পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○○ প্রবাসী—ভাদে, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড একটু ভাবিয়া ব্ৰজেশ্বরী বলিলেন, “ফিরতে ত ঢের । .বিলম্ব হবে, বাড়ীঘরের কি ব্যবস্থা করলে ?” রামলোচন বলিলেন, “সে ব্যবস্থা করেছি।” ব্ৰজেশ্বরী তেমনিভাবে বলিলেন, “তারপর, জমিজমা ? এবারের আমন ধানগুলো—” রামলোচন একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বলিলেন, “সে ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছে।” মোচন করিয়া দুই দিন পর রাত্রির টেনে রামলোচন সস্ত্রীক প্রয়াগের পথে যাত্রা করিলেন । গন্তব্যস্থানে পৌছিয়া তিনি র্তাহার নূতন বৈবাহিক মহাশয়কে লিখিলেন – শ্ৰীহরি ... • প্রয়াগ । বৈবাহিক মহাশয়, g আজ পাচ দিন হইল এখানে আসিয়াছি । কবে যে দেশে ফিরিব, কি এইখানেই জীবনের শেষ কয়টা দিন কাটাইয়া দিতে হইবে, তাহা ভগবানই জানেন । বোধ হয় শেষের ব্যবস্থাটাই তাহার একান্ত অভিপ্রায় । দেশে যাইয়া কোথায় দাড়াইব, আর কি ধরিয়া থাকিব ?— আমি আজ নিঃস্ব—রিক্ত—গুহহীন। সেজন্য আমার একটুও দুঃখ নাই, কারণ জামাই ত পাইয়াছি, বি-এ পাশ। ইহার অধিক আমার কাম্য আর কি থাকিতে পারে ? যেখানে গিয়াছি, সেখানেই ঐ একই কথা, আমার কন্যার কোনো মূল্য নাই ; আছে আমার রক্তক্ষয় করা অর্থের দাম । কন্যার জনক হওয়ার পাপক্ষালন আমাকে করিতেই হইবে। দেখিলাম আর কোনো উপায় নাই—সমাজে মুখ দেখানও ভার হইয়৷ উঠিয়াছে, শেষে দিনের আলোয় বাহির হওয়াও হয়ত চলিবে না ; তখন বিষয়-সম্পত্তি, বাড়ী-ঘর বন্ধক দিয়া আপনার সমস্ত দাবি পূরণ করিয়া কন্যাদায় হইতে মুক্ত হইলাম। তারপর পাওনাদারকে আমার যত-কিছু— সব লিখিয়া দিয়া ঋণমুক্ত হইয়া মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল লইয়া এই পবিত্র ক্ষেত্রে আসিয়া মাথা মুড়াইয়াছি – গঙ্গাস্বান ত দুবেলাই চলিতেছে। বোধ হয় আমার সমস্ত পাপ এতদিনে ক্ষালন হইয়াছে। দেশে আর কিছুদিন অপেক্ষা করিলে সেই সবৃদ্ধিমূল ঋণের দায়ে ভাগ্যে যাহা ঘটিত, তাহ। আমি দিব্যচক্ষে দেখিতে পাইতেছি । tাহী হউক, এসব আমি হাসিমুথেই গ্রহণ করিয়াছি। কারণ, কন্যাদায় সৰ্ব্বাপেক্ষা বড় দায়। সেই দায় হইতে যে মুক্ত হইয়া আমার জাতি বাচিয়া মুখরক্ষা হইয়াছে, ইহাই আমার পরম ভাগ্য । নাই বা প্রাণ বেশী দিন বাচিল, প্রাণের অপেক্ষ মানের মূল্য যে বড়, ইহা সকলেই জানে। আপনার কোন দোষ নাই ; আপনি পুত্রের পিতা ; বিধাতা যাহা আপনার পাওন বলিয়৷ লিথিয়া দিয়াছেন, তাহ আদায় করিয়া লইতে অপরাধ কি ? আমার নলিনীবালা রহিল । তাহাকে একটু দেখিবেন, এই আমার শেষ অনুরোধ। ভাল আছি । ইতি নিবেদক—শ্রীরামলোচন রায় চিঠি পড়িয়া কৃষ্ণবিহারী ক্ষণকাল মৌন থাকিয় বলিলেন, “আমার নতুন বেয়াই মশাই ত কন্যাদায়ে সৰ্ব্বস্বাস্ত হয়ে একেবারে দেশ ছেড়ে প্রয়াগে গিয়ে হাজির ৷ কিন্তু টাকাগুলো আমার ভাগ্যেই বা ক’দিন ? অৰ্দ্ধেক ত বিয়ের খরচেই গেছে। এদিকে হরেন বাবাজী ত একেবারেই বেকার। কতদিনে ষে একটা চল্লিশ টাকার চাকরী জুটবে জানি না। গৃহিণী এমন রত্ব দিয়ে কার লাভ কি হ’ল বলতে পার ?” একটা চাপা দীর্ঘনিঃশ্বাস স্বরবালার অন্তর মথিত করিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল।