পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qbrや প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৭ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড সমস্তটা জুড়ে তারই চিত্রকরের হাতের অণক তুলি-টান রেখা-চিষ্ট্রের বই, বলিদ্বীপীয় পদ্ধতিতে কিরাতার্জনীয়ের ছবি খান যাটেক এই বইয়ে আছে। প্রথম চিত্রে প্রভামণ্ডল-বেষ্টিত ইন্দ্র চারজন অঙ্গরাকে পাঠাচ্ছেন অৰ্জুনের তপোভঙ্গ করতে ; তার পরের চিত্রগুলিতে অপরাদের আগমন, আর স্নান আর বেশভূষা ক’রে প্রস্তুত হওন ; তার পরের কতকগুলি চিত্রে - যোগাসনে উপবিষ্ট অর্জনের মন টলাতে অঙ্গরাদের বিফল চেষ্টা ; অপরাদের ব্যর্থমনোরথ হয়ে দেবরাজের কাছে প্রত্যাবর্তন ; ইন্দ্রের তথন শিবের কাছে যাওয়া ; বরাহমূৰ্ত্তি ধ’রবে যে দৈত্য, তার অর্জুনের তপোর্ভূমির কাছে আগমন, বিরাট বরাহ মূৰ্ত্তি ধারণ, অর্জুনের বাণদ্বার এই বরাহকে আঘাত, কিরাতবেশী শিবের আগমন, অৰ্জুনের সঙ্গে কলহ আর যুদ্ধ, আর শেষে শিবের পাশুপত অস্ত্র দান ; তারপরে ইন্দ্র-কর্তৃক অর্জুনের নিকটে দূতপ্রেরণ, আর ইন্দ্রের কাছে অৰ্জুনের গমন। এই সমস্ত বিষয়ে অনেকগুলি ছবি। পরেকার ঘটনারও কতকগুলি ছবি এই বইয়ে আছে—সে ঘটনাগুলি সংস্কৃত মহাভারত থেকে একটু পৃথক । সংস্কৃত মহাভারতে আছে অৰ্জুনের সাহায্যে ইন্দ্র নিবাত-কবচ নামে কতকগুলি রাক্ষসকে সংহার করেন-ব্যস্; তার পরে অর্জুনের মৰ্ত্তে পুনরাগমন । দ্বীপময় ভারতে নিবাত কবচ নামটা নিয়ে ‘নত কুবচ’ বা ‘ক্কচ’ অর্থাৎ ‘নাথ বা রাজা কুবচ’ ব’লে এক অস্থর-রাজের কল্পনা করা হয়েছে ; এই অমুরকে ধ্বংস করবার জন্ত ইন্দ্র অর্জুনের পরামর্শ আর সাহায্য চান। স্বর্গে স্বপ্রভা নামে একজন অঙ্গর অর্জুনের প্রেমের পাত্রী হন ; অর্জুনের পরামর্শে স্বপ্রভা নত-কচ’ কে মোহাবিষ্ট করবার জন্য অস্থর-রাজের প্রাসাদে গিয়ে উপস্থিত হ’ল, নত-কচ’ স্বপ্রভাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে অবরুদ্ধ ক’রে রাখলে,—আর পরে স্বপ্রভার ইঙ্গিতে অর্জন এসে অস্বরকে সংহার করলেন। তারপরে অৰ্জ্জুন স্বপ্রভাকে নিয়ে দেবরাজের কাছে ফিরে এলেন, ইন্দ্র খুশী হ’য়ে স্বপ্রভাকে অর্জুনের হাতে সমর্পণ করলেন। ছবির বইখানিতে নিবাতর্কবচ সংহার করবার জন্য অর্জুন অীর স্বপ্রভা ইন্দ্রের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসছেন, “ তারপরে স্বপ্রভা নিবতকবচের সামনে উপস্থিত হ’য়েছেন, নিবাতকবচের আদেশ মত এক পরিচারিক। স্বপ্রভাকে প্রাসাদে নিয়ে যাচ্ছে—এই পৰ্য্যস্ত কতকগুলি ছবি আছে। এই বইখানি আমি প্রশংসার দৃষ্টিতে রাজার বৈঠকখানায় বসে উলটে পালটে দেখি । রাজা এটা আমায় দিতে চাইতে আমি একটু ফাফরে পড়ি, কিন্তু যখন তিনি জানালেন যে প্রতিদানে দেশ থেকে তাকে রামায়ণ আর মহাভারত পাঠিয়ে দিলে তিনি খুশী হবেন, তখন দেউএস্ আর বাকের পরামর্শে রাজার এই দান আমি গ্রহণ করি। রাজা বইখানির উপরে রোমান-মালাইয়ে র্তার আর আমার নাম লিখে দিলেন, বইখানি যে তংকত্ত্বক উপহৃত তাও লিখে দিলেন । এই ছবির বইখানি আমার বলিদ্বীপ-ভ্রমণের একটি অমুল্য স্মারক হিসাবে আর বলিদ্বীপের চিত্রশিল্পের একটি অতি সুন্দর নিদর্শন হিসাবে আমার কাছে আছে। পরে দেশে ফিরে এসে আমি রাজাকে আমার প্রতিশ্রুত বই পাঠিয়ে দিই - ংস্কৃত রাজা বুঝবেন না, তা দেবনাগরীতেই হোক ব: বাঙলা অক্ষরেই হোক—আর সংস্কৃত মহা ভারত দুলভ গ্রন্থ– তাই প্রবাসী কাৰ্য্যালয় থেকে প্রকাশিত বাঙলা কাশীদাসী মহাভারত আর কৃত্তিবাসী রামায়ণ পাঠিয়ে দিই ; বইখানিতে রোমান মালাইয়ে এগুলি যে সংস্কৃত নয়, বাঙলা অনুবাদ, তাও লিখে দিই। রামায়ণ মহাভারতের এই সংস্করণ দুটি নন্দলাল বস্থ প্রমুখ আধুনিক ভারতের শ্রেষ্ঠ রূপকারদের আঁকা রঙীন ছবিতে ভরা—এই ছবিগুলি বলিদ্বীপের হিন্দুরাজার পক্ষে চিত্তাকর্ষক হবে অনুমান ক’রে পাঠাই ; ছবিগুলির নীচে যথাঞ্জন মালাই ভাষায় তাদের অtশয় লিখে দিই। সঙ্গে অন্য বইও দুএকখানা পাঠাই । ( এই রকম রামায়ণ মহাভারত বলিদ্বীপে অন্যত্রও পাঠিয়েছিলুম ) । আর অভিধান আর ব্যাকারণ দেখে দেখে তৈরী ক’রে ক’রে মালাইয়ে একখানি চিঠি ও রাজাকে লিখি। পরে রাজার কাছ থেকে তার উত্তরও পাই।—ফরাসী পণ্ডিত অধ্যাপক ক্রযুক্ত সিলভ্য। লেভি আর দু একজন বাঙালী ভ্রমণকারী যারা পরে বলিদ্বীপে কারাঙ-আসেমে যান, রাজা তাদের এই রামায়ণ আর মহাভারত দেখিয়েছেন শুনেছি।