পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪থ সংখ্যা ] এদিকে নগেন্দ্রবাবুর স্ত্রী যে গহন বিক্রয় করিয়া ছেলেদের সাহায্য করিয়াছেন, তাহা সহরময় রাষ্ট্র হইয়া গিয়াছে। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কানেও একথা উঠিয়াছে। শুনির অবধি তিনি নগেন্দ্রবাবুর উপর বড় কঠোর আচরণ করিতেছেন । ইতিমধ্যে একদিন কার্য্যোপলক্ষে সাহেব থাসকামরায় নগেন্দ্রবাবুকে তলব করিয়াছিলেন। পূর্ব পূর্ব বারের মত র্তাহাকে বসিতে অনুরোধ করেন নাই। আমলার মত *াড়াইয়া থাকিয়৷ এবার সাহেবকে কাজ বুঝাইয়া দিতে হইয়াছিল। কয়েকদিন পরে নগেন্দ্রবাবুর একটা রায়, জজ সাহেব উণ্টইয়। দিলেন । এই উপলক্ষে নগেন্দ্রবাবুর দোষ না থাকিলেও, কার্য্যে ভুল ধরির সাহেব আমলাগণের সমক্ষেই নগেন্দ্রবাবুকে অভদ্রভাবে কটুক্তি করিলেন । নগেন্দ্রবাবু কৰ্ম্মত্যাগ করিবার জষ্ঠ প্রস্তুতই হইয়াছেন। কলিকাতায় গির। আইন পরীক্ষা দিয়া, ওকালতী করিবেন, মাঝে মাপে স্বামী স্ত্রীতে এ বিষয়ে জল্পনা কল্পনা হইয়া থাকে । মাসখানেকের মধ্যেই কৰ্ম্ম ত্যাগ করিবেন ইহাই আপাততঃ স্থির হইয়াছে। * জজ সাহেব কর্তৃক ছেলেদের আপিল ডিসমিসের দুই এক দিন পরে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব তাহাকে কুঠিতে ডাকাইয়া পাঠাইলেন। পূৰ্ব্বে স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়। মাঝে মাঝে তিনি ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবকে সেলাম করিতে যাইতেন, ইদানীং আর যান নাই । সেদিন প্রভাতে পোষাক পরিয়া, গাড়ী করিয়া, নগেন্দ্রবাবু সাহেবের কুঠিতে উপস্থিত হইলেন। নিজ কার্ড পাঠাইয়া দিলেন। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের রীতি ছিল, হাকিম কিম্বা বড় জমিদার আসিলে আপিস কামরায় তাহাদিগকে অপেক্ষা করাইতেন। চুনাপুটদরের লোক আসিলে তাহাদিগকে বারান্দার বেঞ্চে বসিয়া থাকিতে হইত। আঞ্জ চাপরাশি ফিরিয়া তাহাকে আপিস কামরায় না লইয়া গিয়া সেই বেঞ্চিতে বসিতে অনুরোধ করিল ! সেখানে কয়েকজন চুনাপুট পুৰ্ব্ব হইতেই বসিয়াছিল। তাহদের সহিত একাসনে না বসিয়া নগেন্দ্রবাবু পায়চারি করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। বুঝিলেন, সাহেব তাহাকে ইচ্ছা করিয়া অপমান করিতেছে। 弱 কিয়ৎক্ষণ বেড়াইবার পর ভিতর হইতে একজন চাপরাশি ছুটির বাহির হইয়। বলিল—“বাবু, জুতাক আওয়াজ মত করিয়ে, সাহেব গোস্সা হোতা হয়। বেঞ্চপর বৈঠিয়ে ।” দত্তে ওষ্ঠ দংশন করিয়া নগেন্দ্রবাবু বেঞ্চে উপবেশন করিলেন। চুনাপুটাগণ তাহাকে দেখিয়া সসম্ভ্রমে একটু সরিয়া বসিল। 