পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] আসামের কুকি জাতি ఆ(లి জুতা দিয়াছেন, টুপি দিয়াছেন, কোট দিয়াছেন, সিগারেট দিয়াছেন। আমার কথা শুনিলে তোমরাও এইরূপ পাইবে । অমুখ হইলে তোমরা ভূতের পূজা কর । তোমরাও ভূত। এই দেখ যীশু আমাকে কেমন স্বন্দর ঔষধ দিয়াছেন । পাস্ত্রী গ্রামস্থ কোন রোগীকে কিছু ঔষধ খাওয়াইয় দিলেন। জীবনে কখনও যে ঔষধ খায় নাই, ঔষধ খাওয়া মাত্রই হয় ত আরোগ্য লাভ করিল। খ্ৰীষ্টধৰ্ম্মে আর কি অবিশ্বাস থাকিতে পারে ? অজ্ঞ সরল পাৰ্ব্বত্যলোকের কতক ভয়ে, কতক বিস্ময়ে, কতক লোভে মিশনারীদের কথা শুনিতে লাগিল । ধীরে ধীরে কেহ কেহ খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম গ্রহণ করিতে লাগিল । কোন কোন সংক্রামক রোগের লক্ষণ এইরূপ শুনিয়াছি, নিজে কষ্ট পাইতেছে এবং অন্ত্যের সঙ্গে মিশিলে অন্তেরও রোগ হইতে পারে এ কথা জানিয়াও রোগী অন্যের সঙ্গে মিশিবার জন্ত সৰ্ব্বদা চেষ্টা করে। আমাদের বেলাও তাহাই হইতেছে, যাহারা খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছে তাহারা নিজে ভাল না থাকিলেও, অন্যকে সৰ্ব্বদা দলে টানিবার বিশেষ পক্ষপাতী । চা-বাগানের আড়কাঠির মত ইহাতে বেশ দুপয়সা রোজগারও হয়—প্রসাদী হ্যাট, কোট, জুতাও পাওয়া যায়। " মিশনারীদের অক্লাস্ত পরিশ্রমে আজ আমরা স্বর্গের দ্বারে উপস্থিত হইয়াছি। সেখানে নাকি আমাদের “সিটু রিজার্ভ হইয়া আছে। আমাদের মধ্যে শতকরা নব্বই জনের উপর আজ খ্ৰীষ্টান । গ্রামে গ্রামে খড় ও বঁাশের চার্চ ও স্কুল স্থাপিত। আবালবৃদ্ধবনিতার মুখে সিগারেট ও মাথায় টুপি । আমাদের পিতা, পিতামহ ভূত ছিলেন ও বর্বর ছিলেন, আর আমরা আজ ধাপে ধাপে স্বর্গের দিকে অগ্রসর হইতেছি । আমরা সভ্য হইয়াছি, আলোকিত হইয়াছি। স্বতরাং পাঠকগণের নিকট আমার বিনীত অনুরোধ, আপনার আমাদিগকে আর ঘৃণা করিবেন না । আপনার আমাদিগকে এখন আর ঘৃণা করিতে পারেনই ন,–বরং আমরাই ত হিদেন ও পৌত্তলিক বলিয়া - আপনাদিগকে কিছু কিছু ঘৃণা করিতে অভ্যাস করিতেছি। এখানে একটি কথা বলিয়া রাখা দরকার। ব্যক্তিগত বা কোন সম্প্রদায়বিশেষের বিদ্বেষ বা নিন্দ প্রচার করা আমার প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নহে। কুকিদের অবস্থা আজ জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে আসিয়া দাড়াইয়াছে । যে-সব সমস্ত আজ আমাদের সম্মুখে উপস্থিত, তাহার কোনও মীমাংসা করিতে না পারিয়াই সুধিগণের সহায়তাকামনায় এই প্রবন্ধ লিখিতেছি। কুকিদের কথা আলোচনা করিতে গেলেই নানা অপ্রিয় প্রসঙ্গের অবতারণা অনিবাৰ্য্য। আমি অপ্রিয় কথাগুলি যথাসাধ্য বাদ দিয়াই লিথিবীর চেষ্টা করিতেছি । এই অবাঙ্গালী অপটু লেখকের বাঙ্গালা লেখাতে তাহার উদ্দেশ্যের বিপরীত ভাব কেহ দেখিতে পাইলে, তাহা তাহার অনভ্যস্থ হস্তেরই দোষ মনে করিয়া মার্জন করিবেন । মিশনারীগণ আমাদের জন্য কি কি করিয়াছেন ও করিতেছেন ?—(১) অসভ্যজাতিকে সভ্য করিতেছেন । (২) ধৰ্ম্মহীন জাতিকে ধৰ্ম্ম দান করিতেছেন। (৩) সাহিত্যহীন জাতিকে সাহিত্য দান করিতেছেন। (৪) ঔষধ দিতেছেন। (৫) মদ্যপান বন্ধ করিয়াছেন। (১) মিশনারীরা আমাদিগকে সভ্য করিতেছেন । এই সভ্যতার অর্থ কি ? - সভ্যতার অর্থ যদি পোষাক-পরিচ্ছদ হয় তবে কথাটি ষোল অানাই সত্য বটে। প্রত্যেক দেশের প্রাকৃতিক অবস্থা, আবহাওয়া একরূপ নহে। যেখানের যে অবস্থা সেই অবস্থার সঙ্গে মিল করিয়া মাহুষের আহার-বিহার, পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করিতে হয়। আজ যখন আমাদের পল্লীতে পল্লীতে হাটু, কোট, বুট, সিগারেটের ধুম দেখি,—তখন কাকের ময়ুর সাজিবর গল্পই মনে হয়। পূর্বেই বলিয়াছি, আমাদের অভাব অতি সামান্য ছিল, কিন্তু এখন নিত্য নূতন আ ভাবের স্বষ্টি হইতেছে, অথচ সেই অভাব মোচনের কোন নূতন বৈধ উপায় আবিষ্কৃত হইতেছে না। উদ্ধাম বিলাদিতাই যদি সভ্যতা হয়, তবে সেই সভ্যতাকে দূর হইতে নমস্কার করাই ভাল । আমাদের যা-কিছু সবই খারাপ, আর পাশ্চাত্যের যা-কিছু সবই ভাল, এই একট। ভাব সমাজের মধ্যে বিশেষভাবে যুবকদের মধ্যে প্রবেশ লাভ করিয়াছে। এ ভাব আনিয়াছে কাহারা ? আমাদের অর্থের বিশেষ প্রয়োজন ছিল না,—এবং