পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪২২ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড ാ মায়ের কাছে মার খেয়ে দিন কাটিয়েছিস, এখন ভগবান তার স্বদস্থদ্ধ পূরিয়ে দিচ্ছেন।” মায়া একটু মুখ গম্ভীর করিয়া বলিল, “হয়ত মার খেলেই ছিল ভাল । বেশী শাসন ভাল, না বেশী আদর ভাল, তা এখনও ঠিক করে বুঝতে পারছি না।” ইন্দু হাসিয়া বলিল, “তা জানি না বাছা, তবে পিঠটা জড়িয়ে থাকলেই মাহুষের ভাল লাগে । যাক গে, দেখ, না তোকে কে চিঠি লিখল ।” মায়া চিঠি তিনপানী উল্টাইয়া-পাণ্টাইয়া বলিল, “একখানা বাবার, একখানা বাণীর, আর একখানা প্রভাসদার ” ইন্দু একেবারে খাড়া হইয়া উঠিয়া বসিল । বলিল, “তই নাকি ? প্রভাস আবার তোকে চিঠি লিখতে গেল কেন ? কি লিখেছে ?” মায় একটু যেন বিরক্ত হইয়া বলিল, “দেখ না কি লিখেছেন । একখানা পোষ্টকার্ড ত ? কেউ কাউকে চিঠি লিগেছে শুনলে তোমরা এমন আঁৎকে ওঠ কেন ? চিঠি ত যে কোনো মানুষ যে কোনো মানুষকে লিখতে পারে। কথা যদি বলা যায়, ত চিঠি লিখলে কি হয় ?” ইন্দু তাহার কথার উত্তর না দিয়া পোষ্টকার্ডখানা মন দিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। বিশেষ কিছু তাহাতে নাই । প্রভাস দিনকুড়ি পরে আবার গ্রামে আসিবে । মায়। যদি ততদিন থাকে, তাহা হইলে গ্রামে স্কুল করার পরামর্শ ভাল করিয়াই হইবে । আর মায়া যদি আগেই চলিয়া যায়, তাহ হইলে প্রভাস সব ব্যবস্থা একলাই করিতে চেষ্টা করিবে, এবং চিঠিতে মায়াকে সব জানাইবে । ইন্দু চিঠি পড়া শেষ করিয়া বলিল, “মায়া দেখ, তুই হয়ত শুনলে বিরক্ত হবি, কিন্তু আমি ভালর জন্তেই বলছি । তুই এ চিঠি ছিড়ে ফেল, উত্তর দিস না । অন্ততঃ এখানে বসে দিস না । তাহলে এই নিয়ে আর ঘোটের শেষ থাকবে না। নিস্তারিণী বুড়ীর ছেলে চিঠি নিয়ে এসেছে, সে কি আর পেষ্টকর্ডখন উণ্টেপাটে দেখেনি ? আমরা চিঠিপত্র পোষ্টও ত ওদের দিয়েই করাই । তুইও লিখছিস দেখলে এখন ঘরে ঘরে কত রকম করে বলে বেড়াবে।” - মায়া বলিল, “তাদের ভয়েই তা হলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকি ? এখানে এলাম কি করতে শুনি ? স্কুলটার ত এখন পৰ্য্যন্ত একটা কিছুই ঠিক হল না। একেবারে রেঙ্গুনে গিয়ে উঠলে তখন কি করে সব ব্যবস্থা করব ?” ইন্দু বলিল, “আরে চটস্ কেন বাপু ? তুই না হয় রেঙ্গুনে গিয়ে প্রভাসকে ডেকে নিয়ে যাস পরামর্শ করবার জন্তে । সেখানে কেউ একটা কথাও বলবে না। কিন্তু গায়ে একটা ছুতো পেলেই সবাই এমন টি ঢ়ি লাগাবে যে লোকের সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে আমার প্রাণ যাবে ” মায়। আর কথা বলিল না । অন্য চিঠি দুইখানা খুলিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। বাণী তাহার ফরমাশী জিনিষের জন্য অনেক তাগিদ দিয়াছে। তাহার নাকি এখনই দরকার, জিনিষপত্র সব তৈয়ারী করিতে আরম্ভ করিয়াছে, আর বেশী সময় হাতে নাই। নিরঞ্জন মেয়েকে শীঘ্র শীঘ্ৰ ফিরিবার জন্য তাগিদ দিয়াছেন । , শিবচরণ বাবু কলিকাতায় আসিয়া পুত্রের অপেক্ষায় বসিয়া আছেন ; সে আসিয়া পৌছিলেই তাহাকে লইয়া বৰ্ম্মায় চলিয়া যাইবেন । মায়াকে টেলিগ্রাম করিয়া তাহাদের যাত্রার দিন জানান হইবে । সে যেন প্রস্তুত হইয় থাকে, এবং আর দেরি না করে। বর্ষা আরম্ভ হইলে সমুদ্র বড় অশান্ত হইয় উঠে, যাওয়া-আসা করাই কঠিন। তাহ ভিন্ন এমন ভাল সঙ্গীও আর জুটিবে না । অন্য যাত্রিনীদের সঙ্গে আসিতে যদি মায়ার বেশী অস্থবিধা হয়, সে যেন কেবিন রিজার্ভ করিয়া আসে। ইন্দু তাহার সঙ্গে আসিলেই ভাল, গ্রামে থাকিলে সে আবার অসুখ বাধাইবে । নিরঞ্জন তাহাকেও পৃথক চিঠি লিখিতেছেন । মায়া চিঠি পড়া শেষ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা তোমাকে কি লিখেছেন, পিসীমা ?” 臀 ইন্দু একটু মুখ টিপিয়া হাসিয়া বলিল, “সে অনেক কথা । বাপ-জ্যাঠায় মেয়েছেলে সম্বন্ধে কত রকম পরামর্শ করে, সবই কি আর তাদের কাছে বলা যায় ?”