পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫e২ প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড তিনি যখন যাহা সত্য বলিয়া বুঝিতেন, তাহাই লিপিবদ্ধ করিতেন । স্বয়ং বন্দ্যঘটায় রাট ব্রাহ্মণ হইয়াও আদিশূর যে বন্ধ্যঘটায়গণের বীজপুরুষকে কান্তকুক্ত হইতে আনিয়া বঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন, কেবল কুলপঞ্জিকার সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করিয়া রাখালদাস একথা স্বীকার করিতে প্রস্তুত ছিলেন না । এইরূপ সকল প্রকার সংস্কারবজ্জিত বিশুদ্ধচিত্তে সত্যের সাধন আমাদের দেশের ঐতিহাসিকসমাজে সুলভ নহে। o রাখালদাসের প্রধান কীৰ্বি, রাখালদাসের অক্ষয় কীৰ্ত্তি—মহেন-জে-দড়োতে অতি প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক যুগের সভ্যতার নিদর্শনের আবিষ্কার । রাখালদাসের মহেন-জে-দড়োতে ভগ্নস্ত প খননের পূৰ্ব্বেই হরপ্পায় এই শ্রেণীর পুরাবস্তু আবিষ্কৃত হইয়াছিল। কিন্তু এই সকল বস্তু যে প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন তাহা রাখালদাসষ্ট প্রথম অল্পমান করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন এবং তিনিই তৎপ্রতি পুরাতত্ত্ব-বিভাগের অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিলেন। রাখালদাসের আবিষ্কারের গুরুত্ব বুঝিতে হইলে তাহার প্রাচীনত বিবেচ্য। এই আবিষ্কারের পূৰ্ব্বে বৈদিক সাহিত্য ছাড়া অবিসম্বাদিত রূপে মেীয্য যুগের পূর্বকালের উন্নত সভ্যতার কোন নিদর্শন আমাদের হস্তগত ছিল না। এই আবিষ্কার হিন্দুসভ্যতার ইতিহাসকে খৃষ্ট পূৰ্ব্ব ৩০০ অব্দ হইতে এক ধাক্কায় খৃষ্ট পূর্ব ৩০০০ অব্দে পৌছাইয়া দিয়াছে। হরপ্পায় এবং মহেন-জো-দড়োর ভগ্নাবশেষ যে অতি প্রাচীন তাহার এক প্রমাণ এই ভগ্নাবশেষের মধ্যে লোহার চিহ্নও পাওয়া যায় নাই, কেবল ফ্লিন্ট পাথরের ছুরি এবং তামার তৈয়ারী অস্ত্র পাওয়া গিয়াছে। সুতরাং সিদ্ধান্ত হইয়াছে, যে যুগে মানুষ লোহার অস্তিত্ব অবগত ছিল ন, লোহার অভাবে তামার অস্ত্র ব্যবহার করিত, এবং যে যুগ, তামা আবিষ্কারের পূৰ্ব্বে ব্যবহৃত পাথরের অস্ত্রও একেবারে পরিত্যক্ত হয় নাই, হরপ্পার এবং মহেন-জো-দড়ের ভগ্নস্ত প সেই অতি প্রাচীন পাষাণ-যুগের এবং তাম্রযুগের সন্ধিক্ষণের সভ্যতার পরিচায়ক। খৃষ্টাব্দেব হিসাবে এই সভ্যতার বয়ঃক্রম কত তাহাও নিৰ্দ্ধারিত হইয়াছে। হরপ্পায় এবং মহেন-জে-দড়োতে অপরিচিত অক্ষরের লেখাযুক্ত বহুসংখ্যক সচিত্র মোহর (seal পাওয়া গিয়াছে। অনেক দিন পূৰ্ব্বে ঠিক এই প্রকার একটি মোহর পারস্যের অন্তর্গত স্বসার ভগ্নাবশেষের মধ্যে পাওয়া গিয়াছিল এবং আর একটি মোহর কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে মেসোপটেমিয়ার অন্তর্গত কিশের ভগ্নাবশেষ খনন-কালে পাওয়া গিয়াছে। এই দুইটি মোহর যে স্বসায় এবং কিশে তৈয়ারী হয় নাই, কিন্তু হরপ্পা—মহেন-জে-দড়ে অঞ্চল হইতে তথায় নীত হইয়াছিল, এই প্রকার সিদ্ধান্ত অনিবাৰ্য্য । স্বসার এবং কিশের ভগ্নস্ত,পের যে স্তরে এই সিন্ধুদেশীয় মোহর আবিষ্কৃত হইয়াছিল, নানা প্রমাণের বলে সৰ্ব্বসম্মতিক্রমে পুরাতত্ত্ববিদগণ সেই স্তরের সময় নিৰ্দ্ধারণ করিয়াছেন আল্পমানিক খৃষ্ট পূর্ব ৩০০০ অব্দ। সিলমোহর ছাড়া অন্যান্য বস্তুও মেসোপটেমিয়ার ভগ্নস্ত পনিচয়ের ঐ একই স্তরে পাওয়া গিয়াছে যাহা খুব সম্ভব সিন্ধুদেশ হইতে সেখানে আমদানী করা হইয়াছিল। ঋক্ বেদ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতির রচনা-কাল লইয়া পণ্ডিত-সমাজে বিস্তর মতভেদ থাকিলেও, মহেন-জে-দড়ো এবং হরপ্পা নগরী যে খৃষ্টাব্দের আরম্ভের ৩০০০ বৎসর পূৰ্ব্বে বিদ্যমান ছিল, এই বিষয়ে মতভেদের অবকাশ নাই । সেই সময় এই নগরীদ্বয়ের সভ্যতা নিকটবৰ্ত্তী দেশের সভ্যতার তুলনায় সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র আকার ধারণ করিয়াছিল। স্বতরাং এ সভ্যতাকে ধার করা সভ্যতা অথবা আগন্তুকগণের আনীত সভ্যতা বলা যায় না ; এই সভ্যতা সিন্ধুনদের তীরেই বিকাশ লাভ করিয়াছিল। মহেন-জো-দড়ে এবং হরপ্পার সভ্যতা যেমন প্রাচীন, তেমনই উন্নত ছিল, একথাও সৰ্ব্ববাদিসম্মত । এই সমুন্নত সভ্যতা যখন আমদানী করা নয়—দেশজ, তখন স্বীকার করিতে হইবে, আহমানিক ছয় সাত হাজার বৎসর পূৰ্ব্বে সিন্ধু-তীরে সভ্যতার স্বত্রপাত হইয়া থাকিবে । পক্ষান্তরে টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর তীরে যে স্বমেরীয় সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়াছে তাহ দেশজ নহে, আগন্তুকগণের আনীত। এখন জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে, স্কুমেরীয় সভাত কি সিন্ধুদেশ হইতে গত ঔপনিবেশিকগণের স্বষ্টি ? প্রাগৈতিহাসিক সিন্ধুদেশের সভ্যতা এবং