পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বৰ্গীয় অক্ষয়কুমার মৈত্ৰেয় মহাশয়ের কয়েকখানি পত্র শ্ৰীঅৰ্দ্ধেন্দ্রকুমার গঙ্গোপাধ্যায় রাজা রাজেন্দ্র “লালা’ মিত্রের পর yঅক্ষয়কুমার মৈত্রেয়ের তুল্য ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক বঙ্গদেশে বিরল, একথা অতু্যক্তি নহে। যুরোপীয় বিজ্ঞান-সন্মত পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া সংস্কার-বৰ্জ্জিত বুদ্ধিতে ইতিহাস আলোচনা মৈত্রেয় মহাশয় বঙ্গদেশে প্রথম প্রবর্তন করিয়াছিলেন। মাটি খুড়িয়া পাথুরে প্রমাণের বলে ইতিহাসের নূতন উপাদান সংগ্রহে মৈত্রেয় মহাশয় পথ-প্রদর্শন করিয়া দিয়াছেন । গৌড় ও মগধ-শিল্পের আলোচনার সুত্রে প্রতিমা-তত্ত্বের নান নুতন সত্যের আবিষ্কারের মূলসুত্র গুলি, তিনিই প্রথম নিদ্দেশ করিয়া ধান । বঙ্গদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক ও মান ধৰ্ম্ম-প্রভাবের ইতিহাস মৈত্ৰেয় মহাশয় নানা দিক দিয়া পরিদর্শন করিয়াছিলেন, এবং ধৈর্য্য ও পাণ্ডিত্যের সহিত তাহার মূল উপকরণাদির তত্ত্ব-সংগ্রহে জীবন উৎসর্গ করিয়াছিলেন । ইতিহাস ছাড়া আর একটি সংস্কৃতির উপর তাহার গভীর প্রণয় ও আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটি গৌড়-শিল্পের উৎপত্তি ও ইতিহাস । এই সূত্রে তাহার সহিত পত্র ব্যবহার করিবার সৌভাগ্য আমার ঘটিয়াছিল। এই পত্রাবলীতে র্তাহার গভীর গবেষণ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, পাণ্ডিত্যের আদর্শ, ও গৌড়শিল্পের উপর অনুরাগের কিছু কিছু পরিচয় পাওয় যাইবে । অঙ্গ বঙ্গদেশে একাধিক পণ্ডিত ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব লইয়া নানা গবেষণা ও আলোচনা করিতেছেন, ভরসা করি তাহারা মৈত্রেয় মহাশয়ের উদাহরণ নূতন গৌরবে উজ্জল করিবেন। তাহার পত্রে তাহার জ্ঞানের যে দিকটি ফুটিয়া উঠিয়াছে, আশা করি তাহার পরিচয়ে আমাদের নূতন ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতেরা নূতন প্রেরণা ও শক্তি পাইবেন । এই ভরসাতেই পত্রগুলি প্রকাশিত হইল। এক শ্রেণীর শিল্পী আছেন যাহাদের assis of so fson (finished paintings) obi প্রকাশ পায় না, যতটা ফুটয় উঠে তাহাদের রেখা পরিকল্পনায় (drawings) ; তেমনই এক শ্রেণীয় লেখক আছেন, র্যাহাঁদের ব্যক্তি হু ও মনের ভঙ্গীটি প্রবন্ধপুস্তকাদিতে ততটা প্রকাশ পায় না, যতটা আত্মপ্রকাশ করে তাহাদের পত্রাবলীতে । এই হিসাবে অনেক লেখকের পত্রাবলী কতকট আত্মজীবন-চরিত। “সিরাজ-উদ্দৌলা”র লেখকের মানসিকতার একট। নূতন দিক তাহার পত্রাবলীতে প্রকাশ পাইয়াছে, যাহ। তাহার প্রকাশিত পুস্তক-প্রবন্ধাদিতে খুজিয়া পাওয়া যায় না । এই হিসাবেও মৈত্রেয় মহাশয়ের এই পত্রগুচ্ছের একটি নূতন মূল্য আছে। গৌড়-শিল্পের উৎপত্তি ও দ্বীপ-পুঞ্জের শিল্প-কলার সহিত মৈত্রেয় মহাশয় যে সম্বন্ধ পারকল্পনা করিয়াছিলেন, তাহা আংশিকভাবে সত্য প্রমাণিত হইয়াছে। সম্ভবতঃ, বঙ্গদেশে নুতন প্রমাণের আবিষ্কারে তাহার পরিকল্পনার অপরাপর অংশ ভবিষ্যতে সুপ্রমাণিত হইবে । মৈত্রেয় মহাশয়ের সহিত যখন আমার প্রথম পরিচয় হয়, তখন আমি ভট্টকর্ণের ছাত্রী শ্ৰীমতী মাটিন টয়নট নাম্নী একজন উচ-মহিলার সাহায্যে যবদ্বীপের প্রত্নতত্ত্ব-বিভাগের ডচ-ভাষায় লিখিত নানা রিপোর্ট ও monograph অনুশীলন করিতে আরম্ভ করিয়াছি । মূবদ্বীপের শিল্পতত্ত্বের উপাদানগুলি তখনও সম্পূর্ণ আয়ত্ত করিতে পারি নাই । আমার অল্পবিদ্যার শূন্য-গৰ্ব্ব লইয়। মৈত্রেয় মহাশয়ের theory সবেগে আক্রমণ করিয়াছিলাম। মনীষী পণ্ডিত আমার বক্তব্য ধৈৰ্য্য, সৌজন্য ও সহৃদয়তার সহিত আলোচনা করিয়া অামাকে সন্মানিত করিয়াছিলেন , এই পত্রব্যবহারের ফলে যবদ্বীপের শিল্পের উৎপত্তি সম্বন্ধে নানা নূতন পথ আমার চক্ষের সম্মুখে তিনি খুলিয়া দিয়াছিলেন । এজন্য আমি তাহার নিকট কৃতজ্ঞ । বঙ্গের একজন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ও ঐতিহাসিকের স্মৃতিরক্ষার যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিশ্চয় হইবে, ভরসা করা যায়