পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা কষ্টিপাথর—শক্তি-বিজ্ঞান 88S স্বধৰ্ম্ম অনুসারে জন্ম-মুহূর্ত হইতেই ইহার ছুটাছুটি আরম্ভ করিবে এবং ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে আন্তরিক সাম্য ক্রমশঃ নষ্ট হইয়া আসিবে। একটা পাত্রের মধ্যে কতকগুলি সাদ। এবং কতকগুলি কাল বল যদি এমন ভাবে সাজান যায় যে, প্রত্যেক শ্বেত গোলকের পার্শ্বে একটা কৃষ্ণবর্ণের গোলক থাকে, তবে যতক্ষণ পৰ্য্যস্ত পাত্রটকে নাড়াচাড়া না করা হয়, অর্থাৎ যতক্ষণ পৰ্য্যন্ত বলগুলি স্থির থাকে, ততক্ষণ আভ্যন্তরীণ সাম্য বেশ থাকিয়াই যায়। কিন্তু যদি পত্রটাকে লইয়। আর একটা শুস্ত পাত্রের মধ্যে উপুড় করিয়া দেওয়া যায় এবং এই ভাবে কয়েকবার ঢাল-ওপর করা হয়, তাহা হইলে শীঘ্রই আভ্যন্তরিক শৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হইয়া যাইবে। এই প্রকার পরিবর্তনকে পদার্থশাস্ত্রের ভাষায় “চিরস্থায়ী পরিবর্তন” (Irreversible change ) বলিতে পারি। কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফলে বলগুলি পুনরায় পূর্বাবস্থা ফিরিয়া পাইতে পারে না—পূর্বের শৃঙ্খল। ফিরাইয়। অানিতে হইলে সমস্ত বলগুলি ঢালিয়৷ এক একটা করিয়া যথাস্থানে সাজাইতে হইবে। এই দৃষ্টান্ত হইতে অনুমান করিতে পারি যে, যদি গোলকগুলির ছুটাছুটি করিবার ক্ষমতা থাকিত, তাহা হইলে এই প্রকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফলে পূৰ্ব্বেকার সাম্য ফিরিয়া আসিত না। পুর্বের সামা ফিরিয়া আসিতে গেলে ইহার উপর কাৰ্য্যের আরোপ করিতে হয় । কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফলে আপনা হইতে কোন বস্তু পুৰ্ব্বাবস্থা ফিরিয়া পাইতে পারে না, ইহাই হইল স্বভাবের নিয়ম।. পুৰ্ব্বেকার দৃষ্টান্ত এই নিয়ম অনুসারে আলোচনা করা যাউক । খানিকটা গ্যাস একটা পাত্রে পুরিয়া একটা বায়ুশূন্ত পাত্রের সঙ্গে যুক্ত করিলে দেখা যায় যে, আণবিক শক্তিপ্রভাবে গ্যাসের অণুগুলি সমুদয় স্থানটুকু ব্যাপিয়৷ চুটাছুটি করিতে থাকে। মানুষের অভিজ্ঞতা হইতে বলা যাইতে পারে যে, কোন সময়েই অণুগুলি আবার সরিয়৷ গিয়া পাত্রের এক ধারে জমায়েৎ হইয়। অঙ্ক দিক খালি করিয়া দিবে না । বৈজ্ঞানিক পৰ্য্যবেক্ষণ অনুসারে বলিতে পারি যে, গ্যাস একবার প্রসারিত হইলে আপন হইতে সঙ্কুচিত হইয়। পূর্বের অবস্থা ফিরিয়া পায় না। এই প্রকার পরিবর্তনশীল কোন বস্তুকে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থায় আনিতে গেলে বাহির হইতে শক্তি প্রয়োগ করিতে হয়। পূৰ্ব্ববর্ণিত গ্যাসকে সঙ্কুচিত করিয়া পূৰ্ব্বের অবস্থায় আনিতে গেলে বাহির হইতে ইহার উপর চাপ প্রয়োগ করা আবখক। একথও প্রস্তর শূন্তে ছাডিয়া দিলে মাটিতে পড়িয়া যায, ইঙ্গ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক প্রক্রিয়। !