পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখা ] আসামের কুকি জাতি ৬৫১ নান শ্রেণী আছে। পূৰ্ব্বোক্ত শ্রেণীবিভাগামুসারে ভাষারও কিঞ্চিৎ পার্থক্য আছে । কুকিরা বলিষ্ঠ, কষ্টসহিষ্ণু, যুদ্ধপ্রিয়, ও স্বাধীনতাপ্রিয় জাতি । উহারা অন্যান্য অনেক পাৰ্ব্বত্য জাতি অপেক্ষণ শাস্ত প্রকৃতির। পৰ্ব্বতে যাহাদের বাস, বাঘ ভালুক নেকৃড়ে যাহাদের প্রতিবেশী, তাহাদের যুদ্ধপ্রিয় হওয়াই স্বাভাবিক। কুকির চাষ করে, স্থত কাটে, কাপড় পরে, ভাত খায়, পরিবারবদ্ধ হইয়া বাস করে । গ্রামের প্রায় মাইল-খানেক দূরে কতকটা জঙ্গল পোড়াইয় তাহাতে চাষের জমি তৈয়ার করে । তাহাতে ধান, তুলা, লাউ, কুমড়া, ভুট্টা, সীম, তিল, কচু, লঙ্কা,বেগুন, কাকুড় ইত্যাদির চাষ হয়। জমির একপাশ্বে শস্ত জমা রাখিবার বন্দোবস্ত করা হয়। ব্যবহারোপযোগী শস্ত বাড়ীতে আনা হয়। একজনের শস্য অন্যজনে কদাচ স্পর্শ করিবে না। চুরি করিলে ক্ষেত্রদেবতা রাগ করেন এবং ক্ষেত্রদেবতা রাগ করিলে ফসল হইবে না—এই বিশ্বাসেই কেহ কখন চুরি করে না। ( এই সমস্তই অন্ধকার যুগের কথা, আলোকিত যুগে সমস্তই পরিবর্তিত হইয়। যাইতেছে—তাহ পরে দেখান হইবে ) । বাড়ীতে মুরগী, ছাগল, শূকর, মিথুন ( এক প্রকার গরু ), কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি পোষা হয়। মুরগী, ছাগল, শূকর, মিথুনের মাংস এবং বন্ত শূকর, হরিণ, বন্যকুকুট ও নানা প্রকার পার্থী শিকার করিয়৷ তাহাদের মাংস পোড়াইয়া বা রান্না করিয়া খাওয়া হয়। শাক-সঙ্গী সিদ্ধ করিয়া লবণ ও লঙ্কা যোগে ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়। লবণ নিজেরা তৈয়ার করে। তুল৷ হইতে স্বতা কাটিয়া মেয়ের কাপড় বুনে। মেয়ের দুইখানা কাপড় পরে—ছোট একখানা কোমরে ও বড় একখানা বুকে জড়ান থাকে। পুরুষের চার-পাচ হাত দীর্ঘ কাপড় লুঙ্গীর মত পরে। শিকার বা যুদ্ধের পোষাক স্বতন্ত্র। বড় একখানা মোট চাদর মাঝে ভাজ করিয়া দুই পাড়ের দিক সেলাই করিলে একটি থলিয়ার মত হয়। তাহাতে হাতের ও গলার জন্য ছিদ্র থাকে । উহাতে কঁাধ হইতে হাটু পর্য্যস্ত আবৃত হয়। ছোট আর একখানা কাপড় কোমরে বাধিয়া দেওয়া হয় । মাথায় সেথান হইতে মাঝে মাঝে নিজেদের - পাগড়ী থাকে। কাজের সময় যুবকেরা চার-পাচ হাতের একখানা গামছা মাত্র পরে। আজকাল ক্রমশ: পোষাকের পরিবর্তন হই যাইতেছে। বহু পরিবার একত্রে দলবদ্ধ হইয়া বাস করে । কোন কোন গ্রামে ২৫০।৩০০ ঘর লোকও বাস করে । গ্রামে প্রবন্ধ-লেখক—শ্ৰীযুত লালতুদাই রায় একজন সর্দার থাকেন, তাহাকে রাজা বলা হয় । রাজা র্তাহার অধীনস্থ প্রত্যেক শ্রেণী হইতে এক একজন মন্ত্রী গ্রহণ করিতেন। গ্রামবাসীদের আপদে বিপদে উহার আবশুক-মত ব্যবস্থা করিতেন। ঝগড়া-বিবাদ উহারাই মীমাংসা করিয়া দিতেন। ব্যবস্থা বিচার সমস্তই রাজার ঘরে সম্পন্ন হইত। প্রত্যেক গ্রামবাসী রাজার আদেশ মান্ত করিয়া চলিত । রাজা ছাড়া প্রত্যেক গ্রামেই একজন পুরোহিত ও একজন কৰ্ম্মকার থাকিতেন। যেসমস্ত বিচার রাজা করিতে পারিতেন না, পুরোহিত নানা অভিনব উপায়ে সেই সব মীমাংসা করিয়া দিতেন । প্রতি বৎসর ফসল কাটা হইলে, রাজা, পুরোহিত ও কৰ্ম্মকার প্রত্যেকে এক এক ঝুড়ি ধান প্রতি গৃহস্থের নিকট কর স্বরূপ পাইতেন ।