পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9 o তাই বলছিলেম, ব্যক্তিগত হিসাবে যেমন পঞ্চাশোৰ্দ্ধম আছে, কালগত হিসাবেও তেমূনি । সময়ের সীমাকে যদি অতিক্রম ক’রে থাকি, তবে সাহিত্যে অসহিষ্ণুতা মথিত হ’য়ে উঠবে। নবাগত যারা, তারা যে পর্যন্ত নবযুগে নুতন আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করে নিজের প্রতিষ্ঠা লাভ না করবেন, সে পৰ্য্যন্ত শাস্তিহীন সাহিত্য কলুষলিপ্ত হবে ••• যেটাকে মানুষ পেয়েছে, সাহিত্য তাকেই যে প্রতিবিম্বিত করে, তা নয়, যা তার অনুপলব্ধ, তার সাধনার ধন, সাহিত্যে প্রধানতঃ তারই জন্ত কামনা উজ্জ্বল হ’য়ে ব্যক্ত হ’তে থাকে। বাহিরের কৰ্ম্মে যেপ্রত্যাশা সম্পূর্ণ আকার লাভ করতে পারেনি, সাহিত্যে কলারচনায় তারই পরিপূর্ণতার কল্পরূপ নানাভাবে দেখা দেয় । শাস্ত্র বলে, ইচ্ছাই সত্তীর বীজ। ইচ্ছাকে মারলে ভববন্ধন ছিন্ন হয় ৷ ইচ্ছার বিশেষত্ব অমুসরণ ক’রে আগ্ন। বিশেষ দেহ ও গতি লাভ করে। বিশেষ যুগের ইচ্ছ, বিশেষ সমাজের ইচ্ছ, সেই যুগের, সেই সমাজের আত্মরূপস্থষ্টির বীজশক্তি। এই কারণেই যারা রাষ্ট্রক লোকগুরু, তার রাষ্ট্রীয় মুক্তির ইচ্ছাকে সৰ্ব্বজনের মধ্যে পরিব্যাপ্ত করতে চেষ্টা করেন, নইলে মুক্তির সাধনা দেশে সত্যরূপ গ্রহণ করে না । সাহিত্যে মানুষের ইচ্ছারূপ এমন ক’রে প্রকাশ্ন পায়, যাতে সে মনোহর হয়ে ওঠে, এমন পরিস্ফুট মূৰ্ত্তি ধরে, যাতে দে ইন্দ্রিয়গোচর বিষয়ের চেয়ে প্রত্যয়গম্য হয় । সেই কারণেই সমাজকে সাহিত্য একটি সজীব শক্তি দান করে ; যে ইচ্ছ। তার শ্রেষ্ঠ ইচ্ছ, সাহিত্যযোগে তা শ্রেষ্ঠ ভাষায় ও ভঙ্গীতে দীর্ঘকাল ধ’রে মানুষের মনে কাজ করতে থাকে এবং সমাজের আত্মস্থষ্টিকে বিশিষ্টতা দান করে । রামায়ণ, মহাভারত, ভারতবাসী হিন্দুকে বহুযুগ থেকে মানুষ ক'রে এসেছে। একদা ভারতবর্ষ যে আদর্শ কামনা ক’রেছে, তা ঐ দুই কাব্যে চিরজীবী হ’য়ে গেল। এই কামনাই স্থষ্টিশক্তি । “বঙ্গদর্শনে" এবং বঙ্কিমের রচনায় বাংলা সাহিত্যে প্রথম আধুনিক যুগের আদশকে প্রকাশ করেছে। তার প্রতিভার দ্বারা অধিকৃত সাহিত্য বাংলা দেশের মেয়ে-পুরুষের মনকে এক কাল থেকে অন্ত কালের দিকে ফিরিয়ে দিয়েচে ;--এদের ব্যবহারে ভাষায় রূচিতে পুৰ্ব্বকালবৰ্ত্তীর্ণ ভাবের অনেক পরিবর্তন হয়ে গেল । যা আমাদের ভাল লাগে, অগোচরে তাই আমাদের গড়ে তোলে। সাহিত্যে শিল্পকলায় আমাদের সেই ভাল লাগার প্রভাব কাজ করে। সমাজস্থষ্টিতে তার ক্রিয় গভীর। এই কারণেই সাহিত্যে যাতে ভদ্রদমাজের আদশ বিকৃত না হয়, সকল কালেরই এই দায়িত্ব । বঙ্কিম যে যুগপ্রবর্তন করেছেন, আমার বাস সেই যুগেই । সেই যুগকে তার স্বষ্টির উপকরণ যোগানো এ পর্য্যন্ত আমার কাজ ছিল। যুরোপের যুগান্তর ঘোষণার প্রতিধ্বনি ক’রে কেউ কেউ ব’ল্চেন, আমাদের সেই যুগেরও অবসান হয়েচে ;-কথাটা খাটি না হতেও পারে। যুগান্তরের আরম্ভে প্রদোষান্ধকারে তাকে নিশ্চিত করে চিনতে বিলম্ব ঘটে। কিন্তু সংবাদটা যদি সত্যই হয়, তবে এই যুগসন্ধ্যার যারা অগ্রদূত, তাদের ঘোষণ-বাণীতে শুকতারার স্বরম দীপ্তি ও প্রত্যুষের স্বনিৰ্ম্মল শান্তি আহুক ; নবযুগের প্রতিভা আপন পরিপূর্ণতার দ্বারাই আপনাকে সার্থক করুক, বাক্‌চাতুৰ্য্যের দ্বারা নয়। বিচিত্রা–ফাল্গুন, ১৩৩৬) শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড পাবনা হিন্দুসম্মিলনীর সভাপতির অভিভাষণ হিন্দুসমাজ সনাতন ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত, এ বিষয়ে কি নব্যপন্থী কি প্রাচীনপন্থী কাহারে মধ্যে মতভেদ না থাকিলেও সনাতন ধৰ্ম্ম যে কি তাহা লইয়া কিন্তু দুইটি মত দাড়াইয়াছে। প্রাচীনপন্থীগণ শাস্ত্রের দোহাই দিয়া তারস্বরে বলিতে তারপ্ত করিয়াছেন—বিজ্ঞানেশ্বর হইতে আরম্ভ করিয়া স্মাৰ্ত্ত রঘুনন্দন ভট্টাচাৰ্য্য পর্য্যন্ত স্মৃতিনিবন্ধকারগণ নিজ নিজ নিবন্ধগ্রন্থে শ্রুতি, স্মৃতি ও পুরাণের তাৎপৰ্য্য বর্ণন দ্বারা যে সকল বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্মের স্বরূপ নির্ণয় করিয়া গিয়াছেন তাহা সকল হিন্দুঃই সনাতন ধৰ্ম্ম, সেই সনাতন ধৰ্ম্মের ভিত্তির উপরই হিন্দুসমাজ প্রতিষ্ঠিত ছিল, এখনও আছে এবং চিরকালই এইরূপ থাকিবে, তাহার পরিবর্তন হইতে পারে না; পরিবর্তন বা পরিবর্জন জন্য যাহারা চেষ্টা করেন উাহারা ভ্রান্ত, তাহীদের মতানুসারে চলিলে হিন্দুসমাজ থাকিবে না, হিন্দুজাতির অস্তিত্ব লোপ পাইবে, বর্তমান সময়ের সমাজ-সংস্কারকগণ এই জাজ্জ্বল্যমান অগগুনীয় সত্যকে উপেক্ষা করিয়া দেশে কালাপাহাড়ীর দল স্বষ্টি করিতেছেন, এই কালাপাহাড়ীর দলকে ছাটিয়া হিন্দুসমাজ হইতে বাহির করিতে হইবে, ইহাদের ছায়াম্পর্শ করিলেও পাতিত হয়, স্বতরাং ইহাদিগকে যে কোন উপায়ে দমন করিতে না পারিলে হিন্দুর সৰ্ব্বনাশ অনিবাৰ্য্য।...