পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] gनि থাকতে ত দু বেল চায়ের পাট বসত। আমি এখনই না হয় ও সব তুলে দিয়েছি। চা সামনের দোকানেই পাবে। খাবার ঘরে কিছু আছে, আর কিছু আনিয়ে নিলেই হবে।” মায়া অনিচ্ছুক মহেশকে লইয়া বিজয়ের ঘর সংস্কার করিতে চলিল। ঘরখানির চেহারা দেখিয়া তাহার বুক দমিয়া গেল। অল্প সময়ের মধ্যে ইহার রূপান্তর ঘটান একটু কঠিন ব্যাপার বটে। টেবিল এবং চেয়ারের উপর বই, পাত, ছেড়া কাগজ নির্বিচারে ছড়ানো ; দেয়ালের গায়ে কালির দাগ, এবং ছেড়া ধুলিলিপ্ত ক্যালে গুারের প্রাচযf, ছাদের দিকে কোণে কোণে ঝুল এবং মাকড়শার জালের আলপন, আলনার উপর ময়ল ধুতি গেঞ্জি, পাঞ্জাবীর ভীড় । এক ঘণ্টায় এ ঘরকে কি করিয়া সংস্কার করা যায় ? মায়া দেখিল, এক্ষেত্রে সব গুছাইবার চেষ্ট করা পুথ। আবর্জনা গুলি কোনোমতে আড়াল করিয়াই এখন কাজ সারিতে হইবে । আলনার সমস্ত কাপড় সে একটানে নামাইয়া পুটলি বাধিয়। ফেলিল । চবিরকে বলিল, “এটা জ্যাঠাইমার ঘরে রেখে আয়, আর আলনাট নিয়ে যা আমার ঘরে।” চাকর যাইবামাত্র টেবিলের উপরের সব বই, থাত, কাগজও সে নামাইয়া ফেলিল। টেবিলটার বানিশ ইত্যাদির বালাই নাই, কালি ও তেলের প্রাচুর্ষ্যে সেটি মঙ্গণ। তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে ছুটিয়া গিয়া জিনিষপত্রের মধ্য হইতে মায়া একটি লক্ষ্মেণএর ছিটের চাদর টানিয়া বাহির করিল। এটা সে রেজুন লইয়া যাইতেছিল, বিছানা-ঢাকা হিসাবে ব্যবহার করিবার জন্য। সম্প্রতি আর কিছু হাতের কাছে না পাইয়া ইহার দ্বারাই সে কাজ চালাইয়া দিল । টেবিল ঢাকা দিয়া, বিজয়ের বই এবং আস্ত থাত্যপত্র যাহ কিছু ছিল, তাহা উহার উপর ভাল করিয়া সাজাইয় রাখিল । ছেড়া খাতা এবং কাগজ যতটা পারিল, দেরাজগুলির মধ্যে ঠাসিয়া রাখিল । যাহা কুলাইল না, তাহ ঘর হইতে বিদায় করিয়া দিল । মহেশ ইতিমধ্যে ফিরিয়া আসিয়াছিল। সে জিজ্ঞাসা করিল, “আর কিছু কাজ আছে দিদিমণি ?”


- -- ----------- ہے ۔بی۔سی۔سی۔۔۔۔--سی-.۔ =

8२१ মায়া বলিল, “আরও কিছু মানে ? কোন কাজটা হয়েছে শুনি ? সবইত এখনও বাকি । এ ক্যালেণ্ডারগুলো সব নামিয়ে ফেল, আর বড় ঝাটাটা এনে ঝুলটুলগুলো সর ঝেড়ে ফেলু।” মহেশ অপ্রসন্নমুখে ঝাটা খুজিয়া আনিয়া ঘর ঝাড়িতে আবম্ভ করিল। ক্যালেণ্ডারগুলি মায়া নিজেই নামাইয়া ফেলিল । তাহার পর ঘর ঝাট শেষ হইবামাত্র চেয়ারগুলি ঠিক করিয়া রাখিয়া জ্যাঠাইমার সন্ধানে ছুটিল। তিনি তখন উঠিয়া বসিয়া বিকালে কি কি রান্না হইবে সেই বিষয়ে . বামুন-ঠাকরুণের সঙ্গে আলোচনা করিতেছিলেন । এ বাড়ীতে ঝি-চাকর বেশী নাই, ঐ রাধুনীটি এবং মহেশ। টাকার টানাটানি বলিয়া ইহাদের দিয়াই কাজ চালাইয়। লইতে হয় । ” মায়া বলিল, “জ্যাঠাইমা, ঘর ত একরকম ঠিক করলাম । চায়ের জোগাড় কিছু হয়েছে ? জ্যাঠাইমা তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া বলিলেন, “মাগো, ধেমে, ধুলো মেখে, একেবারে ভূত হয়ে গেছিস্ ? এত করবার কি দরকার ছিল ? এ ত আর কেউ কনে দেখতে আসছে না ? যা যা, গা ধুয়ে কাপড় ছাড়গে যা, আমি ফল, মিষ্টি সব আনিয়ে রাখছি।" মায়া গা ধুইতে চলিল । নিজেরও তাহার একবার মনে হইল, সত্যই ত, এত করিবার প্রয়োজন ছিল কি ? শিবচরণবাবু বুদ্ধ, সেকেলে মানুষ, দেবকুমারকে সে চেনেও না । তাহদের জন্য এত করিয়। ঘরদের ঠিক ন। করিলেই বা কি হইত ? কিন্তু মন বুঝিতে চায় না। তাহাকে কেহ হীন, মলিন, কদৰ্য্য আবেষ্টনের মধ্যে দেখিবে কেন ? তরুণী নারীর চিত্ত নিজের অজ্ঞাতসারেই যেন সারাক্ষণ পুরুষজাতির বিস্ময়মিশ্রিত শ্রদ্ধার অর্ঘ্যের অপেক্ষ করিয়া থাকে । তাহার জন্ত আয়োজন না করিলে চলিবে কেন ? গা ধুইয়া যখন সে কাপড় পরিতে আসিল, তখনও যা-তা করিয়া কাজ শেষ করিতে পারিল না । খোপা বাধিতে বেশ সময় গেল। বাদামী রঙের পাতল৷ রেশমের ব্লাউস, তাহার হাতে এবং গলায় জরির পাড়, এবং জরির পাড় দেওয়া একটি ঢাকাই কাপড় সে বাছিয়া