পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] হুগলীর পল্লীকবি রসিক রায় Ꮼ8Ᏹ পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকায় লিখিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। তাহার রচিত কবিতা, গান, পাচালী এ প্রদেশের অনেকেরই কণ্ঠস্থ আছে । প্রসিদ্ধ পাচালীকার গৌরমোহন মুখোপাধ্যায়ের বাড়ীও এই বড় গ্রামে। “কবির কালের সাক্ষী, কালের শিক্ষক।” কবি শবের মৌলিক অর্থ-যিনি স্বরচিত কাব্যের দ্বারা ভগবানের স্তবগান করেন । অতীত ভারতে এই অর্থেই শব্দটি প্রযুক্ত হইত। কিন্তু কালক্রমে কবি শব্দের ব্যাপকতর অর্থ হইয়া পড়িয়াছে। তিনি ছিলেন সত্যকার কবি। বড় বড় কথা কহিয়া মনকে ফাকি দেওয়া র্তাহার অভ্যাস ছিল না । তাই তিনি নিজের জ্ঞানকে সুস্পষ্ট করিবার জন্য, সত্যোপলব্ধিকে নিৰ্ম্মল করিবার জন্য সেই সৰ্ব্বশক্তিমান পুরুষের আশ্রয় লইয়াছিলেন । অধ্যাত্ম সম্পদই চিরকাল ভারতবাসীর পরম সম্পদ । রসিকচন্দ্রের পদ্য-সাহিত্য আলোচনা করিলে দেখা যায় – তিনি যেন একটি সৰ্ব্বতোব্যাপী পরমাশক্তির চেতনাময়ী অতুভতি লইয়া সাহিত্যের আসরে নামিয়।ছিলেন । র্তাহার সমগ্ৰ পাচালীগুলি যেন মাহুসের জীবনপথের পাচালীর কথা। মানবাত্মার সকল সংসর্গের মধ্যে যেন পরমাত্মার সংসৰ্গ লাভের সন্ধান খুজিতেছেন। মিথ্যাকে পদদলিত করিয়া সত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণ মানবের পূর্ণপরিণতির লক্ষ্য । কবি এই আদর্শবাদ প্রচার করিবার নিমিত্ত জগতের যত অসত্য, প্রলোভন ও আবর্জনাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করিয়াছিলেন । বয়োবুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার ধৰ্ম্ম-প্রবৃত্তি দিন দিন গাঢ়তর হইতে থাকে। ধৰ্ম্ম-অনুষ্ঠানে রসিকচন্দ্রের কোন আড়ম্বর ছিল না । অনন্ত বিশ্বসৃষ্টির কাছে র্তার মত জ্ঞান, চরিত্র কত ক্ষুদ্র ভাবিয়া নিজকে সঙ্গোপনে রাখিতে ভালবাসিতেন । এইজন্য নাস্তিক আখ্যাও র্তাহাকে সহ করিতে হইয়াছিল। কিন্তু তিনি ব্যাকুল প্রাণে কাতরকণ্ঠে নিভৃত নিকেতনে বসিয়া “ইদানীঞ্চেদ্বীতে মহিষ-গল-ঘণ্টা ঘন রবাৎ নিরালম্বো লম্বোদর ہ:اساس-۵ سb জননী, কং যামি শরণম্” বলিয়া দরবিগলিত ধারায় অশ্রুবিসর্জন করিতেন । শেষবয়সের রচিত র্তাহার শু্যামাসঙ্গীতের গানগুলি দেখিলেই বুঝিতে পারা যায়—প্রেমাস্পদের জন্য প্রেমিকের কি আকুল প্রাথ না । পার্থিব কোনো প্রকারের সম্পদই তাহার মনের উপর আধিপত্য করিতে পারে নাই । বৈষ্ণব কবিদের ব্ৰজগোপীদের মত ধূলিকঙ্কর কণ্টকময় পথকে সম্বল করিয়া তিনিও নিশীথ পথের পথিক হইয়াছিলেন । তজ্জন্য র্তাহার অনেক কবিতায় বৈষ্ণব কবিদের প্রভাব লক্ষিত হয়। বহিমুখী মনটাকে কিছুতেই শাস্ত করিতে পারিতেছে ন না ; তাই আক্ষেপ করিয়া বলিতেছেন— মন হলি না মনের মত । তোরে বারে বারে বুঝাব কত । বসে আছিস পাচটার মাঝে ভূতে দুটার অনুগত ওরে বিষয় ভোল, নটা পোলা " কোন ধন কি হবি হত । প্লামাসঙ্গীতে রসিকচন্দ্র ভক্তিপ্রবাহে গদগদ হইয়। আদ্যাশক্তির নিকট প্রার্থনা করিতেছেন— ম, মোর হৃদয়ে থেকে দেখ গো যেন ভুলো না। চাই না আমি নিৰ্ব্বাণ মুক্তি ওগো শবাসনা। যদি আমায় দাও মা দৈন্ত , তাও ভাল মা অন্নপূর্ণ। যেন দুর্গানাম ভিন্ন বলে না মম রসনা। মা ভক্তবংসল - পুত্রের বাসন পূর্ণ করিয়াছিলেন। ২০শ হইতে ৭২ বৎসরের মধ্যে তিনি বিশেষ কোনে। অসুখে ভোগেন নাই—চিত্ত-শাস্তির প্রভাবে আধি-ব্যাধির স্থান ছিল না । মৃত্যুর পূর্বদিন অপরান্ত্রে পুত্র দাশরথিকে বলিয়া গিয়াছিলেন—“দাশু আজ শরীর ভাল নাই, কি জানি কি হয়।” সেই রাত্রে চারি ঘটিকার সময় পুত্রের দেয় গঙ্গাজল পান করিয়া তুলসীতলায় সকলের নিকট বিদায় লইয়। রসিকচন্দ্র সুদূর শাস্তিনিকেতনের যাত্রী হক্টলেন ।* -مة : উনবিংশ বঙ্গীয়-সাহিত্য-সম্মেলনের সাহিত্যশাখায় পঠিত