পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আচাৰ্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বক্তৃতা লাইব্রেরীর সম্বন্ধে কিছু বলতে হলে প্রথমেই বলতে হয় যে বই সংগ্রহ করা ভাল বটে কিন্তু আসল জিনিষ হচ্ছে পড়া । আগেকার দিনে এই পড়ে আর পড়িয়ে পণ্ডিতরা জ্ঞানের বিস্তার করতেন । কিন্তু তখন অনেক অসুবিধা ছিল । আজকাল আর লেখা-পড়া শিখবার জন্য, জ্ঞান অর্জন করবার জন্ত, কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন নিৰ্দ্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার আবখ্যকতা নাই।--বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ না থাকলে কিছু হবে না একথা ঠিক নয় |- - - বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্ৰী, ডিগ্রীধারীর অজ্ঞানতা ঢেকে রাখবার তাবরণ মাত্র • • • আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একমাত্র কাজ যেন গ্র্যাজুয়েট তৈরী করা । কিন্তু আমাদের দেশে বহু লোক ছিলেন এবং এখনও আছেন প্রতিভায় উজ্জ্বল, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ ছিল না। যেমন কেশবচন্দ্র সেন, প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ, গিরীশ ঘোষ, শরৎচন্দ্র ••• মেকলে বিলাত থেকে ভারতে আসবার পথে জাহাজে বিস্তর বই পড়ে ফেলতেন । তখনও স্বয়েজ খালের পথে ভারতে আসবার রাস্তা হয়নি। বিলাত থেকে ভারতে আসতে হ’ত কেপ অব গুড হোপ ঘুরে । তাতে বহু সময় লাগত। এই দীর্ঘ সময়ে জাহাজেই তার হাজার হাজার যই পড়া হয়ে যেত । গিবন অক্সফোর্ড গিয়েই ফিরে এসেছিলেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষ। তার ছিল না । কিন্তু তার মত জ্ঞানী কয়জন ? তিনি হাক্সফোর্ড থেকে ফিরে এসে লাইব্রেরীতে বসে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন । সেই জ্ঞানের ফল পৃথিবীতে দিয়ে গিয়েছেন, রোমক সাম্রাজ্যের পতনের ইতিহাস- এক অতি অপুৰ্ব্ব জিনিষ । বিশ্ববিপাত জ্ঞানী জনসন নিতাস্ত দরিদ্র ছিলেন । দু’বেল তার আহার জুটত না। একদিন তিনি তার পুস্তক-প্রকাশকের কাছে কিছু টাকা ধার চেয়ে এক পত্র লিখেছিলেন,—নীচে সই করেছিলেন- খাদ্যহীন । এই জনসন লাইব্রেরীতে পড়ে পড়ে জ্ঞানবান হয়েছিলেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা লাভ করবার মত সঙ্গতি তার ছিল না। মহাপণ্ডিত কালর্ণইলের বাড়ী ছিল স্কটল্যাণ্ডে । উার পিতা রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। অতি দরিদ্র ছিলেন এরা। কালৰ্ণইল বলতেন, রক্ষে যে আমি জমিদারের ছেলে হয়ে জন্মাই নি, তাই মানুষ হয়েছি |- - - - তার পিতা তখন তাকে এডিনবরার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণলাভের জন্য পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে এসে তিনি বললেন, একমাত্র গণিত ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক