পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88Ꮻ% ঝুলনী বলিল, “বুড়া তাহাকে লাঠি লইয়া মারিতে আসিয়াছে।” মুক্ত মালা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন রে?” - ঝুলনীর কল্পনাশক্তি মন্দ ছিল না। চটুপটু কথা বানাইয়া সে বলিয়া দিতে পারিত । আম নবদনে বলিল, “সারণক্ষণ নাকি আমি কেবল সাজ করে বসে থাকি, বড় বিবি হয়েছি।” মুক্তামালা চটিয়া বলিলেন, “বুড়ে হয়ে যেন ভীমরতি ধরেছে। ওর মত একটা ছেড়া গেঞ্জি পরে ছ’মাস সকলকে থাকতে হবে নাকি ? ওরে বেহারি, রূপলালকে ডাকৃত ” রূপলাল উপরে আসিয়া দাড়াইল । ঝুলনী তাড়াতাড়ি পাশের ঘরে গিয়া খোকার সঙ্গে খেলিতে বসিমা গেল। মুক্ত মালা তাড়া দিয়া বলিলেন, “হ্যা রে রূপলাল,দিন দিন তুই কি হচ্ছিস ? বউটাকে নাকি লাঠি নিয়ে মারতে গিয়েছিলি ? ঘরে যা করিস্ তা করিস, কিন্তু আমাদের বাড়ী ও-সব চলবে না। ও সমস্ত ছোটলোকমী আমি জুচক্ষে দেখতে পারি না।” রূপলাল বলিল, “বেয়াড়া চাল দেখলেও শাসন করব না বহুম ?” মুক্তামালা বলিলেন, “কি বেয়াড় চাল ? ভূত সেজে না থাকলেই তোমাদের সব বেয়াড়া হয় ? ছেলেপিলের ঝি, পরিষ্কার ত থাকতেই হবে।” রূপলাল আর কিছু না বলিয়া চলিয়া গেল। কুলী না জানি ছোট বহুমার কাছে কি বলিয়াছে। কিন্তু থাক, সে ছেলেমাতুষী করিয়াছে বলিয়া রূপলালও করিতে পারে না । ঘরের কথা পরের কাছে বলিয়া লাভ কি ? সে যদি নিজের স্ত্রীকে বসে না রাখিতে পারে, ত অন্যলোক আসিয়া কি তাহার সাহায্য করিবে ? তাহারা বরং হাততালি দিয়া হাসিবে । রূপলালের ঘরের মধ্যে যতই অশাস্তি হোক, সে এবং ঝুলনী আসিয়া বস্ব-পরিবারকে অনেকাংশে শাস্তিতেই রাখিয়াছিল। কৰ্ত্তারা আর চটচটি করিতেন না, বউ দুজনও নিশ্চিস্ত হইয়া ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে অশান্তির স্বত্রপাত হইল । প্রবাসী—আষাঢ়, ృ9ురిక [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড বড়বউ আয়াকে দিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন, খোকা খুকি কেহ তাহার ড্রেসিং টেবিল হইতে পাউডারের কৌটা উঠাইয়া আনিয়াছে কিনা। মুক্তামালা বিরক্ত হইয়৷ বলিলেন, “র্তারা ওঁর ঘরে গেলই বা কখন, আর পাউডারের কৌটাে নিলেই বা কখন ? খুকী ত অত উচুতে হাতই পায় না। দেখত রে ঝুলনী খুজে ।” ঝুলনী এধার ওধার সব খুজিয়া আসিল, বলিল, *নেই বহুমা।” বড়গিনী খানিকক্ষণ বক বক করিয়া চুপ করিয়া গেলেন, রাগটা পড়িল না বটে, তবে সামান্য জিনিষ লইয়া বেশী সোরগোল করিতে লজ্জা বোধ করিলেন । মুক্তামাল! বড়মামুযের মেয়ে, পাছে সে মনে করে যে দিদি গরীবের মেয়ে, সামান্য একটা জিনিষ গেলে ও সে ক্ষেপিয়া যায় । দুদিন পরেই আ বার একটা নূতন টার্কিশ তোয়ালে চুরি গেল। ইহাও বড়বউয়ের সম্পত্তি। তিনি চটিয়া আগুন হইয়া বলিলেন, “আমর! চোরের মুখে আগুন ! আমার ঘরটা খুব চিনে নিয়েছে।” তাহার আয় সৌরভী বলিল,“এ ঠিক ঐ ঝুলনী ছুড়ীর কাজ মা । বিবিয়ানা করার সাধ একেবারে ভরপুর, অথচ বুড়োর কাছে একট পয়সা পায় না, তাই এখন এই বিদ্যে স্বরু করেছে । বড়বউ বলিলেন, “যমের অরুচি ! নিজের মনিবের ঘর থেকে নিতে পারে না ! মরতে আসে আমার ঘরে । ওকে আর এখানে আসতে দিসনে ৷” কথাটা চাপা রহিল না, জানাজানিই হইয়া গেল । রূপলাল ঝুলনীকে একপালা গাল দিল, ঝুলনী কাদিয়া চোখ ফুলাইল এবং দুই জায়ের মধ্যে একটুখানি মনেমালিন্তের সূত্রপাত হইয়া রহিল । ইহার পর দিনকয়েক ঘর ঠাণ্ড রহিল। তাহার পর চুরি গেল অপেক্ষাকৃত দামী জিনিষ, ছোটবাবুর একটা টাই পিন। তিনি ত চটিয়া-মটিয়া স্ত্রীকে এক পালা বকিয়া দিয়া, কলেজ চলিয়া গেলেন, কিন্তু বাড়ীর গোলমাল সহজে খামিল না। মুক্তণমালা সব ক’জন ঝি চাকরকে ডাকিয়া বকিয়া ভূতঝাড়া করিলেন। একটা সাবান বা তোয়ালে গেলে কেহ মারা পড়ে না,