পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QSやり প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড গজমুক্ত পাইতেছি। যথা, প্রকৃতি খণ্ডে (৬৪), দুর্গার ধ্যানে, নাসা দক্ষিণভাগেন বিভ্ৰতিং গজমৌক্তিকম। দেবীর দক্ষিণ নাসায় গজমুক্ত । গণেশ খণ্ডে (৪), নাসিকার রূপহেতু অমূল্য রত্ন। শ্ৰীকৃষ্ণ জন্মখণ্ডে (৬৯) নাসাগ্রে গজমুক্ত। এই মুক্ত, নাক-মুক্ত নামে অলঙ্কার। ফুলের আকৃতি হইলে নাক-ফুল । নাসিকার মধ্যস্থলে মুক্তার লোলকও আছে ৷ যথা, শ্ৰীকৃষ্ণ (৪), গজেন্দ্রমুক্তালঙ্কারৈনাসিকণমধ্যরাজিতৈ: শ্ৰীকৃষ্ণ (১৫), তন্মধ্যস্থলশোভা-স্কুল মুক্তাফলোজ্বলা নাসিক । কবির কালে নখ আসে নাই, বেশ-র আসিয়া থাকিবে । পুরাণখানির বর্তমান সংস্করণ ষোড়শ খ্ৰীষ্ট-শতাদের পুর্বে হয় নাই। কিন্তু আরও পরে নয় কেন, তাহ বিবিধ প্রসঙ্গে দৃষ্ট হইবে। বিবিধ প্রসঙ্গ :-কবি রাঢ়ী শ্রেণীর স্মাত ব্ৰাহ্মণ ছিলেন । কারণ তিনি সামবেদের কৌধুমশাথামতে দেবদেবীর পূজা করিতে বলিয়াছেন। কদাচিৎ যজুর্বেদের কাণু শাখারও নাম করিয়াছেন । কবির কালে ব্রত ও পূজা বর্তমানের অপেক্ষা লুনি ছিল । শিবরাত্রি, উত্তর ফান্ধনীযুক্ত পূর্ণিমায় দোলন, চৈত্র মাসে অথবা মাঘ মাসে [ ? ] শিবের তুষ্টির নিমিত্ত বেত্রপাণি হইয়া নর্তন [ গাজন ] শ্রীরামনবনী, বৈশাখে শক্ত ও জলদান, পূর্ণিমায় রাস, মাস শুরু পঞ্চমীতে সরস্বতী পুঞ্জ। শুরু সপ্তমী-ত রবিবার ও সংক্রান্তি হইলে সুর্য পূজা । [ কবি শ্ৰীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী ভুলিয়াছেন । ] নারীদিগের নিমিত্ত প্রতি মঙ্গলবারে মঙ্গল চণ্ডিক, প্রতি শুক্ল ষষ্ঠীতে ষষ্ঠীপূজা, শুক্লাষ্টমীতে দুর্গ পূজা, জ্যৈষ্ঠ কৃষ্ণচতুর্দশীতে সাবিত্রী ব্রত, আষাঢ় সংক্রাস্তিতে মনসা পূজা (প্র॥৩৪)। একাদশী সম্বন্ধে লিখিত আছে, শুক্ল অথবা কৃষ্ণপক্ষে একাদশী করিবে ( প্র । ২৭ )।--অন্যত্র ( কু। ৭৬), রথস্থ জগন্নাথ, ভাদ্র মাসে বুলন, উত্তরায়ণে কোণার্কে [ কণারকে ] সুর্যপূজা, ইত্যাদি। এখানে কবি যেন কোনও পুরাণ হইতে এই কয়েকটি জানিয়াছিলেন ।---কবি 'গ্ৰাম্য দেবতা, গ্রামদেবী এবং বোধ হয় ‘ধর্মঠাকুর" দেখিয়াছেন, কবির ‘ধর্ম দেবতার বাহন শ্বেত অশ্ব (ত্র । ৫ ), পত্নী মূর্তি । ইনি যমরাজ নহেন, ব্রহ্মী বিষ্ণু মহেশ্বরের সমান। ‘শুভ চণ্ডী এখন "হুবচনী’ নামে পূজিত হইতেছেন। মঙ্গলচণ্ডী ষোড়শ বর্ষীয়, শ্বেতচম্পকবর্ণভা, ঈষৎহাস্তপ্রসন্নাস্তা, জগদ্ধাত্রী । ইনি বাসলী নহেন, বাসলী उठग्नकृन्नैौ । কবির কালে রাঢ়ে মুসলমান অধিকার হইলেও, হিন্দু রাজাও ছিলেন । তিনি রাজার ও রাজ্যের কাল জ্ঞান নিমিত্ত তাম্র ঘটিকা" নির্মাণের উপদেশ দুইবার দিয়াছেন ।