পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড গৌরবর্ণের চেয়েও সময়-বিশেষে অধিকতর মনোহর। চোখ দুইটি বড় বড়, স্বরম টানিয় তাহার বাহার আরও সে বাড়াইয়। তুলিয়াছে। মাথাভর সিদুর, কপালেও টপের প্রাচুর্য্য কম নয়। হাতে পায়ে কাসার চুড়ি বালা ও মলের ঘটা দেখিয়া মুক্তণমালা ত শিহরিয়া উঠিলেন । বড়বউ বলিলেন, “বাপ রে, ওর কোলে তুমি ছেলে দেবে কি করে ? কোনোরকমে যদি হাতখানা মাথায় লেগে যায়, তাহলে মাথা ফেটে চৌচির হবে ।” মুক্তামালা হাসিয়া বলিলেন, “দেখি বুড়োকে বলে ওর চুড়ি বালার গোছা যদি কিছু কমাতে পারি।” ঝুলনী আসিয়াই নিজের দেহাতী হিন্দি ভাষায় সকলের সঙ্গে গল্প জুড়িয়া দিল । খুব ফুৰ্ত্তিবাজ মেয়ে, মুখে তাহার হাসি লাগিয়াই আছে। রূপলাল বউকে আদরধত্ব করে খুব, সাধ্যমত গহনা কাপড় দিয়াছে, বেশী কাজ করিতে দেয় না, রান্নাম্বুদ্ধ নিজেই বেশীর ভাগ করে । বড়বউ বলিলেন, হতভাগার রকম দেখ না, পারে ত বৌটাকে মাথায় করে নাচে ।” মুক্তামালা বলিলেন, “সত্যি দিদি, আমরাই ঠকে গিয়েছি। ঝুলনীর চেয়ে কিইবা আমার এমন বেশী বয়স, তবু তোমার দেবরের মুখে খ্যাকানী ছাড়া একটা ভুল কথা ত কখনও শুনি না। ঝুলনীকে দেখিয়া মোটের উপর সবাই খুসি হইল, এক মুক্তশমালার আয় ছাড়া। ঝুলনী যে তাহার জায়গায় কাজ করিতে আসিয়াছে তাহা সে শুনিয়াছিল। এ বাড়ীতে কাজ খুব বেশী নয়, মাহিনী সে তুলনায় ভালই, বকশিস প্রভৃতিতেও ছোটবউ মুক্তহস্ত। স্বতরাং কাজটা ছাড়িবার তাহার বিশেষ ইচ্ছা ছিল না। ছাড়িবার কথা যে তুলিয়াছিল তাহা কেবল মাহিনী বাড়াইবার চেষ্টায়। কিন্তু ঝুলনী আসিয়া পড়িয়া তাহার এমন পাকা চালটাকে র্কাচা করিয়া দিল। মেয়েটার উপর সে হাড়ে হাড়ে চটিয়া গেল। “বুড়ে বয়সে বিয়ে করে। যাক বদলী লোক যখন আসিয়াই পড়িয়াছে তখন আর থাকা ভাল দেখায় না। নিজের আত্মসন্মানের হানি হয়। আয় যাইবার জন্য জেদ ধরিল। মুক্তামাল৷ বলিলেন, “ওকি, তুই না বলেছিলি ঝুলনী এলেও মাসথানেক থেকে তাকে একটু কাজকৰ্ম্ম শিখিয়ে দিয়ে যাবি ?” আয় মুখ গোজ করিয়া বলিল, “না মা, আমি থাকতে পারব না, আমার মায়ের বড় অমুখ ।” চাকর-বাকরকে বেশী সাধাসাধি করা মুক্তামালার ধাতে ছিল না। তিনি আয়াকে ছাড়িয়া দিলেন । সে যাইবার সময় শেষ একটা খোচা দিয়া গেল । ছোটবউকে বলিল, “ছোট বউদিদি, ছুড়ীর উপর একটু নজর রেখো, ওর চাউনিট যেন কেমন কেমন । ভাল কাপড়, ভাল জিনিষ যা দেখবে তাই যেন দুচোখ দিয়ে গিলতে চায়।” ছোটবউ গম্ভীর হইয়া বলিলেন, “আচ্ছা সে ভাবনা তোমার ভাবতে হবে না।” মুক্তামাল ভাবিয়াছিলেন ঝুলনী পাড়াগায়ের মেয়ে, তাহাকে কাজকৰ্ম্ম শিখাইয়া লইতে বেশ কষ্ট পাইতে হইবে। স্বাস্থ্য ভাল হইলে কি হয়, রূপলাল তাহাকে যেরকম আহলাদ দেয়, তাহাতে মেয়েটা নিশ্চয়ই খানিকটা কুঁড়ে হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু কাৰ্য্যতঃ দেখা গেল ঝুলনী কোনো শহুরে আয়ার চেয়ে কোনো অংশে হীন নয়। খাটিতে পারে সে অসাধারণ রকম, পুরুষ চাকরগুলা পৰ্য্যন্ত তাহার কাছে হার মানিয়া যায়। সমস্তক্ষণই তাহার মুখে হাসি লাগিয়া আছে, কিছুতেই তাহার অসন্তোষ নাই। যে কাজ একবার দেখাইয়া দেওয়া যায়, তাহাতে আর সে ভুল করে না। মুক্তামালার ছেলেমেয়ের সহিত সে এমন ভাব করিয়া লইল যে, তাহারা পুরাতন আয়ার শোক একেবারে ভুলিয়া গেল । চুড়ি খোলান লইয়া প্রথম প্রথম একটু গোলযোগ বাধিল । কমুই পৰ্য্যস্ত কাসার চুড়িগুলি ঝুলনীর অতি প্রিয় অলঙ্কার। সেগুলি বিদায় দেওয়ার নামে তাহার দুই চোখ জলে ভরিয়া আসিল । রূপলালেরও বিশেষ