পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] কৃষিশিক্ষার প্রয়োজন ও আয়োজন 6:ፃ স্থান দিবার পর হইতে কৃষিশিক্ষালাভের নিমিত্ত ছাত্রমহলে আগ্রহ দেখা দিল এবং গৌরবে ও মূল্যে কৃষিশিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার সামিল হইয়াছে বলিয়া প্রতি বৎসরই ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছে। বাংলা দেশে কোন রুমি কলেজ নাই। বহুকাল হইতে শোনা যাইতেছে, ঢাকা ক্লষিক্ষেত্রের কাছাকাছি এক কলেজ স্থাপন করা হইবে। কাগজে পত্রে সকল ব্যবস্থাই স্থির হইয় আছে । কেবল বাংলার সরকারী তহবিলে টকা নাই। টাকার সচ্ছলত হইলে কলেজ খলিতে বিলম্ব হইবে না, এইরূপ আশ্বাস পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু কবে যে এই স্থদিন আসিবে, তাহার কোন স্থিরত নাই। পাটের উপর কর বসাইয় যে আয় হয়, ইহার এক ভাগ যায় ভারত-সরকারের রাজকোযে, আর এক ভাগের মালিক এই কলিকাতা । নগরের উন্নতিকল্পে এই টাকা ব্যয় করা হয় । বাংলার রাজস্ব-ভাণ্ডারের অবস্থা সন্তোষজনক নহে । আয় বুদ্ধি হইবার কোন সম্ভাবনা আছে বলিয়া মনে হয় ন! । ১৯১৮ সাল হইতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কৃষিশিক্ষার ব্যবস্থা করিবার উদ্দেশ্যে বহু চেষ্টা করিতেছেন। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বারা ছাত্রের জীবিকার্জনের জন্য স্বাবলম্বী হইতে পারিতেছে না। অথচ জীবন-সংগ্রামে আত্মপ্রতিষ্ঠিত হইবার সামর্থ্যই যদি বিশ্ববিদ্যালয় ন দিতে পারে, তবে এই প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রয়োজনীয়তা নাই। বাংলা দেশে বেকার-সমস্ত কঠিন হইয়া উঠিয়াছে এবং এই সমস্যার সমাধান না করিতে পারিলে আমাদের কল্যাণ নাই । o আধুনিক শিক্ষা-ব্যবস্থ৷ এই সমস্যার মূল কারণ। ংল। দেশে ১৯০১ সালে আট হাজার ছাত্র কলেজে পড়িত, ১৯২৬ সালের ছাত্র সংখ্যা ৩১ হাজার। অথচ ইহাদের হাতে-হাতিয়ারে কাজ করিয়া জীবিকার্জন করিবার শিক্ষাদান করা হইতেছে না। তারপর আজকাল সভা-সমিতির বৈঠকে ও সংবাদপত্রে পল্লীসংস্কারের কথা লইয়া আলোচনা হইতেছে। কৃষিজীবীদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার করিয়া কৃষি-বিজ্ঞানসিদ্ধ প্রণালী প্রবর্তন করা প্রয়োজন, ইহাও শুনিতে পাই । কিন্তু এই কাজ করিবে কাহার ? এই কাজে ব্ৰতী করিবার জন্য দেশের যুবকদের শিক্ষিত করিবার ব্যবস্থ৷ কোথায় ? কৃষিবিজ্ঞান চর্চা করিবার জন্য বাংলা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কি ব্যবস্থা করিয়াছে ? আমাদের ছাত্রদিগকে রসায়ন-শাস্ত্র পড়ান হয় বটে, কিন্তু ইহার সিদ্ধান্তগুলি কৃষি ও শিল্পে প্রয়োগ করিবার কোন সুযোগ দেওয়া হয় নাই । কুষিক্ষেত্রে রসায়নশাস্ত্রের কোন কোন সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করিয়া পৃথিবীর অন্যান্য সভ্য দেশ জমি হইতে সোন। ফলাইয়াছে।* কেবল রসায়ন-শাস্ত্র নহে, বিজ্ঞানের নান শাখা কুমিকম্মে প্রয়োগ করা হইতেছে। একদিন মাস্থ্য অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়াও ভূ-লক্ষ্মীর অঞ্চল হইতে যাহা সংগ্ৰহ করিতে পারিত না, আজ বিজ্ঞান নানা প্রণালী উদ্ভাবন করিয়। তাহ। লাভ করিবার পথ নির্দেশ করিয়া দিতেছে । আমরা যদি কৃষিশিক্ষার আয়োজন অভাবে বিজ্ঞানের সহায়তা লাভ করিতে ন পারি, তবে আমরা দিনের পর দিন লক্ষ্মীর আশীৰ্ব্বাদ হইতে বঞ্চিত হইতে থাকিব । বাঙালীকে যদি জীবন-সংগ্রামে বাচিয়৷ থাকিতে হয়, তবে তাহাকে বাংলা দেশে কৃষিশিক্ষার আয়োজনের নিমিত্ত সচেষ্ট হইতে হইবে —“অঘ্নং বহু কুবীত : তদব্রতম্।।” ( তৈত্তিরায়োপনিষদ )

  • আমেরিকার এক বৈজ্ঞানিক সমিতির অধিবেশনে রসায়নশাস্ত্রের প্রয়োগ সম্বন্ধে এইরূপ মন্তব্য প্রকাশ করা হইয়াছে --

“The only true basis on which the independence of our country can rest is agriculture and manufacture. To the promotion of these nothing tends in a higher degree than Chemistry. It is this science which teaches man how to correct the bad qualities of , the land he cultivates by a .proper application of the various species of manure.”