পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭২০ অন্নপূর্ণ ষ্টোস-এর পিছনে কালীচরণের শাস্ত্রব্যাখ্য' চলে । বিচারের দিন, আদালতে গেলাম। বিচারকের পাশে একখানি কেদারায় বসিয়া ছিলেন সবিত দেবী,— অঙ্গীনবাবুর স্ত্রী। বছর ত্রিশ বত্রিশ বয়স হইবে মেয়েটির । বহু চিন্ত| করিয়া তাহার চোখ দুইটি কোন এক শিল্পী গড়িয়াছিলেন,-দুই চোখের দৃষ্ট দিয়। সমস্ত পৃথিবীটাকে যেন তিনি গ্রহণ করিয়া লইতে পারেন। গভীর কালে তাঙ্গার দৃষ্টি, তাহার ভাবের কুল যেন পাই-পাই করিয়া ও পাওয়া যায় না। সরু তুলির নিপুণ হাতের দুই টানে তাহার ভ্র দুইটি আকিয় তাহার গুষ্টিকৰ্ত্তা বোধ হয় নিজেই মুগ্ধ হইয়। গিয়াছিলেন । কিন্তু, এপল সে চোপের পানে চাহিলে ভয় হয়,— দুইটা চোথের স্থির পলকতীন . দৃষ্টি সহদেবের মুখের উপরে নিবন্ধ ছিল । সহদেবের বুকে লাগিল ভয়, লাগিল শঙ্ক । মনে হইতেছিল ইহার কাছ তইতে লেশমাত্র দয়া ৪ মিলিবে না, ইহার নিকট ক্ষমার প্রস্তাব বাতুলেগু করিতে পারে কিনা সন্দেহ, সহদেব মাথা নীচ করিল। সবিত দেবীর চোপের দিকে চাহিয়৷ আমার বিস্ময় লাগে । সমস্ত সদায়ের রুদ্ধ বেদন তাহাদের পারে আসিয়া থমকাইয়া আছে, সামান্ত একটু নাড়া পাইলেই ঋরিয়। পড়িবে। মুখের কথার নামারকম ভায্য চলে, সুবিধামতন অর্থ করিয়া লইয়। প্রয়োজন হইলে মনকে চোথ ঠারাওঁ যে না যায় এমনও নয় । কিন্তু সবিতা দেবীর সে দৃষ্টিকে ভূল বুঝিবার উপায় ছিল না। মুপের ভাষার অপেক্ষা ঢের বেশী জোরালো ভাষায় সবিতা সহদেবকে বলিতেছিলেন, “তোমাকে নখে করিয়া সহস্ৰ সহস্র টুকর করিয়৷ যদি ছিড়িয়া ফেলিতে পারিতাম, তাহার প্রতি টুকরাটিকে যদি অনস্থ নরককুণ্ডে নিক্ষেপ করিতে পারিতাম, তাহ হইলে হয়ত শাস্তি পাষ্টতাম । কিন্তু তাহাও কতটুকু ? —” রায় বাহির হইল, পুথিবীর বিচারক তাহার আইন-কাচন ঘাটিয়া এক্ষেত্রে শাহ চরম করিতে প্রবাসী—ভীন্দ্র, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড পারেন, তাহাই করিলেন,—সহদেব যাবজ্জীবনের জন্য দ্বীপাস্তর গেল । অহীনবাবু সবিতা দেবীকে লইয়া আদালতের বাহিরে আসিলেন, আমার পায়ের উপরে মাথা লুটাইয়। সবিতা পড়িয়া রহিল। অস্তরে~~ সবিত তাহার ছেলের জাম, কাপড়, শার্ট, প্যাণ্টালুন জত, মৌজা ইত্যাদি জড় করিয়া লইল । বষ্ট, গাত, পেনসিল, দোয়াত, কলম সব এক জায়গায় গুছাইয়। রাগিল, কুমারের ছোট লাইব্রেরীর সমস্ত বইগুলি ঝাড়িয়া মৃছিয়া পরিস্কার করিল, আলমারীগুলার পল সাফ, করিয়া, কাচ পরিষ্কার করিয়া ঝকঝকে করিয়৷ তুলিল । ছেলের জামা কাপড়, ছেলের বই খাতা প্রভৃতি লইয়া মাথায়, মূপে, বুকে, হাতে স্পর্শ করাষ্টয় সবিতা ধীরে ধীরে ডাকে, "কুমার, কুমার,—পোক, লাব। আমার মাণিক আমার, সোনা আমার—” কমারের খেলার জিনিষগুল। একত্র করিয়া তুলিয়৷ রাখিয় সে আস্তে আস্তে বলে, “খোক তুষ্ট, ইস্কুলের বেলা হয়ে যাচ্ছে, লাটুগেল। এখন থাক-” সবিতা নিম্পলকনেত্ৰে চাহিয়া থাকে, তাহার বিশাল চোখ দুইটি শুকন। পটখটে হইয় আছে, আনাচেকানাচে কোথাও এক ফোট জলের সন্ধান নাই – কুমার কোন ফাক দিয়া কেমন করিয়া পালাইবে তাহাই দেখিবার জন্য যেন সে অতিশয় ব্যস্ত। তাহার কোলের মধ্যে মুখ গুজিয়া ইলা কঁাদিয়৷ বলে,“কাকিম।—” । ইলার মাথার উপর নিজের ডান হাতখানি রাখিয়া সবিতা দিন কাটায় । একদিন আমাকে আসিয়া বলিল, “দাদ। পূজোর ছুটির সময় আমরা সবাই মধুপুর গিয়েছিলাম,— কুমার কিছুতেই গেল না, বললে সবাই ওকে বলে যে, ও নাকি মাকে ছেড়ে থাকৃতে পারে না । সেইজন্তক্ট ও এবার আমার সঙ্গে না গিয়ে, কলকাতায় থেকে সকলকে দেখিয়ে দেবে যে, সে কথা সত্যি নয়। আমি কত বোঝালাম, উনি কত বললেন, কিন্তু দুষ্ট ছেলে কিছুতেই খেতে চাইলে না । শেষে ওকে মিহিরের জিম্মীয় রেখে, মিহিরকে ভাল করে বলে-ক'য়ে উনি, আমি আর ইল।