পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম-সংখ্য। ] নিষ্কলঙ্ক Ned:సి পরে ভেবে দেখেছি যে, সমস্ত শিক্ষিত সমাজের এই গুরুতর ও অন্যায় নিন্দার প্রতিবাদ নিতান্ত প্রয়োজন। আমি একথা বেশ ভাল করেই জানি যে, আইনের চোখে আমর অপরাধী—আমরা সমাজের শত্ৰু । কিন্তু দ.া করে একবার এই সমাজ-শত্রুর কথা ভেবে দেখুন। যে-অপরাধে সে আজ সরাসরি নিন্দিত, সে-অপরাধ সে কোনদিনই করেনি ; . কেবল তাই নয়, সে . অপরকেও এই পাপকাজে সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে বাধা দিতে প্রস্থত । একথা বোধ করি বলা বাহুল্য যে, সাধারণ নাগরিকের চেয়ে এ অন্যায় নিন্দ ও অপমান তার বেশ করেই বাজবে । কিন্তু আমি স্পষ্টই জানাতে চাই যে, এই নিন্দার মূলে কোনো ভিত্তি নেই –না তথ্যের, না যুক্তির । দুচার কথায় আমার বক্তব্য আমি প্রমাণ করে দেব, অবশ্য মাননীয় সভ্যের। দয়া করে যদি শোনেন ।” “বলুন”, সভাপতি বিনা দ্বিধায় অতুমতি দিলেন । “শুনতে চাই”, “বেশ বলছেন”, “বলে যান’— ব্যারিষ্টারদলের অগ্রহ ও সজীবত এই রকম নানা উক্তিতে প্রকাশ হ’ল । “আমার বন্ধুদলের মুখপাত্ররূপে আমি আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের ব্যবসা হয় ত ঠিক ভদ্রজনোচিত নয়, কিন্তু বিপদসঙ্কল নিশ্চয়ই ; বাস্তবিক আমাদের কথা শুনলে আমাদের জন্তে সময় নষ্ট করেছেন বলে কোনদিন অনুতাপ হবে না। যাই হোক, প্রাচীন ভাষায় যাকে বলে "অবধান করুন।’ কিন্তু সভাপতি মহাশয়, বেয়াদবি মাপ করবেন, গলাটা একটু ভিজিয়ে নিতে চাই ।” দলপতি এই বলে দরোয়ানকে ডেকে ঠাণ্ড সরবতের হুকুম দিল । পরে বললে, “আমি অবং আমাদের ব্যবসার নৈতিক তত্ত্ব বা সামাজিক প্রয়োজনীয়তার বিচার করব না। আপনার নিশ্চয়ই ফরাসী পণ্ডিতের ব্যঙ্গোক্তি জানেন। 'সম্পত্তি মাত্রেই চোরাই মাল ? কথাটা ব্যঙ্গ নিশ্চয়ই, কিন্তু আজ পর্য্যন্ত সম্পত্তির মালিক কেউ তো কথাটা উড়িয়ে দিতে পারলে না ! এই ধরুন না-- বাপ হয় তো নানা ফিকিরে লাখ টাকা জমিয়ে গেল ; পেল কে ?—না, তার বোকা, রোগ, আলসে, হাবা ছেলেটা— নিতান্ত হতভাগা, পরোপজীবী। লাখ টাকা জমা মানে কি ? লাখ দিনের অবঞ্চিত বহু লোকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমফলে অন্যায় দাবি তো ? কেন ? কোন যুক্তির বলে ? এ যুক্তি তে কারও জানা নেই। কাজেই, একথা কেন আপনার স্বীকার করবেন না যে, আমাদের ব্যবসা হচ্ছে ব্যক্তিবিশেযের অতিরিক্ত সঞ্চয়ের প্রতিকার–বৰ্ত্তমান সমাজ-ব্যবস্থায় সম্পত্তি-লোভীর স্বই মানুষের অমান্থষিক পরিশ্রম, অকথ্য অপমান, অবিচার ও অবহেলার প্রতিবাদ ! একথা অস্বীকার করা চলবে না যে, আজই হোক বা কালই হোক, সামাজিক পরিবর্তন ঘটবেই । বৰ্ত্তমান ব্যবস্থা সেদিন অচল হবে, দুঃখময় স্মৃতির মরণগহ্বরে সেদিন সম্পত্তির লোপ হবে, আর সেই সঙ্গে সঙ্গে লোপ পাব আমরা—এই সম্পত্তি-পরিবেষ্টার দল---” বক্তা একটু থেমে, দরোয়ানের হাত থেকুে সরবতের গ্লাসট। নিয়ে টেবিলে রেখে দিল । “মাপ করবেন আচ্ছ। ভাই, এটা নিয়ে যাও...আর যাবার সময় দরজাট ভাল করে বন্ধ করে দিও।” “জী, হুজুর”—দরোয়ানের কথার মধ্যে বিদ্রুপের স্বর বেজে উঠল । • সরবৎ-পানে পরিতৃপ্ত হয়ে দলপতি বক্তব্য স্বরু করলে, “যাই হোক, আমি এ ব্যাপারের দার্শনিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক আলোচনায় আপনাদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাব না। কিন্তু একথা আমি বলবই যে, আর্ট বলতে যা বোঝায়, আমাদের ব্যবসাতে সেই জিনিষটি আছে। শিল্পশ্বষ্টির উপাদান যা-কিছু, এর মধ্যে তার অভাব নেই। প্রেরণা, কল্পনা, উদ্ভাবনী শক্তি, উচ্চাশ —যাই বলুন—আর সেই সঙ্গে আছে বিজ্ঞান আয়ত্ত করবার বিপুল ধৈর্য্য, সুদীর্ঘ সাধন । এর মধ্যে নেই যাকে আপনার বলেন নীতি। আমার নিবেদন, আপনার বিশ্বাস করুন, বাজে কথা বলে আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করবার আমার আদৌ প্রবৃত্তি নেই। কিন্তু আমার কথাট। আর একটু পরিষ্কার করে বলতে চাই। বাইরের লোকের কাছে চোরের সাধনার কথাটা বাজে ও হাস্যকর হতে পারে, কিন্তু এ সাধনা কি সত্য নয় ? আমাদের মধ্যে এমন লোকের সাক্ষাৎ মেলে