পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] SAA AMA MS MAMMMAAASAASAA AAAS রাখিলে আবার জাতীয় পরাধীনতা ও দুর্দশ ফিরিয়া আসিবে । তাহারা নাদিরকে রাজা করিতে চাহিলেন । কিন্তু নাদির সম্মত হইলেন না। ২৬ আগষ্ট, ১৭৩২ তহমাস্পকে রাজ্যচু্যত করিয়া তাহার আট মাসের শিশুপুত্র আব্বাসকে শাহ বলিয়া ঘোষণা করা হইল, নাদির হইলেন তাহার অভিভাবক ও প্রতিনিধি, অর্থাৎ দেশের প্রকৃত শাসক । চারি বৎসর পরে বালক-রাজা মারা যাওয়ায় নাদির প্রকাশ্যভাবে সিংহাসনে বসিলেন ( ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৭৩৬ ) ; তাহার উপাধি হইল শাহান-শাহ নাদির শাহ ; পূৰ্ব্ব উপাধি ছিল তহমাস্প কুলী খাঁ । নাদিরের প্রতিভা সৰ্ব্বতোমুখী, একদিকে রাজনীতির চাল চালিতে সন্ধি ও ভেদের বন্দোবস্ত করিতে তিনি যেমন দক্ষ, তেমনি অপরদিকে যুদ্ধবিদ্যায় সে যুগে কেন, সমগ্র ইতিহাসে এসিয়াখণ্ডে র্তাহার সমকক্ষ কেহই ছিল না। ঠিক কোনদিকে সৈন্য চালনা করা দরকার, কখন যুদ্ধ করিতে হইবে এবং কখন হটিয়া আসা বা অপেক্ষ করা উচিত, কামানের ব্যবহার ও উন্নতি এবং ঠিক পরিমানে বন্দুকচ ও অশ্বারোহী সৈন্য সমাবেশ করা, ইউরোপীয় ( ফরাসী ) গোলন্দাজদিগকে নিযুক্ত করা অথচ তাহাদের নিজ আজ্ঞায় চালনা করা, স্বয়ং সেনাদলের সঙ্গে থাকিয়া যুদ্ধে নেতৃত্ব করিয়া তাহাদের মধ্যে প্রতিপত্তি ও খ্যাতির বলে তাহদের পূজ্য দেবতা হওয়া—এ সব গুণই তাহার ছিল । এজন্য পারস্য দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ইংরাজ ইতিহাস-লেখক ( তিনি নিজে ব্রিগেডিয়ার জেনারল ) নাদিরকে “এসিয়ার নেপোলিয়ন” বলিয়াছেন। রাজা হইয়াই নাদিরের প্রথম কাজ হইল পারস্তের হৃত প্রদেশগুলি উদ্ধার করা। তুর্কদের হারাইয়া দিয়া তাহাদের হাত হইতে আর্মেনিয়া ও জর্জিয়া কাড়িয়া লইলেন ; রুষের সঙ্গে সন্ধিবিগ্রহের ফলে কাস্পিয়ান হ্রদের তীরের প্রদেশগুলি ফিরাইয়া পাইলেন ; আরবদের হাত হইতে পারস্য-উপসাগরের দ্বীপগুলি পুনরুদ্ধার করিলেন । দেশস্থ দস্থ্যজাতিগুলিকে খুব হারাইবার পর নিজ সৈন্যদলে ভৰ্ত্তি করিয়া নেতার শাসনে রাখিয়া তাহাদের অত্যাচারের পথ বন্ধ করিলেন । অবশেষে ১৭৩৭ সালে একমাত্র অবশিষ্ট প্রদেশ, কান্দাহার জয় নাদির শাহের অভু্যদয় 8b-S) میمیہ سمہ. করিতে নাদির রওনা হইলেন । সেখানে আফঘান শাসন বজায় থাকিলে পারস্ত্যের ভবিষ্যৎ বিপদের কারণ রহিবে । আর, ভারতের অগণিত ধনরত্ব লুণ্ঠন করিতে হইলে কান্দাহারের পথ দিয়াই যাইতে হইবে । এক বৎসর অবরোধের পর, ১২ মার্চ ১৭৩৮ কান্দাহার দুর্গ তাহার হাতে আসিল । তিনি উহা সম্পূর্ণ ধ্বংস করিয়া উহার দুই মাইল পূৰ্ব্বদিকে ময়দানের মধ্যে এক নূতন কান্দাহার স্থাপন করিলেন এবং তাহ প্রাচীর দিয়া ঘিরিয়া দিলেন । ইহার নাম হইল “নাদির-আবাদ” । অতুলনীয় যোদ্ধা নাদির শাহ রাজনীতিতেও অতি গভীর বুদ্ধিশালী ও দক্ষ ছিলেন। কান্দাহার আফঘানদের দেশ, স্বতরাং উহ। জয় করিবার পর পরাজিত আস্তর শাখাদিগকে কোনরূপ শাস্তি দিলেন না, লুণ্ঠন করিলেন না, সমস্ত বন্দীদিগকে ছাড়িয়া দিয়া, তাহাদের প্রধানদিগের বার্ষিক বৃত্তি নিদিষ্ট করিয়া, নানাপ্রকারে দয়া ও সৌজন্য দেখাইয়া, তাহদের যোদ্ধাদিগকে নিজসৈন্যদলে চাকরি দিয়া, এই সমস্ত আজন্মযোদ্ধার জাতিকে বশ করিয়া ফেলিলেন, নিজের ভবিষ্যৎ দেশবিজয়ের ভৃত্য করিলেন। অথচ পাঠানদের সংযত রাখিবার জন্য আবদালী বংশকে তাহাদের আদিবাসস্থান খুরাসান হইতে আনিয়া কান্দাহার প্রদেশের রক্ষার ভার দিলেন এবং কান্দাহারের আদিম ঘিলজাইদের উঠাইয়া লইয়৷ খুরাসানে বসতি করাইলেন । এই দুই শাখ আফঘান হইলেও পরস্পর চির-বিরোধী । নাদির নিজে পারস্যদেশীয় হইলেও জাতিতে পারসিক অর্থাৎ আর্য্য নহেন, তিনি তুর্কমান। আসল পারসিকের খুব বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পকলায় লেখনী চালনে জগদ্বিখ্যাত, কিন্তু যুদ্ধে প্রায়ই দুৰ্ব্বল এবং ভীরু। পারস্যরাজের প্রধান সম্বল কিজিলবাশ ( ‘লালমাথা' অর্থাৎ লালটুপী পর ) সৈন্য ; ইহারা তুর্কস্থান হইতে পারস্তে আনিয়া স্থাপিত করা সাতটি তুকী শাখার বংশধর, অদম্য বীর। কিন্তু ধৰ্ম্মে শিয়া হওয়ায় সফবী রাজগণের এবং পরে নাদিরের, অতি ভক্ত অম্লচর হয় । ইহার পর নাদিরের ভারতবিজয় । সে এক অতি রোমাঞ্চকর, কিন্তু শিক্ষাপ্রদ কাহিনী ।