পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরুভূমিতে সোনা ফলন আচাৰ্য্য শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র রায় আজ আমার শরীর খুবই অসুস্থ ; বন্ধুৰান্ধবদের ও আমার প্রিয়তম ছাত্রদের নিষেধসত্ত্বেও ফরিদপুর কৃষিক্ষেত্রের ডাকে আমি সাড়া না দিয়া থাকিতে পারিলাম না। এখানকার কৃষিক্ষেত্রের সুযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক শ্ৰীমান দেবেন্দ্রনাথ মিত্র যেরূপ অসাধারণ পরিশ্রম ও অদম্য উৎসাহ সহকারে কৃষির উন্নতির জন্য চেষ্টা করিতেছেন তাহা যে কেবল প্রশংসার বিষয় তাহা নহে, আমাদের সকলেরই অনুকরণীয়। ইনি অন্যান্য সরকারী কৰ্ম্মচারীদের মত মাসের পহেলা তারিখে মাহিনীর বিল সহি করাটাই প্রধান কৰ্ত্তব্য বলিয়া মনে করেন না। চাষীদের সহিত অবাধে ও সমানভাবে মেলামেশা করিয়া তাহাদের মধ্যে উন্নত প্রণালীর চাষবাসের প্রচলনের জন্য অক্লাস্তভাবে পরিশ্রম করিতেছেন। কৃষকেরাও ইহাকে সরকারী কৰ্ম্মচারী-হিসাবে দেখে না ; তাহাদেরই একজন আপনার লোক বলিয়া মনে করে । বৎসরে বৎসরে এই কৃষিপ্রদর্শনীর জন্য তিনি যে কিরূপ পরিশ্রম করেন তাহা আপনার সকলেই জানেন। ভগবান তাহাকে দীর্ঘজীবী করিয়া এরূপভাবে দেশের ও দশের কাজে নিয়োজিত রাখুন ইহাই আমার আস্তরিক প্রার্থনা। ফরিদপুর জেলার ধনদৌলং ও শ্রমশিল্প সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের হিসাবনিকাশ খুঁটিনাটি করিয়া অনুসন্ধান করিবার জন্য আমি গত বৎসর হইতে শিক্ষার্থীহিসাবে এই কৃষিক্ষেত্রে আসিতেছি ; এইবার লইয়৷ আমার ডিনবার আসা হইল। এই জেলায় কি কি ফসল কত পরিমাণ জমিতে হয়, প্রত্যেক ফসলের গড়পড়ত। ফলন ও উহার মূল্য-হিসাবে কৃষকের কত টাকা পায়—এই সকল তথ্য সঠিকভাবে সংগ্ৰহ করিতেছি। আজ আমার বেশী কথা বলিবার শক্তি নাই ; তাই আজ আপনাদিগকে দু’চার কথায় দু'এক জায়গায় কি প্রণালীতে কৃষির উন্নতি इंश्ख्रु তাহাই বলিব। জমির উৎপাদিকা শক্তি বাড়াইবার জন্য সারের প্রয়োজন। আমাদের দেশের কৃষকগণ এ কথা জানিয়াও সার-প্রয়োগের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দেয় না; গোবর ত এখন সাররূপে ব্যবহৃত হয় না বলিলেও চলে-জালানিরূপেই আজকাল ইহার ব্যবহার হইয়া থাকে। জমির উৎপাদিকা শক্তি বাড়াইবার জন্য সারের যে বিশেষ প্রয়োজন ইহা তিন হাজার বৎসর ধরিয়া চীনদেশের কৃষকগণ অবগত আছে, তাহার কেবলমাত্র অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞানের দ্বার চাষবাসের কাজ করিয়া থাকে। ইহা খুবই আশ্চর্য্যের কথা যে, ইংলণ্ডে নানাবিধ বৈজ্ঞানিক প্রণালী অমুসরণ করিয়া এবং নানাপ্রকার রাসায়নিক সার প্রয়োগের দ্বারাও সেখানকার কৃষকগণ চীনের কৃষকদের অপেক্ষ অধিক ফসল জন্মাইতে পারে না। চীন একটি জনবহুল দেশ ; কিন্তু সেখানে একই জমি তিন চার হাজার বৎসরের উপর চাষ করিয়া চীনের অধিবাসীরা নিজেদের খাদ্য পৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন করিতেছে। চীনদেশের জমি হইতে কি প্রণালীতে এত প্রচুর পরিমাণে শস্ত জন্মাইতে পারা যায় তাহ দেখিবার ও শিখিবার জন্য অধ্যাপক কিং ১৯০৫ সালে চীনদেশ ভ্রমণ করেন।* তিনি বলেন চীনের একই জমি তিন হাজার বৎসর ধরিয়া চাষ করিতেছে এবং বর্তমান সময় পৰ্য্যস্ত সেই জমি হইতেই যথেষ্ট পরিমাণে শস্য উৎপাদন করিতেছে। তিনি ইহাও বলেন যে, চীনদেশে কি প্রকারে জমিতে পয়ঃপ্রণালীর সাহায্যে জলসেচনের ব্যবস্থা করা হয়, জলাভূমি ও নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত জমিগুলিকে কি উপায়ে কৃষির উপযোগী করিয়া তোলা হয়, কি প্রণালীতেই বা শস্য উৎপাদন করিবার জন্য জমিগুলিকে আবাদ করা হয়, কথায় বা মানচিত্রে তাহার স্পষ্ট ধারণা দেওয়া

  • Whitney's Book-Soil and Civilisation, pp. 204-208.