পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮼb-Ꮼ مہمہم مملہ প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড গীতাকার কেমন করিয়া ভৌতিক ੰਬਰ উদাহরণ গ্রহণ করিলেন ? গীতার যুগে অহিংসা ধৰ্ম্মরূপে পরিগণিত হইলেও ভৌতিক যুদ্ধ অত্যস্ত সাধারণ বস্তু ছিল বলিয়া গীতাকার এরূপ উদাহরণ 'গ্রহণ করিতে সঙ্কোচ বোধ করেন নাই, করার কারণও ছিল না। কিন্তু ফলত্যাগের মহত্ত্ব বিচার করিতে গিয়া গীতকারের হৃদয়ে কি সিদ্ধান্তের উদয় হইয়াছিল এবং অহিংসার মর্য্যাদার সীমা তিনি কিভাবে নির্দেশ করিয়াছিলেন, এবিষয়ে আমাদের বিচার করিবার প্রয়োজন নাই। কবি মহত্ত্বের আদর্শ জগতের সম্মুখে উপস্থিত করিয়াছেন। তাহার দ্বারা একথা বলা চলে না যে, তিনি র্তাহার মতবাদের মহত্ত্ব পূর্ণভাবে জানেন বা জানিয়া পূর্ণভাবে ভাষায়ু প্রকাশ করিতে পারেন। ইহাতেই কবির কাব্য এবং মহত্ব। কবির অর্থের অস্ত নাই। মানব-চরিত্রের যেমন, মহাকাব্যের অর্থেরও তেমনি বিকাশ হইয়াই চলে । ভাষার ইতিহাস আলোচনা করিলে দেখিতে পাই যে, অনেক গভীর শব্দের অর্গ নিত্যই পরিবর্তিত হইতেছে ; গীতার অর্থ সম্বন্ধে সেই কথা বলা যাইতে পারে। গীতাকার নিজেই মহত্বপূর্ণ কঠিন শব্দগুলির অর্থ ব্যাখ্যা করিয়াছেন। গীতার যেখানে সেখানে দেখিলেই একথা বোঝা যাইবে । গীতার যুগের পূৰ্ব্বে সম্ভবতঃ যজ্ঞে পশুহিংসা প্রচলিত ছিল, কিন্তু গীতার কথিত যজ্ঞে কোথাও তাহার গন্ধ পৰ্য্যস্ত নাই । সেখানে জপযজ্ঞই শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ বলিয়া পরিগণিত হইয়াছে। তৃতীয় অধ্যায়ে একথা স্বচিত হইয়াছে যে, যজ্ঞের অর্থ মুখ্যভাবে পরোপকারের জন্য শরীরের উপযোগ । তৃতীয় এবং চতুর্থ অধ্যায় মিলাইয় অন্য অর্থও করা যাইতে পারে, কিন্তু পশুহিংসা-ঘটিত অর্থ কোনমতেই করা যাইতে পারে না। গীতায় বর্ণিত সন্ন্যাস-সম্বন্ধেও এই কথা বলা যাইতে পারে । গীতায় বলা হয় নাই যে, কৰ্ম্মমাত্রের ত্যাগই সন্ন্যাস। গীতার সন্ন্যাসী অতিকৰ্ম্মী এবং অতি-অকৰ্ম্মী উভয়ই। গীতাকার এইরূপে মহত্বপূর্ণ শব্দগুলির ব্যাপক অর্থ করিয়া আমাদের ভাষায় অর্থের ব্যাপকতা বিষয়ে শিক্ষা দিয়াছেন। গীতাকারের প্রযুক্ত শব্দগুলি হইতে একথা ঠিকই প্রতিপাদন করা যায় যে, সম্পূর্ণ ফলত্যাগীর পক্ষে ভৌতিক যুদ্ধ অসম্ভব নহে। কিন্তু চল্লিশ বৎসর ধরিয়া গীতার শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে কৰ্ম্মে পরিণত করিবার সর্বদা চেষ্টা করিয়া বিনীতভাবে একথা আমাকে বলিতে হইতেছে যে, সত্য ও অহিংসা পূর্ণভাবে পালন না করিলে সম্পূর্ণভাবে কৰ্ম্মফলত্যাগ মঙ্গুষ্যের পক্ষে অসম্ভব । গীত। স্বত্রগ্রন্থ নহে। গীতা মহান ধৰ্ম্মকাব্যবিশেষ। তাহার মধ্যে যত গভীরভাবে প্রবেশ করিতে পরিবে, ততই নূতনতর এবং সুন্দরতর অর্থ পাইবে । জনসাধারণের সুবিধার জন্য তাহাতে একই কথা বহুবার বলা হইয়াছে। এইজন্য যুগে যুগে গীতার অর্থ পরিবর্তিত হইবে এবং বিস্তারলাভ করিবে । কিন্তু গীতার মূলমন্ত্র কোনদিনই পরিবৰ্ত্তিত হইবে না। সে মন্ত্র যে-কোন ভাবে সাধন করা যাইতে পারে, জিজ্ঞায় তাহার যে-কোন অর্থ করিতে পারেন। গীত বিধিনিষেধ নির্দেশ করে নাই। , একের পক্ষে যাহা বিহিত তাহাই অপরের পক্ষে নিষিদ্ধ হইতে পারে। বিশেষ কালে বিশেষ দেশে যাহা বিহিত, অন্য কালে অন্য দেশে তাহাই নিষিদ্ধ হইতে পারে। মাত্র ফলাসক্তি নিষিদ্ধ, অনাসক্তি বিহিত । গীতায় জ্ঞানের মহিমা স্বীকার করা হইয়াছে। কিন্তু গীতা বুদ্ধিগম্য নহে, হৃদয়গম্য, তাই তাহা শ্রদ্ধাহীনের জন্য নহে । গীতাকার বলিয়াছেন— "যে তপস্বী নহে, ভক্ত নহে, যে শুনিতে চাহে না এবং যাহার আমার প্রতি বিদ্বেষ আছে তাহাকে তুমি এই (জ্ঞানের) কথা কখনও ঘলিও না।" ১৮৬৮ “কিন্তু যে এই পরম গুহ জ্ঞান আমার ভক্তকে দান করিবে, সে-ই পরম ভক্তির জন্য নিঃসন্দেহে আমাকে লাভ করিবে।" ১৮৬৮ “সেই সঙ্গে সঙ্গে যে দ্বেষ-রহিত হইয়া শ্রদ্ধাপূর্বক ইহা শ্রবণ করিবে সে-ও মুক্তি লাভ করিয়া যেখানে পুণ্যবান বাস করেন সেই শুভলোক লাভ করিবে ।” ১৮৭১