পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯২ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড কেতকী একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সেইখানে মাছগুলি ঢেলে দু'হাতে খোসা ছাড়াতে বসে গেল । কেতকী এই যে রোগে ভুগছিল তবুও দেহের অসামান্য রূপ তার ঢাকা পড়েনি। উদাসীন শাস্তশিষ্ট সদাশিবের মত নির্লিপ্ত সে রূপ। আকর্ষণও আনে—শ্রদ্ধাও জন্মায়। বিরাজ এক কলকে তামাক সেজে দেহের ক্লাস্তি দূর করার জন্যে স্তাতস্তে তে মেঝেটার উপর প্রায় কেতকীর ভূলুষ্ঠিত অঞ্চলটার গা ঘেষে উপবেশন করলে। কেতকী যেন বিন! আয়াসে অনেকখানি আদর কেড়ে নিতে পারলে। বাজারের খুঁটিনাটি ভুলে গিয়ে মিষ্টস্বরে সে বললে, “অম্বলের ব্যারামটা কি আমার পুষে রাখবে ?” বিরাজ হু কাটা একবার জোরে টেনে নিয়ে বললে, “পোষ মানাচ্ছ ত তুমি । একটু নড়াচড় কর দিকিনি, দেখি, অম্বল কেমন কম্বল পেতে বসে যায় ?” কেতকী হাসিমুখে কটাক্ষ হেনে বললে, “নড়াচড়া করিনে বুঝি ? ঠাকুর চাকরের ছড়াছড়ি করে রেখেছ কি না ?” বিরাজ বললে, “ওই ত একটা পরের মেয়ে এনে ঘোরাচ্ছ । সেও বা দুটো ভাতের জন্যে দাসী বাদীর মত খেটে খুটে অকারণ এ ভালবাসার টান দেখাতে যায় কেন ?” কেতকী কিছুদিন থেকে তার এক বিধবা নিরাশ্রয়৷ ভগ্নীকে এনে কাছে রেখেছিল। এবার মুখখান ঘোলাটে করে সে জবাব দিলে, “বলতে গেলে তোমার কথার মধ্যে ত খেই পাওয়া যায় না। আমার কাজের আসান করতে আমি ওকে আনিনি। ওর কি দাড়াবার ঠাই আছে কোথাও ? পয়সাটাই কেবল চিনেছ তুমি ” o বিরাজ একমুখ ধূম হাওয়ার সঙ্গে মিশিয়ে দিলে । নিষ্ফলতায় কতকটা দমে গিয়ে লঘুম্বরে সে বললে, “নেহাৎ গালির মত করে কথাটা বললে। পয়সা চেনা ভাল কেতকী ! যে তিনটি রত্ন তুমি ভূমিষ্ঠ করেছ, ওরা তোমার ভাত কাপড় জোগাবে কি ?” কেতকী বিষঃমুখে জিজ্ঞাসা করলে, “ওরা আবার কি দোষ করলে ?” বিরাজ কানের পাশের চুলগুলো চুলকিয়ে নিয়ে বললে, “তুমি ওদের মা, শুনতে তোমার টকই লাগবে। আমিও জন্মদাতা, অকারণ ওদের নিন্দুক হতে পারিনে । মুস্কিল যে, বিরাজের চোথে কিছুই এড়িয়ে যায় না। তোমার জ্যেষ্ঠপুত্রটি ইউক্লিডের প্লাত খুলে সমবাহু বিষমবাহু আবৃত্তি করে যান্‌—নীচে নকুল চৌধুরীর . বটতলার ‘প্রণয়ের হাট’ উকি মারে। কচি ছেলে— এখন কি হাট-ঘাট বসানর বয়েস ওর ? মধ্যমটি সকালসন্ধ্যে ছাদের উপর মুগুর নিয়ে ক্ষেপে ওঠে। ভূমিকম্পট। তোমার গায়ে লাগে না বুঝি ? আমি ত ভাবি বাড়ীটায় বুঝি অস্বর আশ্রয় করেছে। বাপ-ঠাকুর্দার একটুখানি স্মৃতি ও-ই ইষ্টকস্ত প করে ছাড়বে।” সন্তানের প্রতি এই মৰ্ম্মভেদী বাক্যবাণে কেতকীর অন্তর ক্ৰন্দনোন্মুখ হয়ে উঠল, বিরক্তির সঙ্গে সে বললে, “মুগুর ভেজে বাড়ীটা ফেলে দেবে ও ?” “না দিক্‌, পথেঘাটে ঘুষি বাগাতে ত বাধা নেই ? শেষটা পুলিশ কেস—ঢালে টাকা—থোজো মহাজন. এই ত ?” কেতকীর আড়ষ্ট ওষ্ঠ দু’খানা র্কাপছিল । অগ্নিময় চক্ষুদুটি সম্ভবমত স্নিগ্ধ করে সে জিজ্ঞাস করলে, “তিনটি রত্বের দুটির খবর ত দিলে। আর একটি ? বিরাজ বললে, “তোমার ঐ কোলের ছেলেটি ? যে লাফালাফি ঝর্ণপাঝাপি করে—হাড় ত একখান ভাঙলে। ডাক্তারের ফি ত ফ্রি নেই। আর গিয়ে এখনকার এই আধুনিক চিকিৎসে-লাঠির জায়গায় সড়কী । বেটারা যাকে বাগে পায়-ভাবে টাকার আশুিল। শেষটা আমারই বুকে ভল্ল । এই বয়সে মায়ের কোলে চড়ার তেষ্ট কমে গেল, মিষ্টিমুখে কোলের মধ্যে চেপেচুপে ঠেসে ধরে রাখতে পার না ?” কেতকী ঠোক্কর মেরে বললে, “যে ম্যালেরিয়ায় ধরেছে ওকে—ওষুধের বালাই নেই, লাফালাফি না করলেও বা রোগ তাড়ায় কি করে ?” বিরাজ বললে,“মাত্রাজ্ঞান ত থাকা চাই। পোষ্টাপিসের