পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড শশিমুখী খানিকটা কথা বলিতে পাইয়াই যেন বাচিয় গেল। যুবক সত্যই তাহার কোনো বিশেষ সাহায্য করিতে পারিবে, এ আশা সে করিতেছিল না । তবু একটা মামুষেও যে তাহার দুঃখ বুঝিল, ইহাই যেন ঢের। সন্ধ্যাবেল অটল আপিস হইতে আসিয়া বলিল, “ওগে এদিকে শুনে যাও । কুন্তী না হয় ততক্ষণ রায় দেখুক।” শশিমুখী কুন্তীকে ভাতটা একটু দেখিতে বলিয়া স্বামীর জন্য সামান্য যে জলখাবারটুকু জোগাড় করিয়া রাখিয়াছিল, তাহাই হাতে করিয়া ঘরে আসিয়া চুকিল। কুটুর আজ শরীর কিঞ্চিং ভাল, সে বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া গলির উপরের সরু রোয়াকটাতে বসিয়া ছিল । অটল বলিল, “মাড়োয়ারী ব্যাটাকে ত অনেক হাত পা ধরে রাজী করেছি কিস্তিতে টাকা নিতে । মাসে পঞ্চাশ টাকা করে দিতে হবে। আমার মাইনের থেকে দেওয়া যে অসম্ভব তা বুঝতেই পারছ। কুন্তীর হারট। দাও, এ মাসটা তাই বেচে দিয়ে দিই, তারপর পরের ভাবনা পরে ভাবব ।” শশিমুখী স্নানমুখে উঠিয়া গিয়া বাক্স খুলিয়া ছোট একটি হার বাহির করিয়া আনিল । স্বামীর হাতে দিয়া বলিল, “এই নাও, সাড়ে তিন ভরি অন্ততঃ আছে, ঠকে এস না যেন 1* অটল জলখাবার খাইয়া উঠিয়া গেল, শশিমুখী আবার রায়াঘরে ফিরিয়া আসিল । অটল ফিরিল অনেক রাত্রেশ ছেলেমেয়ে তখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। শশিমুখী অটলের ভাত ঢাকা দিয়া রাখিয়া, খাটের উপর চুপ করিয়া বসিয়া আছে। নিজে সে খায় নাই, খাইবার ইচ্ছাও নাই। দুশ্চিন্তায় তাহার সমস্ত দেহমন বিকল হইয়া উঠিয়াছিল। ছয়খানা দশটাকার, নোট স্ত্রীর হাতে দিয়া অটল বলিল, “এই নাও, অনেক দর-কষাকযি করেও এর বেশী পেলাম না । সোনা ভাল নয়, পানমরত বাদ যাবে, কত হাজার রকম কথা । পঞ্চাশ টাকা ত কালই আমি নিয়ে যাব, বাকি টাকাও তুমি খরচ কোরো না, আমার একটা ক্ষঙ্গি মাখা এসেছে।” جسم هی نہیے ہمی کی جگمھا ۔حم۔م۔محم> تھی.sعہ جسمعی مع স্বামীর ফন্দি শুনিতে তখন শশিমুখী কোনই উৎসাহ দেখাইল না। উঠিয়া গিয়া টাকা বাক্সে তুলিয়৷ রাখিল । তাহার পর শুইয়া পড়িল । পরদিবস পঞ্চাশটা টাকা লইয়া অটল চলিয়া গেল । খাওয়া-দাওয়া সারিয়া, শশিমুখী রান্নাঘরেই বসিয়া ছেলের দুটো ছেড়া সার্ট শেলাই করিতে আরম্ভ করিল। যুবক আসিবে কিনা তাহ ঠিক বুঝিতে পারিতেছিল না। আর আসিলেই বা কি ? তাহাদের যে সমস্যা, ইহার সমাধান একরকম অসম্ভব । বেলা বারোটা আন্দাজ যুবক আসিয়া হাজির হইল । আজ তাহার সঙ্গে বাক্স-কাধে চাকরটিও আছে । তাহাকে বলিল, “তুই উপরে গিয়ে গিরিমার কাছে রসগোল্লা দিয়ে আয়।” চাকর দোতলায়'টলিয় গেল । শশিমুখী একখানা পিড়া অগ্রসর করিয়া দিয়া বলিল, "বসুন।” যুবক বসিয়া বলিল, “আমার নাম কেশব রায় । জাতিতে কায়স্থ, বি-এ পাশও করেছি। কিন্তু দেখছেন ত আজকাল ময়রার ব্যবসা ধরেছি। আমার এতে কোনো লজ্জা নেই, যদিও বন্ধুবান্ধব অনেকে এখন আমার সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা বোধ করে। অবিশ্যি ৩০ টাকার চাকরী করে রোজ তাদের কাছে টাকা ধার চাইতে গেলেও তারা আমাকে খুব বেশী সমাদর করত না । কাজেই ব্যাপারটা আমার পক্ষে একই। পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করায় কোনো লজ্জা আছে বলে মনে হয় আপনার ?” -- শশিমুখী বলিল, “লজ্জা কিসের ? এই যে শুকিয়ে মরছি, আজ বাদে কাল ভিক্ষে করতে যাব, এতেই লজ্জা । ভগবান হাত পা দিয়েছেন, খাটতে দোষ কি ?” কেশব বলিল,“সে কথাটা বোঝেন যদি তাহলে কোনো ভাবনাই নেই। আমি আজ ছানা, চিনি, ঘি সব নিয়ে এসেছি। মিষ্টি তৈরি করতে কিছু-না-কিছু জানেন ত ? আমায় তৈরি করে দিন । কাল সকালে নিয়ে যাব, সমস্ত দিন বিক্রী হবে, সন্ধ্যার পর আপনাকে টাকা দিয়ে যাব।” g শশিমুখী একটু সঙ্কুচিতভাবে বলিল, “অনেকদিন