ্ণজীবন স্বায়লঙ্কার, বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার, কৃপারাম তর্কসিন্ধান্ত, কৃষ্ণচন্দ্র সাৰ্ব্বভৌম, গৌরীকান্ত তর্কসিদ্ধাস্ত, কৃষ্ণকেশব তর্কালঙ্কার, সীতারাম ভট্ট, কালীশঙ্কর বিদ্যাবাগীশ, খ্যামসুন্দর স্তায়সিদ্ধান্ত ।

কিন্তু সে-সময় খুব কম ইংরেওই সংস্কৃত ভাসা জানিৱেম, কাজেই গ্ৰন্থখানিকে ইংরেজ-বিচারকদিগের কাজের সুবিধার জন্য দোভাষীর সাহায্যে ফাসাঁতে তৰ্জম করান হয়। তাহার পর কোম্পানীর কৰ্ম্মচারী ম্যাথানিয়েল ব্রাসি হলহেড গ্ৰন্থখানি ফাসী হইতে ইংরেজীতে অতুবাদ করেন (মার্চ ১৭৭৫) । ইহাই পর বংসর (১৭৭৬) বিলাতে A Code of Gentoo Laws RTG frɛ «H দুঃখের বিষয়, দুই দুইবার ভাষান্তরিত হইবার ফলে গ্ৰন্থখানি মূল সংস্কৃত হইতে কিছু পৃথক হইয় পড়িয়াছিল। এইজন্য একখানি বিশুদ্ধ ও প্রামাণিক হিন্দু ব্যবস্থা-পুস্তকের অভাব রহিয়া গেল। সে-অভাব পূরণের জন্য অগ্রণী হইলেন—স্তার উইলিয়াম জোন্স । কলিকাতা সুপ্রীম কোর্টের জজ স্তর উইলিয়াম জোন্স বঙ্গদেশে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাত । সুধীজন সমাজে তিনিই প্রাচ্যবিদ্যা অমুশীলনের প্রথম পথপ্রদর্শক বলিয়া বিখ্যাত । সংস্কৃত ও আরবী ভাষায় প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য এবং আইনশাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের ফলে সাহেবদের মধ্যে একমাত্র জোন্সই এই দুরূহ কার্য্যের সম্পূর্ণ উপযুক্ত ছিলেন। তিনি এই কাৰ্য্যভার গ্রহণ করিয়া ১৭৮৮ সালের ১৯এ মার্চ গভর্ণর-জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিসকে একখানি দীর্ঘ পত্র লেখেন। পত্ৰখানিতে আছে,— “হিন্দু ও মুসলমানদের বিধিব্যবস্থাসমূহ প্রধানত: ংস্কৃত ও আরবী— এই দুই কঠিন ভাষার নিগড়ে আবদ্ধ। খুব কম ইউরোপীয়ই এই ভাষা শিখিবে, কারণ ইহা দ্বারা তাহাদের পার্থিব কোন লাভ হইবে না। অথচ বিচার-সম্পর্বে যদি আমরা কেবল দেশীয় ব্যবহারজীব ও পণ্ডিতগণের মুখাপেক্ষী হইয়া থাকি, তাহা হইলে তাহাদের দ্বারা যে প্রবঞ্চিত হইতে থাকিব না, সেবিষয়ে নিশ্চিতরূপে কিছু বলা ষায় না ।