পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(t.88 শয্যায় শুয়ে ধুকছে। বুড়ি পিসিমা তার একপাশে বসে মাল জপ করছেন, যেন ভগবানের নিকট একাগ্রতার সঙ্গে ভ্রাতুপুত্রের আয়ুভিক্ষ করছেন। দৰ্ম্মার বেড়ার ফাক দিয়ে অস্তোন্মুখ সূর্য্যের শেষকিরণ-সম্পাতে রোগীর মুখখানাকে উজ্জল দেথাচ্ছিল । তোমার মনে আছে নিশ্চয় যে, মা তার ছাত্রজীবনেই মারা যান। ছোট ভাইটি দাদার অমৃথ কিসে সারবে তারই ভাবনায় ব্যাপৃত, অথচ ছেলিমামুষ সে, জানে না ষে, তার দাদীর জীবনপ্রদীপের তৈল প্রায় নিঃশেষ হয়েই এসেছে। শশাঙ্ককে মনোধোগ দিয়েই পরীক্ষা করলাম। কিন্তু বুঝলাম আর বেশী দেরী নেই। দীর্ঘকাল রোগে ভূগে, অনঙ্গরে অৰ্দ্ধাহারে অমান্তর্ষী পরিশ্রমে অচিকিৎসায় তার জীবনের মূলে মরণের টানটা খুব স্পষ্ট হয়েই আমার চোখে ধরা পড়ল। আমায় দেখেই সে তার রোগজীর্ণ বিশীর্ণ হাত দুখানি প্রাণপণ চেষ্টায় বাড়িয়ে দিল, কিন্তু দুৰ্ব্বল দেহ তার ভারটুকুও বইতে পারল না। জড়িত স্বরে কি বললে, তার সব কথা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না, তবে তার অস্পষ্ট কথার মধ্যে থেকে এইটুকু বুঝতে পারলাম যে, মুতু্যকালে আমায়ু দেখতে পেয়ে সে ভারি খুশী হয়েছে, তোমায় শেষ দেখ দেপতে পেলে আরও খুশী হত । কিন্তু তুমি তখন কোথায় । আগেই বলেছি, শশাঙ্কর বুড়ি পিসিম একধারে বসে বুঝি একমনে ভগবানকেই ডাকছিলেন । র্তার সে আকুল প্রার্থনার সব কথা আমাদের কানে পৌছয় নি। শশাঙ্কর প্রাণে যেন কোনে দুঃখই নেই, কোনে আশা-আকাঙ্ক্ষাও নেই—তার মুখ দেখে আমার তাই মনে হ’ল । আমার মুখে চোখে কি তখন অবিশ্বাসীর হাসি ফুটে উঠেছিল ?—কেন-ন, সঙ্গে সঙ্গেই সে তার ভীত কম্পিত হাতখান আস্তে আস্তে আমার হাতে তুলে দিয়ে বিজড়িত স্বরে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা ভাই, সত্যি ভগবান আছেন ? আমি কি জবাব দিব ? ঈশ্বরের অস্তিত্বে আমার কোনদিনই আস্থা ছিল না, ঈশ্বর সম্বন্ধে কিছু ভাবাও কোনদিন প্রয়োজন বলে মনে করি নি। কিন্তু তাই বলেই কি এখন আমি বলতে পারি যে, প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ { ৩৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড সত্যিই তিনি নেই? কিন্তু তবু আমার বার বার এই কথাই মনে হ’ল যে,হয় ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেহাতই অলীক, নেহাতই মানুষের মন-গড় ; দুর্বল মানব জীবন-সংগ্রামে পরাজিত হয়ে নিজেকে স্তেীক দেবার জন্যে ঈশর ঈশ্বর’ করে মাথা ঘামায় { • • • - আমার মতামতের যে তার কাছে তখন কি মূল্য ত৷ আমার বেশ জনি ছিল । হয় ত সে মনে করেছিল যে, আমি অনেক পড়াশুনা করেছি, অনেক ভেবেছি, অভিজ্ঞত আমার প্রচুর, আমি সম্ভবত তার প্রশ্নের ঠিক ঠিক জবাব দিতে পারব, এই ভরসাতেই সে আমায় এ প্রশ্ন করল। কিন্তু আমি কোনরকম জবাবই দিলাম না কেন-ন৷ জবাব আমার মুখ দিয়ে বেরল না, কেমন একটা সঙ্কোচ এসে আমায় বাধা দিল । আমায় নীরব থাকতে দেখে পিসিমার মুখে চোখে একটা তীব্র ঘৃণ স্বম্পষ্ট হয়ে উঠল, সে দৃষ্টি যেন আমাঃ বলছিল, দস্থ্য, আমার এই মরণপথযাত্রী পুত্রের শেষ বিশ্বাসটুকুও নষ্ট করলে ! - শশাঙ্ক ব্যাকুলবৃষ্টিতে আমার দিকে চাইল, তার সেই আয়ত দৃষ্টির মধ্যে একটা আতঙ্কের ছায়া ধনিয়ে এণ । আমার জবাবের উপরই তার সব নির্ভর করছিল। ধেই আমি জবাব দিতে যাব, ঠিক সেই মুহূৰ্ত্তে তার হাতে মৃত্যুর কম্পন যেন অনুভব করলাম। আর কিছু বলা হ’ল না, সঙ্গে সঙ্গেই তার হিমশীতল হাতখানা অসাড় হয়ে তক্তপোষের পাশ দিয়ে ঝুলে পড়ল। পিসিম চীৎকার করে কেঁদে উঠলেন। শশাঙ্কের বৃদ্ধ পিতা অপলক দৃষ্টিতে শশাঙ্কের মৃতদেহের দিকে চেয়ে রইল। ছোট ভাইটি তখনও জোড়হাতে শূন্যে তাকিয়ে বসে ছিল। উঠে দাড়িয়ে টলতে টলতে দরজার স্বমুখে গেলাম । তারপর কেমন করে যে সে বাড়ী থেকে চলে এসেছিলাম, আজ আর সে কথা মনে নেই। বাইরে তখন ভারি গরম— রৌদ্র খ খ করছিল, তারিণী মুদীর দোকানে তাদের সে বুড়ে সরকার তখন সবে কাশীদাসের মহাভারতখান। খুলে বসেছিল। কোনো রকমে বাড়ীতে গিয়ে পৌছুলাম । সারাক্ষণ আর ঘরের বার হইনি, দরজা-জানলা বন্ধ করে আচ্ছরের মত বসে রইলাম। এক এক সময় মনে হচ্ছিল,