পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কামিখ্যের ঠাকুর শ্রীঅরবিন্দ দত্ত নারীহরণের মামলায় কেবলরাম দু’দু’বার কাঠগড়ায় উঠে সত্যপাঠ করেছে, আবার পরক্ষণেই অসত্য ব’লে সত্যকে রম্ভাও দেখিয়েছে। তৃতীয়বারে কিন্তু সে বেতের শীষের ঘন কাটায় জড়িয়ে গেল। দীর্ঘ চারিট বছর আলিপুরের ঘানিগাছে চক্র ফিরে শেষের দিনে জেলদারোগার বাসায় দু’টি খেয়ে দেয়ে যখন বিদায় নিলে, তখন রাত্রি বেশ জমে উঠেছে। রাজপথ জনশূন্ত । দু’ধারের গ্যাসের আলো তরল স্বচ্ছ জ্যোৎস্নার সঙ্গে মিশে এক হয়ে গেছে। পোষ্টের ছায়ার আড়ালে পাহারাওয়ালা দাড়িয়ে । লাল চোখ দুটি ঘুমের তরে ক্ষুধাৰ্ত্ত। হেঁট মাথায় ঝিমুচ্ছে। রাস্তাটা মাজাঘষ পিচ-ঢালা ৷ ছাড়া পেয়ে কেবলরাম এক নূতন জগতে ফিরে এল। ঘাড় আর সোজ৷ নেই, কৌতুহলে একে বেঁকে ঘুরে ফিরে চলেছে। এক টুক্‌রা ভাঙা পাথরে সে হোচট খেলে। বুকে পড়ে দেখলে—পায়ের আঙুল একটা ছিড়েছে। যা-হাড়গোড়গুলো ঠিকই আছে। সে চলতে লাগল। একে মনসা তায় ধুনোর গন্ধ। তার এই খুড়িয়ে চল। আর উস্কযুস্ক চেহার দেখে গ্যাসপোষ্টের আড়াল থেকে এক গালপাটাওয়ালা আলোকের দিকে হেলে মাথার লাল পাগড়ীট। সুদৰ্শন চক্রের মত বিস্তৃত করে ধরলে। গুরু গম্ভীরস্বরে জিজ্ঞাস করলে, “কোন হায় ?” “সাধু হায়।” “দিনক সাধু—ন, রাতক ?" কেবলরাম এই পাগড়ীর বিভীষিকার মাঝখানে বাস করছিল। কাজেই মনে কিছু সাহস জমা ছিল। কাছে এসে বললে, “কেন মহারাজ, পাঙ্কা চারটা বছর তোমাদেরই সঙ্গে ত সাধুসঙ্গ কিয় । দেখিয়ে মহারাজ, চুল, দাড়ি, নওখর দেখিয়ে—” সে ঝাকড়ী-মাকড় চুলগুলোর একবার ঝাড়া দিলে । পাহারাওয়াল তখন চূণ-দোক্তা বের করে হাতের তালুতে টিপতে স্বরু করেছিল। সেটায় দু’তিনটা থাবা মেরে ঝেড়ে ঠোঁটের ফঁাকে ফেলে জমিয়ে রাখলে। জিজ্ঞাস করলে, “কাহা সাধুসঙ্গ কিয় ?” “আজ্ঞে শ্বশুরবাড়ী বললে পেত্যয় অধিক হ’ত— দেহের যে কান্তি খুলেছে। কিন্তু ঘোড়ামার্ক মদ আমি খাইনে। যদি দিব্যি করতে বল, চলিয়ে ওই কালীবাড়ীমে।” r পাহারাওয়াল চোখ রাঙিয়ে বললে, “কাহা থে, ঠিক কহিয়ে।” কেবলরাম হাতজোড় করে বললে, “আজ্ঞে, ওই যে লাল রঙের পাচিলটা আকাশে গিয়ে ঠেকেছে, ঐটেয় । কি আদর-যত্বের ঘট । লাউ-কুমড়োর ডাটা কভি খায়৷ হ্যায় ?” "কেন, কোবি, বিট, গাজর এসব নেহি খায়া ?” “ও সব খেলে যে পাজর বাড়ে ! ময়রায় বুঝি সন্দেশ খায় ? হামার হাতকা তৈরী হায়, মহারাজ ।” পাহারাওয়াল দাড়িটায় অঙ্গুলি চালনা ক’রে জিজ্ঞাস। করলে, “আজ তুমার ছুটি মিলা ?” “আজ্ঞে, হা। মামাটি ডেকে বললে,—যা, তোর শিংয়ের দড়ি খোলা পড়ল । জলে, স্থলে, মরুং ব্যোমে যথেচ্ছ চরে বেড়া গে। শুধু পরক পাচিল মাথ ডাকে।” পাহারাওয়াল জিজ্ঞাসা করলে, র্কেও হে?” “আজ্ঞে অনেককাল পরে গ্যাসের আলোট চোখে লেগে সইছে না। পাথরে লেগে আঙুলটা ছিড়ে গেল, এই দেখ । খোড়াই কি সাধে, মহারাজ ?” পাহারাওয়াল তার হাত চেপে ধরূলে । “তুম্ বড়ে বেকুব, আউর বদমাস হে৷ ” কেবল বললে, “এট। কিন্তু তোমাদের ছাইগোষ্ঠীর “নেংড়াতে বললে,