পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] মহামায়া 8、Q প্রভাসের মা বলিলেন, “এই হয়েছে মাঝামাঝি একরকম। দেখতে ভালই, তবে লেখাপড়া খুব বেশী শেখেনি। দেবে থোবে মন্দ না ।” জয়ন্তী জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার ছেলের পছন্দ হয়েছে ?” - প্রভাসের মা বলিলেন, “বলছে না ত কিছু, খুব বেশী অপছন্দ বোধ হয় হয়নি।” তাহার পর অন্য কথা আসিয়া পড়িল । প্রভাগের ম। কিছু খাইয়া যাইবার জন্য জেদ করিতে লাগিলেন। বাড়ীর খাওয়ার চোটেই তখন সকলের আকণ্ঠ ভরিয়া উঠিয়াছে, আর খাইবার জায়গা কোথায় ? ভদ্রমহিলা কিছুতেই ছাড়েন না দেখিয়া অবশেষে এক এক গেলাস আমপোড়ার সরবৎ খাইয়া সকলে তাহার মানরক্ষা করিল। আরও দু-চারটা কথার পর সকলে উঠিয়া পড়িল । রাস্তায় বাহির হইবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময় নিস্তারিণী-ঠাকুরাণীর ছোটছেলেটি হাফাইতে হাফাইতে আসিয়া উপস্থিত হইল। সে সারা পথটাই ছুটিয় আসিয়াছে । ইন্দু ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “অমন করে আসছিস কেন রে ? কি হয়েছে ?” ছেলেটি ঢোক গিলিয়া বলিল, “টেলিগেরাপ এসেছে। লোকটা দাড়িয়ে আছে।” মায়া বলিল, “শিবচরণবাবুর টেলিগ্রাম বোধ হয়। দেখ আমি কেমন ভবিষ্যং দেখতে পাই । আগের থেকেই যাবার ব্যবস্থা করে রাখলাম।” ইন্দু বলিল, “আগে দেখইত কোথাকার তার । টেলিগ্রাম শুনলেই কেমন একটা ভয় ভয় করে যেন।” বাড়ী পৌঁছিয়া মায়া দেখিল সত্যই শিবচরণবাবুর টেলিগ্রাম। দেবকুমার আসিয়া পৌছিয়াছে, এই সপ্তাহেই তাহার। বৰ্ম্মা রওনা হইবেন। ՀԵ ঘরময় কাপড়-চোপড়,বই বাসন নানা জিনিষ ছড়াইয়৷ মায়া বাক্স গুছাইতে বসিয়াছে। জিনিষগুলির মধ্যে 8 و كس-8 6 কতক তাহার নিজের, কতক বাণীর ফরমাশী । বাণীর মায়ের ফরমাশও কিছু কিছু আছে । বাসনকোসন মোটেই রেঙ্গুনে ভাল পাওয়া যায় না, স্থতরাং মেয়ের বিবাহের বাসন সবই তিনি কলিকাতা হইতে কিনাইয়৷ লইয়া যাইতেছেন। মায়া অনেক বকবকি রাগারগি করিয়াও ইন্দুকে সঙ্গে যাইতে রাজী করাইতে পারে নাই । তাহার সেই এক কথা, তীর্থভ্রমণ না সারিয়া সে বৰ্ম্মায় যাইবে না। মায়ার জন্য কেবিন একটা রিজার্ভ করিয়াই লওয়া হইয়াছে, আসিবার সময় সহযাত্রিনীদের উৎপাতে তাহার বড় কষ্ট হইয়াছিল । বাক্স গুছাইতে গুছাইতে, কাগজপত্রের মধ্যে প্রভাসের চিঠিখানা বাহির হইয়া পড়িল। ইহার এখনও উত্তর দেওয়া হয় নাই । কলিকাতায় আসিয়া উত্তর দিবে স্থির করিয়া রাখিয়াছিল, কিন্তু কি - উত্তর দিবে, মায়া ভাবিয়াই পায় না। রেঙ্গুনে তাহাকে ডাকিয়া লইয় যাওয়া, কি ঠিক হইবে ? অন্ততঃ নিরঞ্জনকে একবার জিজ্ঞাসা করা উচিত। কিন্তু মায়ের সম্পর্কিত কোনো কথা, পিতার নিকট বলিতে মায়ার এখনও সঙ্কোচ লাগে। কিছু যদি তিনি মনে করেন ? কিন্তু প্রভাসদার চিঠির কোনো একটা উত্তর ত দিতে হয় ? সে তাহা ন হইলে কি ভাবিবে ? ভাবিবে হয়ত মায়ার আসলে কিছু করিবার মতলব নাই, কেবল কথা বলার খাতিরে কতকগুলা বাজে কথা বলিয়াছিল। এখনই যাহা হয় কিছু-একটা উত্তর লিথিয়া দেওয়া যাক, যত দেরি করিবে তত আলস্য বাড়িতে থাকিবে । উঠিয়া গিয়া মায়া একখানা চিঠির কাগজ, খাম এবং তাহার ফাউণ্টেন পেন লইয়া আসিল । পোষ্টকাডে চিঠি লিখিতে তাহার কোনকালেই ভাল লাগে না। দু’ লাইন হইলেও সে খামেই চিঠি লেখে। অনেক ভাবিয়া সে লিখিল, যে, সম্প্রতি সে রেজুন ফিরিয়া যাইতেছে। সেখানে গিয়া পিতার সহিত পরামর্শ করিয়া, সে প্রভাসকে আবার চিঠি লিখিবে। রেজুনের ঠিকানা সে দিয়া দিল, যদি বিশেষ কোনো প্রয়োজন ঘটে, প্রভাস যেন তাহাকে লিথিয়া জানায় ।