অন্যদিকে নব্যপন্থীগণ বলিতেছেন যে, প্রাচীনপন্থীদিগের এইরূপ মত মানিয়া চলিলে হিন্দুর অস্তিত্ব অচিরেই বিলুপ্ত হইবে, প্রাচীনপন্থীর মতে হাজার বৎসর চলিয়া হিন্দু আজ সৰ্ব্বনাশের পথে দাড়াইয়াছে, বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্ম জাতিগত হওয়ায় সমাজের প্রত্যেক অঙ্গ অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে। ব্রাহ্মণের কোন গুণ না থাকিলেও ব্রাহ্মণের অধিকার মর্যাদা ও গৌরব ভোগ করিবার ফলে আজ প্রকৃত ব্রাহ্মণ্য ভারত হইতে নির্বাসিত হইয়াছে, রঘুনন্দনের মত যদি সত্য হয় তাহা . হইলে আমাদের দেশে একজনও ক্ষত্রিয় বা বৈষ্ঠ নাই, আছে কেবল কয়েক লক্ষ ব্রাহ্মণ আর কোটি কোট শূদ্র, অর্থাৎ হিন্দুর সমাজ-শরীরের মস্তক ও পাদমাত্র বিদ্যমান, সুতরাং বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য যাহারা সঙ্ঘবদ্ধ হইয়া বিরাট চীৎকারে দিঘুগুল মুখরিত করিয়া তুলিয়াছেন তাহার। তাহাদেরই সিদ্ধান্ত অনুসারে সনাতন ধর্মের মূলে কুঠারাঘাত করিতে কুষ্ঠিত হইতেছেন না। স্মাৰ্ত্ত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য্যের দোহাইও দিতেছেন, আবার তাহারই সিদ্ধান্তের খণ্ডন করিতে বন্ধপরিকল্প হইতেছেন, অথচ আপনাদিগকে পিতৃপিতামহ প্রপিতামহ প্রভৃতি পূৰ্ব্বপুরুষ-সেবিত সনাতন ধৰ্ম্মের একমাত্র রক্ষক বলিয়াও রীতিমত বড়াই করিতেছেন ।... ইহার উপরে যদি কোন প্রাচীনপন্থী বলেন—কাজ কি আমার ক্ষত্রিয়ে বা কাজ কি আমার বৈঙ্গে ! এই কলিযুগে ব্রাহ্মণ ও শূদ্র অর্থাৎ সেব্য ও সেবক এই দুইটি বর্ণের সমাবেশ যদি থাকে তাহ। হইলেই সনাতন ধৰ্ম্ম রক্ষিত হইবে, আমাদের পুর্বপুরুষগণের আমলে ইহা ছিল, তখন যদি হিন্দুর হিন্দুত্ব লোপ না পাইয়া থাকে তাহা হইলে এখনই বা তাহার লোপ হইবে কেন ! ইহার উত্তরে নব্যপন্থীগণ বলেন—বেশ কথা, তাহাই যদি তোমার কলিযুগের সনাতন ধর্মের অভিলষণীয় অবস্থা হয় তবে তাঁহাই সংস্থাপিত করিবার জন্য প্রাণপণে লাগিয়া যাও না কেন ! দেশে বাণিজ্য বন্ধ কর কারণ বৈখ্য নাই, বাণিজ্য করিবার অধিকার অন্ত কাহার থাকিতে পারে ? বাণিজ্য চুলায় যাক, পীড়িত দুর্বলকে অত্যাচারীর হস্ত হইতে নিজ শক্তির দ্বারা রক্ষা করিবার জন্ত উদ্যত হইবার কোন আবশ্যকতা নাই, কারণ ইহ। ত ক্ষত্রিয়ের ধৰ্ম্ম, এ ভারতে যখন এ যুগে একজনও ক্ষত্রিয় নাই,