পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক মনোবিজ্ঞান শ্ৰীহরিপদ মাইতি, এম্-এ মনস্তত্বের আলোচন অতি প্রাচীন কাল হইতে চলিয়া আসিতেছে। পুরাতন দর্শন ও ধর্মগ্রন্থে, কামনা, প্রত্যক্ষ, স্মৃতি প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগ ও সেই সেই মানসিক অবস্থা ও ক্রিয় সম্বন্ধে আলোচনা দেখা যায়। ইহা সহজেই কল্পনা করা যাইতে পারে যে, বহির্জগতের ঘটনার প্রতি মাহুষের প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণের সঙ্গে সঙ্গেই অন্তর্জগতের প্রতিও তাহার দৃষ্টি আকৃষ্ট হইয়াছিল। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় এই যে, মনোবিদ্যার ইতিহাস অতি প্রাচীন হইলেও মনস্তত্ত্বের প্রকৃত অনুসন্ধান ও আলোচনা অতি অল্প দিন হইল আরম্ভ হইয়াছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের প্রবেশ সৰ্ব্ব শেষে। মাত্র পঞ্চাশ বৎসর পূৰ্ব্বে ভুণ্ড সাহেব (Wundt ) লাইপ জিগে মনোবিজ্ঞানের প্রথম পরীক্ষাগার স্থাপন করেন । কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে মনোবিজ্ঞান দ্রুত উন্নতি লাভ করিয়াছে । অন্যান্য বিজ্ঞানের স্থায় আধুনিক মনোবিজ্ঞানও পরীক্ষামূলক। কাৰ্য্যকারিতার দিক দিয়া ইহা অন্যান্য বিজ্ঞানের সমকক্ষ বিবেচিত ন হইতে পারে, কিন্তু ইহার বিজ্ঞানত্বে আজ কেহই সন্দিহান নহেন। দর্শন ও মনোবিদ্যা মনোবিজ্ঞানের ইতিহাস আলোচনা করিলে দেখা যায়, অন্যান্ত বিজ্ঞানের ন্যায় ইহাও এক সময়ে দর্শনের অঙ্গীভূত ছিল । ইহার আলোচ্য বিষয় দর্শনের একটি প্রধান তথ্য । আয়ার স্বরূপ সম্বন্ধ আলোচনা কালে দার্শনিককে অনেক স্থলে মনস্তত্বের কথা তুলিতে হয় এবং নিজ মত প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য চিত্তবৃত্তির বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইতে হয়। এই কারণে অল্পদিনের মধ্যেই মনস্তত্ব দার্শনিকের ‘খাসকামরার’ বস্তু হইয়া দাড়াইল ও তিনি নিজে একাধারে দার্শনিক ও মনোবিদ হইলেন। ইহার ফলে দর্শনের অীভূত অন্যান্ত বিদ্যার তুলনায় মনোবিদ্যার যেমন এক পক্ষে প্রথমে কিছু সুবিধা হইয়াছিল, অপর পক্ষে আবার কিছু অসুবিধাও হইয়াছিল। মনস্তত্ত্বের বিশেষ আলোচনা চলিতে লাগিল । খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞানাদি যখন দর্শন হইতে আপনাদিগের স্বাতন্ত্র্য ঘোষণা করিল, তখন মনোবিদ্যা মনোবিজ্ঞান নাম লইলেও আপনার স্বতন্ত্র অস্তিত্বের অধিকার স্থাপন করিতে পারিল না । বিজ্ঞানের নামে অনেক দার্শনিক মত পূর্বের স্থায় মনোবিদ্যার অন্তভুক্ত হইয়া চলিতে লাগিল। তাহাতে এমন সব আলোচনা প্রাধান্য লাভ করিয়া রহিল, যাহা প্রকৃতপক্ষে বৈজ্ঞানিক সমস্ত নয় এবং যাহা মূলতঃ দার্শনিক তত্ত্ব । যেমন শরীর আত্মার স্বরূপ সম্বন্ধ,বা অনুমানের দ্বারা বাহ্যবস্তুর স্বরূপ জ্ঞানের, সম্ভাব্যতা, প্রচলিত নীতিতত্বের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি ইত্যাদি । দার্শনিক মনোবিদগণ কোন বিধিমত উপায় অবলম্বন না করিয়া কেবলমাত্র কল্পনার সাহায্যেই যে র্তাহাদের মনস্তাত্ত্বিক সিদ্ধান্তে উপনীত হইতেন এমন নহে। অনেকে বৈজ্ঞানিক নিষ্ঠার সহিত বিধিমত অস্তদর্শন ( Introspection ) দ্বারা মানসিক অবস্থার বিশ্লেষণ ও মানসিক ক্রিয়ার পৌৰ্ব্বাপৰ্য্য লক্ষ্য করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহাদের সে চেষ্টা কয়েকটি কারণে সফল হয় নাই । প্রথমতঃ, তাহাদের চরম উদ্দেশ্য ছিল দার্শনিক সত্যত। প্রতিপাদন,—বৈজ্ঞানিক সত্য আধিষ্কার নহে। ইহার ফলে সাবধানতা সত্ত্বেও অনেকস্থলে তাহীদের আলোচন৷ ও বিশ্লেষণ-ক্রিয়া অজ্ঞাতসারে দার্শনিক মত ও কল্পনার দ্বারা রঞ্জিত হইয়া পড়িত । সকলেই জানেন, পূৰ্ব্ব হইতে . কাহারও কোন বিষয়ে স্থির বিশ্বাস কিংবা বিশ্বাসের . প্রবৃত্তি থাকিলে, প্রমাণ সন্ধানের সময় অজ্ঞাতসারে তাহার দৃষ্টি কেবলমাত্র অমুকুল ঘটনার দিকেই ধাবিত হয়— প্রতিকূল লক্ষণগুলি সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না। এই