পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিজেদের মধ্যে করমর্দন ও পরস্পরের নিকট বিদায় গ্রহণ করিল, তাহার দিকে কেহ ফিরিয়াও চাহিল না। যেভাবে সকলে তাহাকে উড়াইয়া দিল, বা মানুষের মধ্যে গণ্য করিল না তাহাতে অপু অপমানে ও লজ্জায় অভিভূত হইয়া পড়িল । তাহার পাশ কাটাইয়া সকলে চলিয়া গেল---কেহ একট। প্রশ্নও জিজ্ঞাসা করিল না, তাহার সম্বন্ধে কেহ বে না কৌতুহলও দেখাইল না অপু মনে মনে ভাবিল- বেশ, না বলুক কথা-আমি কি জানি না জানি, তার খবর ওরা কি জানে ? যে জানত অনিল— সেও চলিয়া যাইতেছে, এমন সময় লীল আসিয়৷ তাহাকে নিজে বাড়ীর মধ্যে লইয় গেল । বলিল মা, অপূৰ্ব্ববাবু না খেয়েই চুপি চুপি পালাচ্ছিলেন— একটি ছোট আট নয় বছরের ছেলেকে দেখাইয়া বলিল—একে চেনেন অপূৰ্ব্ববাবু ? এ সেই থোকামণি, আমার ছোট ভাই, এর অন্নপ্রাশনে আপনাকে একবার আসতে বলেছিলুম, মনে নেই ? লীলার কয়েকটি সহপাঠিনী সেখানে উপস্থিত, ইতিপূৰ্ব্বে সে মহিলাটি ‘আমি চঞ্চল হে আমি সুদূরের পিয়াসী’ গানটি করিয়াছিলেন, তাহার ছোট বোন, নাম দীপি, লীলারই এক ক্লাসে পড়ে, লীলা পরিচয় করাইয়। দিল । তাহার পর সে সকলকে বলিল—তোমরা জ্ঞান না অপূৰ্ব্ববাবুর গলা খুব ভাল, তবে গান গাইবেন কিনা জানিনে" মানে বেজায় লাজুক, আমি ছেলেবেল থেকে দেখে আসূচি, একটা অকুরোধ রাখবেন অপূৰ্ব্ববাবু ? অপু অনেকের অনুরোধ-উপরোধে অবশেষে বলিল-- আমি বাজাতে জানি নে- কেউ যদি বরং বাজান-- দীপ্তি অগ্যানের কাছে গিয়া বসিল । অপুর গলা খুব সুন্দর, সকলে পর পর দু তিনটি গান শুনিল । লীলার মা মাঝে মাঝে তাহাকে আসিবার জন্য বিশেষ করিয়া বলিলেন । , তবুও রাত্রে বাসায় ফিরিতে ফিরিতে তাহার মনে হইতেছিল আর কখনও এখানে সে আসিবে না । বড়লে কেরসঙ্গেতাহার কিসের খাতির-—দরকার কি আসিবার ? একটা দারুণ অতৃপ্তি। যেদিন অপুর পরীক্ষা আরম্ভ হইবে তাহার দিনপাচেক আগে অপু পত্রে জানিল মায়ের বড় অসুখ, হস্তাক্ষর তেলিবাড়ীর বড় বৌয়ের । সন্ধ্যায় সময় অপু বাড়ী পৌছিল। সৰ্ব্বজয় কঁথা গায়ে দিয়া শুইয়া আছে । দুর্বল হইয় পড়িয়াছে দেখিয়া মনে হয়, অপুকে দেখিয়া তাড়াতাড়ি বিছানার ওপর উঠিয়া বসিল । অনেক দিন হইতেই অসুখে ভুগিতেছে পরীক্ষার পড়ার ব্যাঘাত হওয়ার ভয়ে খবর দেয় নাই, সেদিন তেলি বেী জোর করিয়া নিজে পত্র দিয়াছে। এমন যে কিছু শয্যাগত অবস্থা তাহা নয়, খায় দায়, কাজকৰ্ম্ম করে । আবার অসুখও হয় । সন্ধ্য হইলেই শয্যা আশ্রয় করে, আবার সকালে যথারীতি উঠিয়া গৃহকৰ্ম্ম মুরু করে । চিরদিনের গৃহিণীপনা এ অসুস্থ শরীরেও তাঁহাকে ত্যাগ করে নাই । অপু বলিল- উঠে ল বিছানা থাক— দেখি গা ? – তুই আয় বোস্-ও কিছু ন— একটু জর হয়, থাই দাহ– ও এমন সময়ে হয়েই থাকে। বোশেখ মাসের দিকে সেরে যাবে- তুই যে মেয়েকে পড়াস, সে ভাল থেকে মা-শুয়ে আছে ত ? সৰ্ব্বজয়ার রোগশীর্ণ মূখের হাসিতে অপুর চোখে জল আসিল । সে পুটুলি খুলিয়া গোটাকতক কমল লেবু, বেদান, আপেল, বাহির করিয়া দেখাইল । জিনিষপত্র সস্তায় কিনিতে পারিলে সৰ্ব্বজয়া ভারি খুসী হয়। অপু জানে মাকে আমোদ দিবার এটা একট। প্রকৃষ্ট পস্থা । কমলালেবুগুলা দেখাইয়া বলে—কত সস্তায় কলকাতায় জিনিষপত্র পাওয়া যায় দ্যাথো—লেবুগুলে দশ পয়স-— প্রকৃতপক্ষে লেবুগুলার দাম ছ আন । সৰ্ব্বজয়ী আগ্রহের সহিত বলিল—দেখি ? ওমা, এখানে যে ওগুলোর দাম বারে অনিরি কম নয়—এখানে সব ডাকাত । চার পয়সীয় এক তাড়া পান দেখাইয়া বলিল— বৈঠকখানা বাজার থেকে দু পয়সায়-- দ্যাখো মা—