够 ইতিমধ্যে আরও দুইজন সেলামাথাঁ আসিয়া বেঞ্চে বসিল । নগেন্দ্রবাবু রুমাল বাহির করিয়া মুহুর্মুহু কপালের ঘাম মুছিতে লাগিলেন। ক্ৰোধে তাছার কণ্ঠরোধ হইয়া সাসিতে লাগিল । ক্রমে সাহেব ছোট হাজরী সারিয়া জাপিস কাময়ায় আসিলেন । খালাস Je O প্রথম ডাকিয়া পাঠাইলেন নগেন্দ্রবাবুকে লয়। যাহার। নগেন্দ্রবাবুর পুৰ্ব্বে আসিয়াছিলেন, তাহাদেয় একে একে ডাক পড়িল। যাহারা পরে আসিয়াছিলেন তাহদেরও ডাক পড়িল । শেষে নগেন্দ্রবাবু, একা বেঞ্চে অধিষ্ঠান করিতে লাগিলেন। এই সময়টা তাহার যে কি ভাবে কাটিয়াছিল তাহ। তিনিই জানেন এবং তাহার ইষ্টদেবতাই জানেন । এই সময়ের মধ্যে নগেন্দ্রবাবু দন্তে দন্ত দৃঢ়বদ্ধ করিয়া প্রতিজ্ঞ করিলেন, কৰ্ম্মত্যাগ করিবেন এক মাদ পরে নহে অদ্যই। অবশেষে নগেন্দ্রবাবুর ডাক পড়িল । তিনি ক্রোধে মাতালের মত টলিতে টলিতে সাহেবের কামরায় প্রবেশ করিলেন । অন্ত দিনের মত সাহেব আজ উঠিয়া দাড়াইয় তাহণয় করমর্দন করিলেন না। “গুড মর্ণিং সার ।" । “গুড মথিং বাবু।” বাবু।--অন্তদিন হইলে সাহেব বলিতেন--নগেন্দ্রবাবু। সাহেব বিলক্ষণ জানিতেন, শুধু “বাবু বলিয়া সম্ভাষিত হইলে পদস্থ বাঙ্গালী অপমান লোধ করে । নগেন্দ্রবাবু ইহাও লক্ষ্য করিলেন। কিন্তু তাহার মন কৰ্ত্তব্য স্থির করিয়া লইয়াছিল, এই আঘাতে কোনও নুতন বেদন অনুভব করিলেন না । - সাহেব চুরুট মুখে করিয়া বলিলেন---“সহরে এখন স্বদেশীর অবস্থা কিরূপ ?” নগেন্দ্রবাবু বলিলেন---“ভালই।” “শুনিয়া সুখী হুইলাম। ইহা বিস্কিট মোকৰ্দমায় কঠিন শাস্তির সুফল ।" নগেন্দ্রবাবু মনে মনে একটু হাসিলেন, বলিলেন-- আপনি বোধ হয় আমার কথাটা ভুল বুঝিয়াছেন। ভালই--অর্থাৎ স্বদেশীর পক্ষে ভালই, গভর্ণমেন্টের পক্ষে নয়। সেই মোকৰ্দমার পর হইতে লোকের স্বদেশী পণ দৃঢ়তর হইয়াছে।” সাহেব যেন একটু আশ্চৰ্য্য হইয়া নগেন্দ্রবাবুর মুখপানে চাহিলেন । বলিলেন---“তবে ভালই কেন বলিলেন? আপনিও একজন স্বদেশী নাকি?” নগেন্দ্রবাবু গৰ্ব্বিতভাবে বলিলেন "স্বদেশী আন্দোলন হইয়া অবধি এক পয়সার বিলাতী জিনিষ আমার গৃহে আসে নাই।” সাহেবের মুখ ও কর্ণ ক্রোধে লাল হইয়া উঠিল । তিনি জানিতেন, অনেক সরকারী কৰ্ম্মচারী লুকাইয়া লুকাইয়া স্বদেশীয়তা রক্ষা করে, কিন্তু সাহেবের সাক্ষাতে এমন করিয়া দপ শু কেহ করে না। তিনি বুঝিলেন যে এই ঔদ্ধত্য প্রকাশ করিয়া, নগেন্দ্রবাবু সদ্যপ্রাপ্ত অপমানের প্রতিশোধ লইতেছেন। স্ববুদ্ধি উড়ায় হেসে এই নীতির অনুসরণ করিয়া সাহেব বলিলেন--- ই৷ আমি শুনিয়াছি, বাঙ্গালী মহিলার। স্বদেশী বিষয়ে পুরুষগণের অপেক্ষাও দৃঢ়তর।” বলিয়। সাহেব একটু