পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—দেশরক্ষাসম্বন্ধীয় আপত্তি 8ፃX বেশী সৈন্য দিয়াছিল, বাংলা প্রভৃতি দেশ খুব কম সৈন্য দিয়াছিল। - এই তথ্য ও যুক্তির জবাব যাহা দেওয়া হইয়াছে, সে সম্বন্ধে মৌন অবলম্বন করিয়া রিপোর্ট স্ববুদ্ধিরই কাজ করিয়াছেন। ইংরেজ-রাজত্ব স্থাপন ও বিস্তৃতির ইতিহাস হইতে দেখা যায়, যে, যখন ক্লাইব । প্রভৃতি সাম্রাজ্যস্থাপকেরা যুদ্ধ করিয়াছিল, তখন শিখ গুরখা পাঠান রাজপুত গাঢ়োয়ালী মরাঠা সৈন্য লইয় করে নাই, তাহাদিগকে তখন পাইবার উপায়ও ছিল না। মান্দ্রাজী বাঙালী ও ভোজপুরী সিপাহীরাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপনের অস্ত্রস্বরূপে ব্যবহৃত হইয়াছিল। তাহার পর যেমন ইংরেজ-রাজত্ব বিস্তৃত হইতে লাগিল, আধুনিক শিক্ষার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজ-শাসনের মৰ্ম্ম লোকে বুঝিতে লাগিল, সেই সঙ্গে সঙ্গে সেই সব অঞ্চল হইতে সৈন্য লওয়া বন্ধ হইতে লাগিল যে-সব অঞ্চলে ইংরেজরাজত্ব দীর্ঘতমকালস্থায়ী, এবং নুতন বিজিত প্রদেশ, দেশী রাজ্য, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও নেপাল হইতে সৈন্য সংগ্ৰহ করিবার রীতি বেশী করিয়া অবলম্বিত হইতে লাগিল । ইহার ফলে ভারতবর্ষের অধিকাংশ অঞ্চলে সৈন্যদলে যাওয়ার ইচ্ছা ও রীতি লুপ্ত হইয়াছে। ইহা লুপ্ত হইবার পর ইংরেজরা গত মহাযুদ্ধের সময় নিজেদের সঙ্কট অবস্থায় ভারতের সব প্রদেশ হইতে সৈন্য চাহিয়| যদি ষথেষ্ট না পাইয়া থাকেন, তাহা কাহার দোষ ? যদি সব প্রদেশ হইতে সিপাহী সংগ্রহের বাস্তবিক ইচ্ছা থাকে, তাহ হইলে সব প্রদেশে যুদ্ধবিদ্যা শিখাইবার —অন্ততঃ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদিগকে শিখাইবার—ব্যবস্থা কেন করা হয় না ? যাহা হউক, রিপোর্ট অতঃপর বলিতেছেন, যে, কেবল কয়েকটি অঞ্চল হইতে সিপাহী সংগৃহীত হওয়া সত্ত্বেও ভারতবর্ষের অ-যোদ্ধা প্রদেশগুলির কোটি কোটি লোক যে শাস্তিতে আছে অর্থাৎ যোদ্ধা জাতিদের সিপাহীদের দ্বারা আক্রান্ত ও অত্যাচরিত হইতেছে না, তাহার কারণ তাহাদের নায়ক অফিসাররা ইংরেজ এবং তা ছাড়া গোর সৈন্যদলও আছে। পূৰ্ব্বে পূৰ্ব্বে কোন কোন ইংরেজ অসভ্য ভাষায় কাল্পনিক শিখ বা রাজপুত সৈন্যদের মুখ দিয়া যে কথা বলাইত, সাইমন রিপোর্টে এস্থলে সভ্য প্রচ্ছন্ন ভাষায় সেই কথাই বলা হইয়াছে (৯৬-৯৮ পৃষ্ঠা )। যুদ্ধ করিবার প্রথা যত দিন জগতে থাকিবে, ততদিন ভারতবর্ষেরও সৈন্যদল রাখিবার প্রয়োজন হইবে, ইহা স্বীকায্য । এই সৈন্যদলে ভারতবর্ষের সকল প্রদেশ হইতে সৈন্য লওয়া দরকার, ইহাও স্বীকার্য্য। গত মহাযুদ্ধের সময় যে সকল প্রদেশ হইতে সৈন্য চাহিয়া ইংরেজ গবন্মেণ্ট ষথেষ্ট সৈন্য পান নাই, তাহার একটা প্রধান কারণ উপরে বলিয়াছি । আর একট। কারণ এই, যে, যে-যে প্রদেশে শিক্ষার বিস্তার বেশী এবং লোকদের গড় আয় বেশী, তথাকার লোকের ইংরেজের হুকুমে ইংরেজের উদ্দেশ্য সাধনার্থ যুদ্ধ করিয়া মল্লিতে রাজী নয়, এবং সিপাহীরা যে বেতন ও ব্যবহার পায় তাসুতং সঙ্কল্পনয়T দেশে স্বরাজ্য স্থাপিত হইলে দেশরক্ষার জন্য যুদ্ধ করিবার লোক উপযুক্ত বেতনে সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক ইংরেজনিন্দাভাজন বাংলাদেশ হইতেও পাওয়া যাইবে । ইংরেজ সেনানায়ক ও গোর সৈন্য আছে বলিয়াই সিপাহীর জু-যোদ্ধা প্রদেশগুলিকে আক্রমণ করেন, ইহা সত্য নহে। এক সময় ছিল, যখন ইংলণ্ডনামক ছোট দেশটি সাতটা রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং তাহার। পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করিত। স্কটল্যাণ্ড ইংলণ্ড পরস্পরকে আক্রমণ করিত। এখন সে দিন নাই। আগে আগে ভারত বর্ষের ভিন্ন ভিন্ন দেশে যুদ্ধ হইত বলিয়া এখনও বা অদূর ভবিষ্যতেও হইবে মনে করা ভুল। তাহা সত্য হইলে, ইংলণ্ড যে ভারতকে সভ্য করিয়া তুলিবার দাবী করেন, তাহা একেবারে মিথ্যা। ভারতীয় যোদ্ধা জাতিরা তথাকথিত অ-যোদ্ধা জাতিদিগকে অবজ্ঞা করে, এই কাল্পনিক কথা ইংরেজরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রটনা করিয়া থাকে। গান্ধী অ-যোদ্ধা বণিকজাতীয়, র্তাহার নেতৃত্ব স্বীকার করিয়া ভারতের যোদ্ধা অ-যোদ্ধা নানা জাতির ও ধর্মের লোক শুধু মৌখিক ও কাগজিক আন্দোলন করিতেছে না ; প্রাণ দিতেছে, অকথ্য ও দুঃসহ প্রহার ও অত্যাচার অমানবদনে অসামান্য সাহসের সহিত সহ্য করিতেছে এবং অসাধারণ সংযম ও নিয়মবাধ্যতা প্রদর্শন করিতেছে। যোদ্ধা সিপাহীদের সাহস