পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b-* প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড স্বজাতির প্রভুত্ব স্থাপন করিল। ইহারা আফঘান এবং স্বল্পী, স্বতরাং শিয়া পারসিকদের মহাশক্র । তাহার পর ঘিলজাই রাজা মাহমুদ গিয়া পারস্য দেশ আক্রমণ করিলেন । রাজধানী ইসফাহানের নিকট দুই পক্ষে যুদ্ধ হইল। পারসিক সৈন্য পঞ্চাশ হাজার, সঙ্গে চব্বিশটি বড় কামান । আফঘানের সংখ্যায় মাত্র বিশ হাজার আর সঙ্গে উটের পিঠে চাপান এক শত জম্বুরক বা লম্বা বড় বন্দুকবিশেষ ; অথচ পারসিকেরা পরাস্ত হইয়া পলায়ন করিল। শাহ ইসফাহানে অবরুদ্ধ হইয়া অন্নাভাবে আত্মসমপণ করিলেন ( ২১ অক্টোবর, ১৭২২),পারস্য দেশে আফঘানরা রাজত্ব আরম্ভ করিল এবং সাত বৎসর ধরিয়া -দেশ উৎসন্ন করিল। এই সাত বৎসরে দশলক্ষ প্রজার প্রাণ গেল,-“দের স্বন্দর প্রদেশগুলি মরুভূমিতে পরিণত হইল, আর কত মহামূল্য অট্টালিকা ভূমিসাৎ হইল । কিন্তু ইতিমধ্যে ভীরু অকৰ্ম্মণ্য হৃতরাজ্য শাহ হুসেনের পুত্র মির্জা তহমাম্প স্বদূর উত্তরে মাজেন্দ্রান প্রদেশে পলাইয়া গিয়া সেখানে নিজকে রাজা ঘোষণা করিয়া দেশ দখলের চেষ্টায় ছিলেন। পারস্যের বিপদ দেখিয়া পুরাতন শত্রু রুষ এবং তুকা উত্তরে ও পশ্চিমে নানা স্থান জয় করিয়া ফেলিল। তহমাম্প যুবক, বুদ্ধি ব। চরিত্রের বল নাই, তাহার উপর ইন্দ্রিয়সুখে মগ্ন । দেশের চারিদিকে এই বিপদের দিনে জাতীয় উদ্ধারকাৰ্য্য তাহার দ্বারা সম্পন্ন হইবার নহে। এবার পারস্ত চিরদিনের জন্য ধ্বংস হয় হয় । এমন সময় পারস্তের সৌভাগ্যে উদ্ধারের এক অভাবনীয় পথ খুলিয়া গেল, জাতীয় দলে এক অপূৰ্ব্ব শক্তিমান পুরুষসিংহ দেখা দিলেন। তিনিই পরে নাদির শাহ নামে বিখ্যাত হন । খুরাসান প্রদেশে একটি সামান্ত গ্রামে আফশার নামক তুর্কমান জাতির দলভুক্ত কির্কলু বংশে এক গরিব মেঘপালক ও চামড়ার জামাটুপী প্রস্তুতকারী দর্জির ঘরে নাদিরের জন্ম ( ১৬৮৮ )। র্তাহার বয়স যখন আঠার সেই সময় একদল উজবেগ দস্থ্য আসিয়া তাহাকে ও তাহার মাতাকে ধরিয়া লইয়া গিয়া তাতার দেশে দাস করিয়া রাখে। সেখানে মাতার মৃত্যু হইল, কিন্তু নাদির চারি বৎসর পরে পলাইয়া আসিয়া, খুরাসান প্রদেশের একটি ছোট জেলার প্রধান শহর অবিভাদ নগরে শাসনকৰ্ত্তার অধীনে চাকরি লইলেন এবং তাহার কন্যাকে বিবাহ করিয়া তাহার মৃত্যুর পর তাহার পদ পাইলেন। নাদিরের ঈশ্বর-দত্ত প্রতিভা যুদ্ধে ও লোকশাসনে প্রকাশ পাইল । খুরাসানের পাঠান-রাজার সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় তিনি দক্ষ্যদল জুটাইয়া দেশ লুঠ ও জয় করিয়। নিজ বল বাড়াইলেন, এবং ক্রমে কিলাৎ-ই-নাদিরি দুর্গ এবং খুরাসানের রাজধানী নীশাপুর নগর দখল করিলেন, এবং তাহার পরেই স্বদেশের রাজা মিজর্ণ তহমাম্পের সঙ্গে যোগ দিয়া ( ১৭২৭ ) দেশ উদ্ধারের কেন্দ্র ও নেতা হইয়া দাড়াইলেন । দুই বৎসরের মধ্যে নাদির যুদ্ধের পর যুদ্ধে আফঘানদের হারাইয়া পারস্য দেশ হইতে তাড়াইয় দিলেন এবং এরূপ কঠোরভাবে পশ্চাদ্ধাবন করিলেন যে, কান্দাহারে যাইবার সমস্ত পথ হত আফঘান স্ত্রী-পুরুষ বালক-বৃদ্ধের মৃতদেহে ভরিয়া গেল । একজন বিল জাইও প্রাণ লইয়া দেশে ফিরিতে পারিল না। পারস্তে তাহারা যে সাত বৎসর ধরিয়া অত্যাচার করিয়াছিল তাহার পূর্ণ প্রতিশোধ হইল, আবার পারসিকের মাথা তুলিতে পারিল, নাদির স্বদেশবাসীর আহলাদের ও গৰ্ব্বের বস্তু হইলেন । কৃতজ্ঞ রাজা শাহ তহমাম্প অৰ্দ্ধেক পারস্য দেশ নাদিরের হাতে দিয়া তাহাকে সুলতান উপাধি এবং নিজ নামে টাকা বাহির করিবার অধিকার দান করিলেন । আফঘানর। বিতাড়িত হইল বটে, কিন্তু এখনও তুর্ক হইতে পারস্তের পশ্চিম প্রদেশগুলি উদ্ধার করিতে বাকী । নাদির সেই কাৰ্য্য আরম্ভ করিলেন এবং তুক সৈন্যদলকে কয়েকবার যুদ্ধে হারাইয়া দিলেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ পূৰ্ব্বপ্রাস্তে হিরাট অধিকার করিতে যাওয়ায় তাহার অনুপস্থিতিতে শাহ তহমাস্প তুকী-সৈন্য আক্রমণ করিতে গিয়া বুদ্ধি ও বীরত্বের অভাবে পরাস্ত হইয়া নাদিরের উদ্ধার-করা সমস্ত, পশ্চিম প্রদেশগুলি হারাইলেন। দেশের লোক র্তাহাকে ধিক্কার দিতে লাগিল, পারসিক সেনানায়কেরা একবাক্যে বলিয়া উঠিলেন যে, তহমাম্পকে দেশের নেতা করিয়া,