•••কবি দ্বারকায় শিবির-নির্মাণচ্ছলে দুর্গ ও গৃহনির্মাণ সম্বন্ধে যৎকিঞ্চিৎ উপদেশ দিয়াছেন (কৃ। ১০৩)। তিনি বাস্তুর পূর্বে বা দক্ষিণে পুষ্পোদ্যান, এবং ঈশানে, পূর্বে, পশ্চিমে কিম্ব উত্তরে জলাশয় করিতে বলিয়াছেন। প্রাচীন বাস্তু শাস্ত্রমতে ঈশানে কিম্বা পূর্বে জলাশয়। আমরা বলি, “পূবে ইসি পশ্চিমে বাশ।”...কবি বাস্তু চতুরস্ৰ (দীর্ঘ প্রন্থে সমান) এবং তন্মধ্যে আবাস ( রাজার “আওয়াস" ) উত্তর দক্ষিণে দীর্ঘ করিতে বলিয়াছেন ।... “গৃহ ও প্রাকারের মধ্যভাগে দ্বার না করিয়৷ কিঞ্চিৎ নুনাধিক করিবে ।" । এই প্রাচীন বিধি উত্তম ছিল। অধুনা নাবুঝির লোকে মাঝে দ্বার বসাইতেছে। ] “গৃহ নির্মাণে শান্মলী, তিস্তিড়ী, হিন্তাল, নিম্ব, সিন্ধুবার [ নিসিন্দ ], ডুমুর, ধুস্তর, বট এবং এরও বৃক্ষের কাষ্ঠ নিষিদ্ধ।”...এই বিধি-নিষেধের দুই মুল। (১) অসার কাঠ, এবং (২) বট, অশ্বথ নিম্বাদি মাঙ্গল্য-বৃক্ষ ছেদন বর্জনীয়।-- কবি পুরাণ-পাঠক ছিলেন, পুরাণ-কথকের অভুক্তি ও পুনরুক্তি ছাড়িতে পারেন নাই। লক্ষ ও কোটির নুন সংখ্যায় তাহার তৃপ্তি হইত না । মুক্ত, মাণিক, হীরা, ইত্ৰনীল, পদ্মরাগ, মরকত প্রভৃতি যাবতীয় রত্ন ও রত্নেক্সসার দ্বারা অসংখ্য মন্দির ও লক্ষ গবাক্ষ নির্মিত হইয়াছিল। ‘ইষ্টক মণি-নির্মিত [ কবির দেশে প্রস্তর ছিল না ], প্রাঙ্গণ ইন্দ্রনীল দ্বারা পরিষ্কৃত পদ্মরাগের। রাজমার্গ ও বীর্থী রত্নখচিত, কপাটে কঠিন দৃঢ় অর্গল ও কীলক, ইত্যাদি। পৃথিবীর মধ্যে স্তমস্তক মণি একটি ছিল। কবি নগর নির্মাণে স্তমস্তকও লাগাইয়াছেন। তিনি এই সকল মণির নাম কোথায় পাইয়াছিলেন, কে জানে ?••• কবি বস্ত্র মধ্যে “সুগন্ন বস্ত্র”, “ক্ষৌম বস্ত্র" কদাচিৎ দেখিতেছেন। তিনি যে বস্ত্র, বোধ হয় পচিশ ত্রিশ স্থানে লিখিয়াছেন, সেটি "বহ্নিশুদ্ধ" । সে বস্ত্র জলে ও ক্ষারে শুদ্ধ ও নির্মল হইবার নয়, জ্বলদগ্নিতে শুদ্ধ হয় । এইরূপ বস্ত্র "মার্কণ্ডেয় পুরাণে" একবার মাত্র পাইয়াছি। সে বস্ত্র প্রাণিজ, উদ্ভিজ্জ কিংবা ধাতুজ নয় । খনিজ অগ্নি-অপৃষ্ট (asbestos) দ্বারা নির্মিত। কবি মার্কণ্ডেয় পুরাণ পড়িয়া “বহি শুদ্ধাংশুক” দ্বারা দেবীর বসন করিয়াছেন । কবি উক্ত পুরাণের "একাকী হয়মারহ জগাম গহনং বনমূ” স্থানে নিশায়াং হয়মারহ জগাম গহনং বনমৃ’ লিখিয়াছেন ( প্র । ৬২ )। কবি নারীকে যুগা বস্ত্ৰ দিয়াছেন, কফুক দেন নাই।