পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8వశి অমর কীৰ্ত্তি জগতে রাখলেন কিন্তু । ভাবতে গেলেও গা শিউরে ওঠে। এক আধ দিন নয় ত দুমাস ধরে তিলে তিলে দেহ বিসর্জন ! ভাব দেখি, দেখ দেখি একবার—” মমতার ভারি হাসি পেল। মহাপুরুষ তিনি, দধীচির মত আত্মত্যাগী সে বিষয়ে তার সন্দেহ নেই। কিন্তু রাজকারাগারে নাই হোক, অবরোধ কারাগারে নিরুপায় বিদ্রোহীর মত অনশনে সেও ত প্রতিদিনে তিলে তিলে নিজেকে হত্য করছে, কে তার খবর রাখে ? সে ত এক নয়। এ-রকম কত আছে। কত মেয়ে ঠিক এমনি সঙ্কটে, এমনি অবস্থায়, দিনে দিনে নিজের কামনা বাসন স্থখশাস্তিকে হত্যা করছে । অনশনে প্রাণ দিচ্ছে । কিন্তু ক’জন তা নিয়ে মাথা ঘামায় ? কে-ই বা সে হতভাগিনীদের মৃতদেহ ঘাড়ে নিয়ে এমন সমারোহ করে বেড়ায় ? জগৎ হয়ত জানতেও পারে না যে সে কেন মরল, কি জন্য মরল ! এই ত তার নিজের স্বামীই সে খোজ রাখেন না, তখন আপরে রাখবে কি করে ? এই হুজুগে যিনি মেতে বেড়াচ্ছেন তার স্ত্রী যে ক’বেল উপোস করে তা জানবারও বোধ হয় তার আবশ্যক নেই । উপার্জন না করলে সংসার চলে না। মাঝে মাঝে চাকরীর দরখাস্ত করা ছাড়া আর কোনো চেষ্টাও ত তার নেই। ভাবেন হয়ত, সংসার চলছে ত, যে করে হোক ! কিন্তু সে যে কি করে চলচে, তা তার অন্তর্যামী ছাড়া আর কে খবর রাখে ? শক্ত খুটাঁর মত বসে মমতা জলন্ত প্রদীপটার দিকেই চেয়ে ছিল । কখন যে স্বামী চলে গিয়েছেন, কখন যে দালানের প্রদীপটা নিবু নিবু হয়ে এসেছে,ত। তার খেয়ালও ছিল না । হঠাৎ পাশের বাড়ীর একটা বিশ্রী বেয়াড়। হাসি ও বাহবার শব্দে তার চমক ভাঙল । অন্ধকার দালানের দিকে চোখ পড়তেই তার সর্বাঙ্গ অজানা শঙ্কায় কাটা দিয়ে উঠল। কোনো মতে উঠে গিয়ে সদর দ্বারটা বন্ধ করে এসে সে শিশুতুটির পাশে উপুড় হয়ে শুয়ে বিষম ঘামতে লাগল। -- বুকের ভিতরও তার ঢিপ ঢিপ করে আওয়াজ হচ্ছিল। পিপাসায় তার আকণ্ঠ শুকিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উপবাস প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড ক্লিষ্ট শ্রাস্ত দেহে আতঙ্কে সে এমন অভিভূত হয়ে পড়েছিল যে উঠে এক গ্লাস জল খেতেও তার সাহস হ’ল না । জনশূন্ত বাড়ীটায় মনে হ’ল যেন অন্ধকারটাই আরও ঘনিয়ে এসে তাকে ঘিরে ফেলবার জন্য হাত বাড়াচ্ছে । সেই অতল তমসাচ্ছন্ন আধারে এমন একটা কিছু আছে ধা সে চেনে না—জানে না —তবুও আতঙ্কে ভয়ে সৰ্ব্বাঙ্গ তার আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছে। কণ্ঠে একটা অস্ফুট শব্দ পর্য্যন্ত আর বাহির হচ্ছে না । 8 পরদিন সকালে মমতা কলতল হতে সবেমাত্র স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে বের হয়ে আসছে, এমন সময় "এই যে বৌদি’ বলে জমিদার-পুত্র নরেন্দ্রনাথ এগিয়ে এসে তার পায়ের গোড়ায় ঢিপ করে প্রণাম করল । সঙ্কোচে লজ্জায় বিস্ময়ে হতবুদ্ধিপ্রায় হয়ে মমতা ভিজে কাপড়টাই যথাসম্ভব সংবরণ করতে লাগল। মুখে তার তখনও জলকণাগুলি মুক্তাবিন্দুর মতই লেগে ছিল, ভিজে চুলের বোঝ। তখনও সোজা হয়নি, তা দিয়েও জল ঝরছিল । নরেন্দ্র প্রভাতী রৌদ্র-ফলিত ধৌত স্বন্দর মুখখান একটু ভাল করেই দেখতে দেখতে বলে উঠল, “হঠাৎ এসে বৌদি বলে ডাকলাম বলে রাগ করলেন নাকি ?” “না বস্থন ৷” সে একখান মাদুর দালানে পেতে দিল । মাচুরটার উপরে জাকিয়ে বসে নরেন্দ্র বলল, "সেদিন যেমন একটু দরকারে পড়েই আপনি আমার কাছে গিয়েছিলেন, আমিও তেমনি দরকারে পড়েই আজ আপনার কাছে এসেছি।” মমতার কণ্ঠে একটাও ভাষা ফুটল না যে জিজ্ঞাসা করে অতবড় জমিদার-পুত্রের তার মত দুঃখীর কাছে কি দরকার থাকতে পারে। কেবল নতনেত্রে দাড়িয়ে রইল। নরেন্দ্র তার দিকেই চেয়ে আবার বলল, “ভাবছেন বুঝি আমার আবার আপনার কাছে কি দরকার থাকতে পারে ? কিন্তু বৌদি এ আপনি ছাড়া আর কারও দ্বার সম্ভব নয়। তাই আপনার কাছেই এলাম। আমরা একটা সখের থিয়েটার খুলছি জানেন ত ? তাই একজন অভিনেত্রীর দরকার। আপনি যদি সে অভাব দূর করেন,