পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গঙ্গাফড়িং শ্ৰীঅচ্যুত চট্টোপাধ্যায় > মা বললেন —দ্যাথো ত’ বাবা বিশু, গঙ্গা সেই যে বাজারের পয়সা নিয়ে বেরল, আর ফেরবার নাম নেই! গাড়ীচাপা পড়লো কি কি. এগ জামিনের পড়া, তবুও বই ছেড়ে উঠতে হ’ল। মনে মনে বাদর গঙ্গারামের মুণ্ডপাত করতে করতে পথে বেরলাম । সরু গলিট পেরিয়ে বঁ-হাতি মোড় ফিরতেই দেখি —ফুটপাথের ওপর গ্যাসপোষ্টের পায়ের তলায় বেশ একটি ছোটখাটো ভিড় জমে উঠেছে, ছোট ছেলে থেকে আরম্ভ করে বুড়ো পৰ্য্যস্ত। ভিড়ের ভেতর থেকে টুং টুং ক’রে একটি ঘণ্টা বাজছে, যেন গলায় লাল ফিতে দিয়ে ঘণ্টা-বাধা ছোট ছাগলছানাটি তা’র মায়ের চারপাশে খেয়ালখুলীতে নেচে বেড়াচ্ছে । ব্যাপার কি, দেখবার জন্যে এগিয়ে যেতেই গঙ্গার সঙ্গে চোখাচোখি । ও ত দে-ছুট, ! ভাবলুম, বাড়ীই গেল বোধ হয় । ভিড়ের মধ্যে উকি মেরে দেখি–একখানা গোল পিচবোর্ডের ওপর ঘড়ির ডায়েলের মত এক, দুই, তিন, চার, এমনি বারো পৰ্য্যস্ত লেখা আর বোর্ডের ঠিক মাঝখানটিতে একটি কাটা ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ; যেখানে গিয়ে কাটাটি থাম্চে, সেই দাগ অনুযায়ী বিস্কুট, দেওয়া হচ্ছে । লটারি আর কি ! মন্দ নয়। ছেলের. লোকটাকে ছেকে ধরেছে ; কেউ পাচ্ছে এক পয়সায় দশখান, কেউ বা একখানা, আবার কারু কপালে শূন্ত । இ. আমিও এক পয়সা খেললুম, বরাতে মিলল পাচখান । বাড়ীতে:ফিরে দেখি-ঘরের এক কোণে গঙ্গারাম গুম হয়ে বসে আছে। ও গিয়েছিল ছ'আন পয়সা নিয়ে বাজারে, ঝাড় একঘণ্ট। পরে ফিরল খালি হাতে, দু’আন ট্যাকে করে। মা ত রেগে অস্থির, বললেন—আজ তোকে মেরেই ফেলবে। হতভাগ, বাকী চার আন কি ক’রেচিস্থ বল. ও কিছুতেই বলবে না, যেন শোরের গে। আমি আন্দাজে ব্যাপারট। অনেকখানি বুঝে নিলুম। তারপর, ভুলিয়ে ভালিয়ে আসল কথাটি জানতে পারলুম। বাজারে যাবার পথে ওর বন্ধু কেষ্ট আর রামার সঙ্গে ওর দেখা হয়, বিস্কুটের লটারী-খেলার ওখানে ওরা দাড়িয়েছিল । গঙ্গার হাতে পয়সা দেখে, ওর কাছ ছেকে দু'আনা দু’আনা চার আন ধার নিলে—কেষ্ট৷ আর রাম, লটারী খেলবে বলে । গঙ্গা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের খেলু। দেখছিল, এমন সময় আমাকে দেখে ভো-দৌড় ! ૨ আজ দু’বছর হ’ল গঙ্গাদের বাড়ীতে এসেচি। গঙ্গাকে পড়াই ; ওখানেই খাই, থাকি । আট বছরের গঙ্গা আমার চোখের সাম্নে বড় হয়ে দশ বছরে পা দিয়েছে। রোগ। লিকুলিকে চেহারা ; বড় বড় চোখ দু'টিতে স্পষ্ট বুদ্ধির আভা, মাথায় কোকড় কোকৃড়া কালে কুচকুচে চুল। ওর মুখের দিকে চাইলে, যে জিনিষটি সব আগে চোখে পড়ে, সেটি হচ্চে ওর ওপর-ঠোটের বা কোণটির ওপর একটি ছোট্ট মিশকালে তিল । ভোরের আকাশের শুকতারার মতই চমৎকার । রোগা হ’লে কি হয়, অত্যন্ত চঞ্চল আর তেমনি একগুঁয়ে ও পড়তে বসে ঘণ্টায় তিন চার বার উঠে পালায় ; আবার মা’র কাছে তাড়া থেয়ে ছুটুতে ছুটুতে এসে ধুপ করে বসে আমার গা-ঘেষে। যেন সবে-হওয়া