--ব্রহ্মবৈবর্তের কবি স্বদেশের বসনভূষণ পরিবর্তন করেন নাই। তিনি নারীর সমস্তের অধোদেশে উজ্জ্বল সিদুরবিন্দু, ললাটে ও গণ্ডে সিন্দুর চলন অগুরু কুঙ্কুমের বিন্দু, তিল, তিলক, পত্রক, পত্রাবলী রচনা করিয়া মুখশ্ৰী সুন্দর করিয়াছেন। তিলক রচনা, কলা-বিশেষ, যার তার কর্ম নয়। কোন মুখে কেমন তিলক সাজে, তাহ গুণীই বলিতে পারেন। ইদানী বঙ্গদেশে তিলক রচনা উঠিয়া যাইতেছে, প্রাচীনকালের লোগ্রকুস্কমের পরাগ স্থানে 'পাউডার আরস্ত হইয়াছে। তিলের আকারে ছোট হইলে তিল, বড় হইলে তিলক । তমাল ও তিলক বৃক্ষপত্রের আকারে পত্রক, পত্রাবলী’, ‘চিত্রপত্রক । কেহ কেহ তিলক বৃক্ষকে তিল গাছ ভাবিয়া বিষম ভ্রম করেন। তিলক গাছ অরণ্যে জন্মে । বাকুড়ায় প্রচুর। শীতকালে আমের মঞ্জরীর স্থায় মঞ্জরী হয় ; তদ্বারা সরস্বতী দেবীর পুজা করা হয়।-- কবি কুত্রাপি তামুল বিস্তুত হন নাই। সেকালে কপূর স্ববাসিত পরিপক পর্ণ ভোগসার গণ্য হইত। তাল-করষ্ক", তাম্বল সজ্জা লোকের সঙ্গে থাকিত। তাম্বল জিহ্বাজাডাচ্ছেদকর" । কবি বলেন, নিত্য তাম্বল ভোজন করিলে জর আসে না (ব্র। ১৬ )। সেকালে তামুক ছিল না, নস্ত ছিল না, চা ছিল না, সিগ্রেট ছিল না । তাম্বল চর্বণ দ্বারা যৎকিঞ্চিৎ মাদকসে শান্তি দূর করিতে হইত। কবিকঙ্কণ হাতে পান-গুআ দিয়া কর্মে নিযুক্ত করিয়াছেন, অদ্যাপি গ্রামে পান-ওয়া দিয়া মানীর মান রাখিতে ও মানীকে নিমন্ত্রণ করিতে হয়। কবিকুল তাম্বল সেবনে এত তৃপ্ত হইতেন যে ১৩ (অঙ্ক ) না বলিয়া "তাম্বল গুণাঃ বলিতেন। বলিতেন, তাম্বলের ত্রয়োদশ গুণ & & স্বর্গেও দুলভ । ইদানী লাট দরবারেও পাণ । কিন্তু সেকালে অতির ছিল না, ছিল চন্দন অগুরু কস্তুরী। এই পুরাণে পুনরুক্তি এত আছে যে, পড়িতে বিরক্তি বোধ হয় । কখকের মুখে শুনিলে হয় ত ইহা গুণের হইত।••• কবির কালে দেশের দুর্দিন চলিতেছিল। প্রজার ধর্মভাব শিথিল, রাজা থাকিয়াও নাই, দেশ শাসন করিতে পারিতেন না। তখনকার যবন জাতি দুরন্ত প্রকৃতি ছিল। কবি লিখিয়াছেন, "স্লেচ্ছ জাতি বলবন্ত, দুরন্তু, অবিন্ধকৰ্ণ (?), কুর, নির্ভর, রণদুর্জয়, শৌচাচারবিহীন, দুধর্ষ, ধর্মবর্জিত" (ব্র ॥১০ )। তিনি লিখিয়াছেন, রাজা ও দৈব হইতে যে গো-পালন করিতে ন পারে, সে গো-হত্যা করে (প্র ॥৩৯ )। এই রাজা অবশ্ব হিন্দু ছিলেন না । বোধ হয়, কবির কালে “শূন্ত পুরাণে"র