ء ء • বোলটস্ম্যান নামে একজন পণ্ডিত ব্যাপারটকে গণিতশাস্ত্রের সাহায্যে বুঝাইতে চেষ্টা করেন । গণিতে probability বলিয়া একটা অধ্যায় আছে । ইহার সাহায্যে কোন ব্যাপার ঘটিবার সম্ভাবন কতটুকু তাহার আভাস দেওয়া যায়। পূৰ্ব্বোল্লিখিত গোলকের দৃষ্টান্ত এই ভাবে আলোচনা করিলে দেথা যায় যে, গোলকের সংখ্যা কম হইলে ঢাল-ওপর করিবার মধ্যে একবার হয় ত বলগুলি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়া আসিতে পারে। কিন্তু গোলকের সংখ্যা বাড়িয়া গেলে, পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া আসিবার সম্ভাবন। নিতান্তই কম।.গ্যাসের অণুগুলি সংখ্যায় বড় কম নহে, এক ঘন-ইঞ্চি স্থানের মধ্যে কোটা কোটা অণু বৰ্ত্তমান থাকে। স্বতরাং যেখানে এত অধিক সংখ্যক অণু চুটাছুটি করিতেছে, সেখানে তাহাদের পক্ষে এক ধারে জমায়েত হইয়। অন্ত দিক খালি করিয়া দিবার সম্ভাবন। ಕ್ಗ অল্প-হয় ত কোটী কোট বৎসরে একবার হইলেও হইতে ८ब्र । t পূৰ্ব্বেই বলা হইয়াছে যে, ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে অণুগুলির আন্তরিক وف S - مسدوف ٤) সমতা ক্রমশঃ নষ্ট হইতে থাকে ; এবং সময়ের সঙ্গে এই অসামঞ্জস্তের পরিমাণ একটা চরম সীমায় অসিয়া পৌঁছায়। যখন এই আভাস্তৱিক অসমতার পরিমাণ চরমে পৌছায়, তখন গ্যাসের মধ্যে স্থির ভাব (Equilibrium ) আসিয়াছে মনে করিতে পারি। এইরূপ স্থির ভাব আসিবার পর ঘাত-প্রতিঘাতের ফলেও গ্যাসের মধ্যে আর অধিক বিশৃঙ্খলা আসিবে না। উইলার্ড frp (Willard Gibbs) এই বিশৃঙ্খল ভাবের নাম দিয়াছিলেন Entropy স্বতরাং ক্লদিয়াস্ ও ম্যাক্সওয়েলের প্রতিপাদ্য বিষয়কে এই ভাবে বলা যাইতে পারে যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ামাত্রেই এরূপভাবে সংঘটিত হয়, যাহাতে আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলতা চরম সীমার গিয়া পৌছে। প্রকৃতির লক্ষ্যই হইতেছে আপাত-বিশৃঙ্খলতার ভিতর দিয়া সাম্য স্থাপন কর। ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে সকল অণুর গতি সমান থাকে না। কাহারও গতি কমিয়া যায়, কাহারও বা বাড়িয়া যায়। কিন্তু অধিক সংখ্যক অণু একটা বিশেষ গতি লইয়া ছুটয় বেড়ায় ; গড়ে ইহাকেই অণুর গতি বলা হয়। