পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড লাগিয়াই আছে, তাহার সেবাতেও কিছু কম সময় যায় না । - মাকে ঘরে ঢুকিতে দেখিয়া কুটু নাকীস্বরে চীৎকার করিয়া উঠিল, “যাও আমি খাব না। এত দেরি কেন করলে ?” . শশিমুখী তাহাকে সাস্তুনা দিতে দিতে বলিতে লাগিল, “কোথায় বাবা দেরি ? রোজ ত এমনি সময়েই খাস, তোর বাবাও ত এখনও আসেন নি।” হুটু বলিল, “বাবা আজ বিস্কুট না আনলে দেখাব মজা। রোজ রোজ খালি ধাপ্পা মারে আজ না কাল, আজ না কাল। আজ আর ওসব শুনছি না।” শশিমুখী এ কথার উত্তর না দিয়া, কোণ হইতে ঝাটা লইয়া ঘর ঝাট দিতে লাগিল। দুইটি ঘরই এক ধরণের। এ ঘরে একথানা বড় তক্তপোষ, আর একটা অতি পুরাতন খাট পাতা, কোণে একটা আল্‌না, দেওয়ালের গায়ে গোটা-দুই ক্যালেণ্ডারের ছবি, আর কাঠের ফ্রেমে বাধান একটা আয়না। খাটের বিছানা, আলুনার কাপড় সবই মলিন, শ্ৰীহীন। ঘরে দুইটা জানালা আছে । একতলার ঘর, গলি হইতে ভিতর পর্য্যস্ত দেখিতে পাওয়া যায় বলিয়া, জানালা দুইটিতে পুরান কাপড়ের পরদ দেওয়া। দুইটি পরদাই ধোয় ও ধূলায় একেবারে কাল। প্রথমে যে তাহাদের কি রং ছিল, তাহা বুঝিবার কোনো উপায় নাই। ঘর ঝাট দেওয়া শেষ করিয়া শশিমুখী আবর্জনাগুলা এক টুকরা কাগজে জড়াইয়া জানলা দিয়া বাহিরে ফেলিয়া দিল। তাহার পর আলনার কাপড় গোছাইবার বা বিছানা ঝাড়িবার কোনো চেষ্টা না করিয়াই সে আবার ফিরিয়া রান্নাঘরে গিয়া ঢুকিল । কুন্তী তখন উনানে ভাতের হাড়ি চড়াইয়া চাল ধুইতেছিল। শশিমুখী বলিল, “যা তুই একটু মুটুর সঙ্গে গল্প করগে যা। আমি দেখছি ওসব ।” রান্নাঘরের সামনে দিয়াই দোতলায় যাইবার সিড়ি। দেখা গেল একটি যুবক আস্তে আস্তে উপরে উঠিড়েছে, তাহার পিছন পিছন একজন চাকর একটা টিনের বাক্স কধে করিয়া চলিয়াছে। কুন্তী বলিল, “দেখ মা, সেই বাবুট আবার মিষ্টি বিক্রি করতে এসেছে। আচ্ছ, ভদ্রলোক হয়ে কেন এ রকম করে ? চাকরী করে না কেন ?” শশিমুখী বলিল, “ভালই করে। চাকরী দশগও পড়ে রয়েছে কি না ? ভিক্ষে করার চেয়ে খেটে খাচ্ছে সেই ভাল ।” মা মেয়ের কথা স্পষ্ট শুনিতে না পাইলেও কথার শব্দ বোধ হয় যুবকের কানে আসিয়া থাকিবে, সে মাঝ সিড়িতে থামিয়া কুন্তীর দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “খুকী, তোমরা কিছু মিষ্টি নেবে ? মিহিদানা আছে, সন্দেশ আছে, লালমোহন আছে।” সখ করিয়া মিষ্টি কিনিয়া খাইবার অবস্থা কুন্তীর জন্মাবধি দেখা অভ্যাস নাই । সে তাড়াতাড়ি ঘাড় নাড়িয়া জানাইল, তাহদের কিছু প্রয়োজন নাই। লোকটি উপরে উঠিয়া গেল। শশিমুখী রান্নার জোগাড় করিতে বসিল, কুন্তী ভাইয়ের কাছে চলিয়া গেল । কুম্ভীর বাবা অটলবিহারীও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ী আসিয়া পৌছিল। রান্নাঘরের সামনে দাড়াইয়া বলিল, “এক গেলাস জল দিয়ে যাও ত। বাইরে একটি লোক এসে বসে আছে।” শশিমুখী জল গড়াইতে গড়াইতে জিজ্ঞাসা করিল, “কোন পাওনাদার নাকি ?” অটল বলিল, “পাওনাদার ছাড়া আর কে তোমার বাড়ী আসতে যাবে ? খাবার আছে নাকি কিছু ?” শশিমুখী বলিল, “কোথেকে আসবে খাবার ? তোমার জন্যে কোনোমতে দুখানা রুটি করে রেখেছি।” অটল বলিল,“থাক, পরে খাব এখন, শুধু জলই দাও।” সে জলের গেলাস লইয়া বাহিরে চলিয়া গেল । শশিমুখী নিজের কাজ করিতে লাগিল। শোবার ঘর হইতে থাকিয়া থাকিয়া মুটুর নাকে কান্ন, কুন্তীর সাস্তুনার শব্দ আসিয়া পৌছিতে লাগিল । আধঘণ্টা খানেক পরে অটল আসিয়া বলিল, “দাও গো তোমার রুটি । নিতান্ত থিদেয় নাড়ীগুলো টো চে করে, তাই এসব ছাইভস্ম থেতে পারি, নইলে মাহুষে বারোমাস ত্রিশদিন এই অখাদ্য মুখে দিতে পারে না।”