পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] গঙ্গাফড়িং ჯ8«S) ছোট একটি বাছুর ! হাপাতে হাপাতে বলে—উ, আর ভাল লাগে না পড়তে। কখন ছুটি হবে ?... প্রথম যেদিন ওঁদের বাড়ীতে এলুম, ওর মা ওকে সঙ্গে করে আমার কাছে দিয়ে গেলেন ; বললেন—তুমি বাবা আমার ছেলের বয়সী, তোমাকে নাম ধরেই ডাকবে, কেমন ? এই দুইটাকে সামলাতে পারবে কি বিশ্বনাথ ! বল্লুম—কিছু ভাববেন না মা, সে আমি ঠিক করে নোব । * তারপর গঙ্গাকে জিগ্যেস করলুম— তোমার নাম কি ভাই থোক ? ও বললে— শ্ৰীগঙ্গা...এই পৰ্য্যন্ত বলে মার মুখের দিকে তাকালো । আমি হেসে বললুম-বেশ, বেশ, তোমাকে আমি বলবো গঙ্গাফড়িং, কেমন ? মা হেসে বললেন – তোমাকে কিন্তু গঙ্গা মাষ্টারমশাই বলে ডাক্বে না বিশ্বনাথ,— ও ব’লবে—বিশুদা । আমি ইেট হয়ে ওর পায়ের ধূলো নিলাম। সহরের এক অপ্রশস্ত গলির উপর ছোট্ট একখানি একতাল। বাড়ী । স্নেহময়ী বিধবা মা আর দখিন হাওয়ার মত চঞ্চল এই ছেলেটিকে নিয়ে সংসার ; তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যে— ছেলের মাষ্টার আমি, অর্থাৎ গঙ্গাফড়িংয়ের বিশদ । খেয়ালী ছেলেটিকে পড়ানোর চেয়ে গল্প বলতে হয় বেশী। দুনিয়ার সমস্ত খবর ও জানতে চায়। নায়েগ্রার তোড়কে বেঁধে কেমন ক’রে বিদ্যুৎ তৈরি হয় ; এরোপ্লেন আকাশে ওড়ে কেমন করে ; পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে ধনী কে ; নোবেল প্রাইজ কাকে বলে ; এই বকমের যে কত প্রশ্ন ও ক’রে তার ঠিক নেই। সেদিন পুণিমার সন্ধ্যায় ছাদে মাছুর পেতে বসে আছি ; গঙ্গা এসে বসলে আমার পাশটিতে । বুকচাপ। চারতলা বাড়ীখানার পেছন থেকে চাদ উঠলো। একদৃষ্টি খানিকক্ষণ চাদের দিকে চেয়ে থেকে ও জিগ্যেস করলে—আচ্ছ বিশদ, চাদের বুকভর ও কালে কালো ছোপগুলো কিসের ? - আমি বললুম—চাদের মধ্যেও এই পৃথিবীর মত পাহাড়পৰ্ব্বত, বনজঙ্গল আছে, মানুষও আছে, তবে তারা অন্য রকম ও ত একেবারে অবাক । তারপর অনর্গল কত যে প্রশ্ন করে গেল তার ঠিক নেই। আমি চুপ করে শুনি, উত্তর দিই না, আর দেবই বা কি ! অশাস্ত গঙ্গাফড়িংয়ের মধ্যে যে একটি ছোট্ট কবি ঘুমিয়ে ছিল, তা একদিন হঠাৎ ধরা পড়লো। ওর রাফ থাগখানা ঘাটুতে ঘাটুতে দেখি এক জায়গায় লেখা আছে— "মাগে, আমায় হাতছানি দেয় ভোরের হাওয়ায় ; ডাকে আমায় সাজের তারা চোখের চাওয়ায়।’ ভাবলুম বোধ হয় রবীন্দ্রনাথের কোনো • কবিতার দু’লাইন ও খাতায় টুকে রেখেচে ; কিন্তু সে ভুলও আমার ভাঙলো যখন ও একখানি ছোট্ট নীল রঙের বাধানে খাত এনে আমায় দেখালে। খাতা বোঝাই কবিতা । সত্যি অবাক্ হয়ে গেলুম। গঙ্গার মত দশ বছরের দুরস্ত ছেলে যে এমন কবিতা লিখতে পারে, এ-কথা কে নিচিন ভাবতেও পারিনি। ওর কবিতার মধ্যে কাঠপিপড়ের গান শোনা যায় ; বর্ষারাতের কোলাব্যাঙ ওর কাছে মনের গোপন কথাটি বলে গেছে ; উচ্চিংড়ের এরোপ্লেনে চড়ে ও অনেকদূর পাড়ি দিয়েছিল ; ঘাসের মধ্যে পথ-হারানো ফড়িং ওর কাছ থেকে পথ জেনে নিয়েছিল ; দখিন হাওয়া চলতে চলতে ওর জাল্লার সাম্নে থেমে ওকে সেলাম করে গিয়েছিল সেদিন ভোরবেলায় ; সন্ধ্যাতারার চোখে ও ওর মরে-যাওয়া খেলার সার্থী নন্দরাণীর মুখখানি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিল সেদিন ; এমনি কত আবোল তাবোল। ওকে আমরা বারণ করিনি কোনদিনও, উৎসাহই দিয়েছি বরাবর কবিতা লেখবার জন্তে । আরও দু’বছর কেটে গেছে। অনেকদিন পরে দেশে এসেছি ।