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে খানিকট গ্যাসের মধ্যে সকল প্রকার গতিই বৰ্ত্তমান থাকে। ম্যাক্সওয়েল কল্পনা করিয়াছিলেন যে, এমন একটা গাবয়ব দৈত্যকে যদি গ্যাসের মধ্যে ঢুকাইয়। দেওয়া যাইত যে সে শুধু বসিয়া বসিয়া অপেক্ষাকৃত নিজীব অণুগুলিকে তুলিয়া এক পাশে রাখিয়া দিত, তবে সহজেই গ্যাসের এক অংশ শীতল ও অপর অংশ উত্তপ্ত হইত ; কারণ, অণুসমূহের গতির উপরই গ্যাসের উষ্ণতা নির্ভর করে। ফলে উত্তপ্ত অংশ হইতে শীতল অংশে তাপ সঞ্চারিত হইত এবং তাহার সাহায্যে হুবিধাজনক কাজ করাইয়ালওয়াও চলিত। ম্যাক্সওয়েল বলিতে চাহিয়াছিলেন যে, গ্যাসের মধ্যে আপন হইতে এরূপ অবস্থা আদিতে পারে না, এবং সেই জন্তই দুইটা সমোক বস্তুর মধ্যে উত্তাপ প্রবাহিত হইতে পারে না। কিন্তু বোলটসম্যানের যুক্তি অনুসারে দেখিতে গেলে বলিতে হয়, ম্যাক্সওয়েলের দৈত্য যে নিছক কাল্পনিক তাহী নহে ; তবে ইহার আবির্ভাব কোটী কোট বৎসরে একবার হইলেও হইতে পারে। বৰ্ত্তমান শতাব্দীর প্রারম্ভে একজন মনস্বিনী মহিলার আবিষ্কারবাৰ্ত্তা যখন বৈজ্ঞানিক জগতে প্রচারিত হইয়াছিল, তখন অনেকেই শক্তির এক অভিনব উৎসের সন্ধান পাইয়াছেন ভাবিয়া উৎফুল্ল হইয়া উঠিয়াছিলেন। কিন্তু তাহদের এ আনন্দ স্থায়ী হয় নাই। কুরী দম্পতি যখন রেডিয়ম ও রেডিয়মৃধৰ্ম্মী আর দু’একটা মুল পদার্থের আবিষ্কার করিলেন, তখন লোকে বিস্মিত হইয়া শুনিল যে, রেডিয়ম হইতে অনবরত শক্তির বিকীরণ হইতেছে এবং তাহার ফলে রেডিয়ম্। পরমাণু স্বল্পভার পরমাণুতে পরিবর্তিত হইতেছে। এক কণিকা রেডিয়ম হইতে যতটা উত্তাপ আপন হইতে বাহির হয়, তাহার দশলক্ষগুণ ওজনের কয়লা পুড়াইলেও সে উত্তাপ পাওয়া যায় না। ইহা হইতেই বুঝা যাইতেছে, বস্তুর আণবিক শক্তি কি প্রচণ্ড। কিন্তু সামান্ত গোল বাধিরাছে যে, রেডিয়ম্ ও সমধৰ্ম্মী কয়েকটা পদার্থ ভিন্ন অন্য সকল পদার্থে এ ধৰ্ম্ম দেখা যায় না ; এবং সকল বস্তুকে স্বল্পভার বস্তুতে পরিণত করিবার ক্ষমতা মামুষের আজও আসে নাই । রেডিরমতত্বের পরিচয় দেওয়া বৰ্ত্তমান প্রবন্ধের উদেষ্ঠ নহে ; কিন্তু অদূর-ভবিষ্কতে মানুষ যদি এই ক্ষমতার অধিকারী হয়, তবে শক্তিরাজষ্ঠ আর তাহাকে তেল, কাঠ ও কয়লার সন্ধানে ছুটিতে হইবে না। এক মুষ্টি ধূলিতে যে অজস্ৰ শক্তি সঞ্চিত আছে, তাহার তুলনায় রাশি রাশি কয়লার তাপ উৎপাদিকা শক্তি যৎসামান্ত । (ভারতবর্ষ, জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৭) অধ্যাপক শ্ৰীমবোধকুমার মজুমদার