পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] প্রয়াগের চিঠি ৬৩৫ মুখমণ্ডল বিবর্ণ হইয় গেল। কিয়ৎক্ষণ স্তন্ধ নীরব বসিয়া থাকিয়া তিনি বলিলেন, “সেই কৃষ্ণবিহারীবাবুর ছেলেট কি—” শিরোমণি মহাশয় ওষ্ঠাগ্রে একটু হাসি টানিয়া বলিলেন, “তখন ধদি কথাটায় কান দিতে ভায়া, তাহ’লে কি মেয়ের বিয়ে নিয়ে এত ভুগতে হত ? তুমি আমার আত্মীয় বলেই কথাটা তুলেছিলাম। কৰ্ত্তব্যের শেষ কয়ূলে কি না একখান বাজে রকমের চিঠি লিখে — দেনাপাওনার কথাটার কাছ দিয়েও ঘোঁসলে না। আরে ! দু’পয়স বেশী খরচ হ’লে কি হয় ? ছেলেটি যে রত্ব— বি-এ পাশ ।” রামলোচন শুষ্ককণ্ঠে বলিলেন, “আচ্ছ—ওর যা চেয়েছে, তাই-ই আমি দিতে স্বীকার ।” শিরোমণি মহাশয় মাথা নাড়িয়া বলিলেন, “সে আর হচ্ছে না এখন । আমি ঐ রাস্তা হয়েই আসছি। তোমার গিয়ে ঐ বালিগঞ্জে না কি টালিগঞ্জে ওরা আরও তিন হাজার টাকা বেশী পাচ্ছে । ছেলের মাতুল সে বিয়ের উদ্যোগ করছেন । ধরতে গেলে তিনিই ছেলেটিকে পড়িয়েছেন কি না ।” রামলোচন দৃঢ়স্বরে বলিলেন, “আমি তার চেয়েও বেশী দেব, দয়া করে আপনি আর একবার চেষ্টা করুন।” 6. শ্রাবণের এক শুভদিনে বেশ ধুমধামের সঙ্গে হরেন্দ্রনাথের সহিত নলিনীবালার বিবাহ স্বসম্পন্ন হইয় গেল । লোকের মুখে প্রশংসা আর ধরে না—হঁ, জামাইয়ের মতন জামাই। যেমন গায়ের রং, তেমনি চেহারা, আর গুণের ত কথাই নাই। একেবারে বি-এ পাশ । সার্থক টাক খরচ ! আশ্বিন মাস আসিল । জলদমালা অপসত হইয়া গিয়া আকাশমণ্ডল স্বচ্ছ স্বনীল হইয়া উঠিল। বিহগকুলের আনন্দ কাকলী গৃহে গৃহে আগমনীর বার্তা ঘোষণা করিতে লাগিল । বয়স্থ মেয়ে বলিয়া আশ্বিন মাস পড়িতে-না-পড়িতেই শ্বশুরবাড়ীর লোক আসিয়া নলিনীবালাকে লইয়া গেল । মহালয়ার পূর্বদিন ব্রজেশ্বরী স্বামীকে বলিলেন, “মেয়ের বিয়ে ত দিলে খুব খরচ-পত্তর করে দিয়ে থুয়ে ; এখন পূজোর তত্ত্বটা আবার সেই মত হওয়া চাই, বুঝলে ? আমন রত্ব জামাই, হেলফেল ধেন না দেখায় !" রামলোচন বাহিরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিয়া বলিলেন, “তাই ত ।” ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া ব্রজেশ্বরী বলিলেন, “দেখো, যেন এই নিয়ে শেষটায় আবার নিন্দে না হয় । সবই যখন হয়েছে, ওটুকু কি আর আটকাবে ? রামলোচন তেমনিভাবে বলিলেন, “সে ত সত্যিই।” যাহা হউক ষষ্ঠীর দিন রামলোচন যথোপযুক্ত পূজার তত্ত্ব জামাইবাড়ীতে পাঠাইয়া দিলেন। কুটুম্ববাড়ীর মিষ্টকথায় তত্ত্ববাহীরা খুলী হইয়। ফিরিয়া আসিল । দেখিতে দেখিতে শারদোৎসব শেষ হইয়া গেল, দেশের আনন্দ-স্রোতে ভাট পড়িয়া আসিল ।. ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়ার দিন রামলোচন স্ত্রীকে বলিলেন, "চল, এইবার আমরা গঙ্গাস্নান করে আসি।” ব্রজেশ্বরী স্বামীর দিকে কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়া গিয়া বলিলেন,"যে দায় থেকে ভগবান আমাদের মুক্ত করছেন । বাবা ! কন্যাদায় বিষম দায় ! সত্যিই গঙ্গাস্নানটা আমাদের শীগগিরই সেরে ফেলা দরকার। যাবে কোথায় ? নৈহাটি, ন। নবদ্বীপ ?” রামলোচন বলিলেন, “আমি ত মনে করছি, প্রয়াগ পৰ্য্যস্ত যাব ।” “প্রয়াগ ? সে যে অনেকদূর । আর সেখানে গেলে ত মাথা মুড়োতে হয় । সেবার আমাদের গ্রাম থেকে আমার পিসীমা অrর অfরও পাচ ছ'জন গিয়েছিল । ওমা! ফিরে এলে দেখি, সকলেরই মাথ। মুড়ানো ।” “মেয়ের বাবার কেবল মাথা মুড়ালেই চলবে না, মাথায় ঘোলও ঢালতে হবে । তবে ত কন্যাদায়ের ঠিকমত প্রায়শ্চিত্ত করা হবে ।” “সত্যিই বলেছ তুমি । মামুষ যেন এমন দায়ে কথনও না পড়ে ।” “কাপড়চোপড়, পোট লাপুট লি—যা নেবে বেঁধেছেদে নাও । আগামী পরশুই বেরিয়ে পড়া যাবে, কি বল ?”