ছাড়া এখানে আর মানুষ কেহ নেই। তবু যে তিনি এডিনবরায় রইলেন তার কারণ হচ্ছে এই যে, এডিনবরায় খুব ভাল একটি লাইব্রেরী ছিল। তিনি সেই লাইব্রেরীতে বসে নিজের চেষ্টায় ইটালীয়ান, ফ্রেঞ্চ ও জাৰ্ম্মেন ভাষা শিখেছিলেন । ভারতবর্ষে যে কয়েকজন মহা মহা দার্শনিক পণ্ডিত আছেন, কেউই বিদেশে গিয়ে জ্ঞান অর্জন করে পণ্ডিত হন নি। এদের কারও নামের পেছনের ক্যাণ্টাব, অক্সন নেই। এরা ভারতে থেকেই লেখাপড়া করে পণ্ডিত হয়েছেন ।... - অনেক জাপানী লণ্ডনে যায় বিদেশ থেকে জ্ঞান আহরণ করে আনতে। তাদের কাউকে যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি লণ্ডনের ডাক্তার উপাধি নিতে এসেছ ? তবে সে চটে যাৰে । সে তৎক্ষণাৎ জবাব দেবে, কেন, অামাদের দেশের ডক্টরেট কি কিছু নয়, যে, আমরা বিদেশের উপাধির জন্ত লালায়িত হব ? আমরা যে বিদেশী ডিগ্রীর জন্য ব্যস্ত হই সেটাও আমাদের দাসমনোভাবের ফল। আসল জিনিষ হচ্ছে জ্ঞানপূহ।. পড়াশোনা করতে চাইলে আমাদের যে সব লাইব্রেরী আছে তাতেও যথেষ্ট বই পাওয়া যায়। কলিকাতার ইস্পীরিয়েল লাইব্রেরী ও ইয়ুনিভাটি লাইব্রেরী থেকে আমি বছরে অন্ততঃ এক হাজার বই নিয়ে পড়ি। পড়ি, নোট করি—যেন রাত পোহলে আমার এমূ-এ এগ জামিন। দেশে যে সব লাইব্রেরী অাছে তারও সদ্ব্যবহার দেশের লোক করে না। সারবান বই খুব কম লোকেই পড়ে। আমাদের দেশে শিক্ষালাভের আর একটা প্রকাও বাধা এই যে, আগে ইংরেজী ভাষা শিথে পরে তার মারফত অস্ত সব শিক্ষণ করতে হয় । ইংরাজী শিখতে কি সময় নষ্ট, কি পরিশ্রম ! কোন ইংরেজকে যদি বলা হয় যে, তোমাকে আগে জাৰ্ম্মেন শিখে তারপর সেই ভাষার মারফত অপর যা কিছু শিখতে হবে, তবে সে ঐ কথাকে পাগলের প্রলাপ বলে ভাববে। অথচ এই বিযম অস্বাভাবিক শিক্ষণপ্রণালী আমাদের দেশে চলে গণসচে । বাংলা ভাষায় সব শেখা যায় ।... প্রত্যহ নিয়মিত ভাবে দু’ঘণ্টা করে পড়লে বছরে একটা সাধার, লাইব্রেরীর সমস্ত বই পড়ে শেষ করা যায়। নিজের চেষ্টায়ই লোকে জ্ঞানবান হতে পারে, পরে আর সাহায্য আবশ্বক হয় না। ইংরেজীতে একটা কথা আছে, মানুষের সঙ্গী দেথলেই তাকে চেনা যায়। আমি বলি, মানুষ কি বই পড়ে তা দেখলেই তাকে চেনা যায় । আসল কথা হচ্ছে, পড়া দরকার । যাকে বলে Well informed' তাই হওয়া দরকার। Well inforinetl না হতে পারলে লেপাপড়। শেখার কোন সার্থকতা নেই। মাধবী, চৈত্র, ১৩৩৬ ] শক্তি-বিজ্ঞান উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে যখন আধুনিক পদার্থতত্ত্ব ক্রমশঃ গড়িয়া উঠিতেছিল, ফ্যারান্ডে প্রমুখ বৈজ্ঞানিকগণের অমানুষিক প্রতিভা যখন নিত্যনুতন পরীক্ষায় বিস্ময়মুগ্ধ লোক-সাধারণের নিকট আত্মপ্রকাশ করিতেছিল, তখন কয়েকজন গণিতজ্ঞ মনীষী পণ্ডিত “শক্তি”র স্বরূপ নিৰ্দ্ধারণে ব্যাপৃত ছিলেন।...বহুকাল পূৰ্ব্বে দার্শনিক পণ্ডিতেরা শক্তি সম্বন্ধে অল্পবিস্তর চিস্তা করিয়াছিলেন । বিশ্ব-ব্ৰহ্মাণ্ডের শক্তির