পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] কোন কোন অংশ লইয়াছে এবং পরের যুগের স্থাপত্যকে কতকগুলি অঙ্গ দান করিয়াছে, ইহা পণ্ডিত না হইলেও দেখিবামাত্র বুঝা যায়। তেমনি মুঘল যুগেও আকবর হইতে শাহজাহান ( এবং আওরংজীবের প্রথম দশ বৎসর ) পৰ্য্যন্ত যে-সব রাজকীয় প্রাসাদ ধৰ্ম্মমন্দির ও সমাধি নিৰ্ম্মিত হয় তাহার মধ্যে একটা ক্রমবিকাশ আছে; এক কথায় বলা যাইতে পারে যে ক্রমে যেন শক্তি সরলতা ও কতকটা কর্কশত৷ সরিয়া গিয়া অলঙ্কার-বহুল স্নিগ্ধ কোমলত বা দুৰ্ব্বলতাকে স্থান দিয়াছে । তাহার পর চিত্রের মত অট্টালিকা-নিৰ্ম্মাণশিল্পেরও অবনতি রাজকোষের অর্থাভাবে ঘটিল । অবশেষে মাটীর বাড়ী বা সমাধি গড়িয়া তাহার বাহিরে একসার ইটের আবরণ অথবা স্থর্কির আস্তর দিয়া ঢাকিয়া তাহার উপর রঙের বাহার ফলান হইলে লাগিল ( মধ্য অষ্টাদশ শতাব্দী। ! নব্য প্রাদেশিক ভাষায় সাহিত্য-স্থষ্টি কালক্রমে ভারতের অজস্র ভাগ্যবিপৰ্য্যয়ের মধ্যে প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ সাহিত্যের ভাষা—সংস্কৃত এবং পালি, লোপ পাইল । সংস্কৃতের জ্ঞান ও চর্চা চলিতে থাকিল বটে, কিন্তু তাহাতে আর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সষ্টি হয় al, so Manual of Hindu Law, Astronomy made Easy, A short cut to Yoga & Roso বহি, অর্থাৎ টাকার টক তস্ত টীকা, লিখিত হইতে লাগিল । ইহা সাহিত্য নহে, ইহার ভিতর দিয়া জাতীয় প্রাণের সাড়া পাওয়া যায় না, লোকের হৃদয়ে পৌছান যায় না। এইরূপে দুঃখে অন্ধকারে কত শতাব্দী কাটিয়া গেল। তাহার পর মধ্যযুগের শেষাশেষি ভারতের ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে জনসাধারণের ভাষা,— একটি একটি প্রাদেশিক “প্রাকৃত”-মাথা তুলিয়৷ দাড়াইল, নিজ অধিকার স্থাপিত করিল। আকবরের সময় হইতেই ইহার পূর্ণ প্রকাশ বলিতে হয়। সত্য বটে ষোড়শ শতাব্দীর অনেক পূর্বেও এই সবু আধুনিক প্রাকৃত ভাষায় কিছু কিছু দোহা, ধৰ্ম্মকথা, গান ও মন্ত্র দেখা দেয়, কিন্তু তাহাকে সাহিত্য বলা যায় না, এবং তাহার অবয়বও অতি ক্ষীণ ছিল। প্রকৃত হিন্দী, ৭৮১ م.م. "یں۔...... ۔ ...-------۔ বাংলা, মারাঠী, আসামী, ও পাঞ্জাবী সাহিত্যের প্রবহমান জীবনধারা ষোড়শ শতাব্দী হইতেই গণিতে হয়। মুঘল বাদশাহরা দেশকে শাস্তি ও স্বশাসন দান করিলেন, শাস্তির ফলে লোকে নিশ্চিন্তমনে অর্থ উপার্জন করিতে লাগিল, দেশ ধনে ধান্তে পূর্ণ হইল ; লোকে অবসর ও মনের শাস্তি পাইল, সাহিত্যস্থষ্টির ইচ্ছা, সাহিত্য উপভোগের ইচ্ছা জাগিয়া উঠিল। ১৫০০ খৃষ্টাব্দের কিছু পর হইতেই আমরা নানা প্রদেশে নানা নব্য ভাষায় সাহিত্য স্বষ্টি দেখিতে পাই । বঙ্গে বৈষ্ণব লেখকগণ, ধৰ্ম্ম জীবনী সঙ্গীত তর্ক প্রভৃতি বিভাগে অগণিত বাংলা গ্রন্থ রচনা করিয়া মহাপ্রভুর মৃত্যু ( ১৫৩৩ ) হইতে আওরংজীবের অধিরোহণ ( ১৬৫৮ ) পর্য্যস্ত সওয়া শ’ দেড় শ’ বৎসরকাল উজ্জল করিয়া তুলিলেন। হিন্দীতে অতুলনীয় কাব্য “রামচরিতমানস" (তুলসীকত ) ১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে রচিত হয়, কিন্তু এই পূর্ণচন্ধের উদয়ের পূৰ্ব্বে কতকগুলি তারক হিন্দী-আকাশে দেখা দিয়াছিল,—যেমন মালিক মুহম্মদ জয়সীর “পদুমাবৎ” ১৫৪০ সালে সম্পূর্ণ হয়, এবং তুলসীদাসের সমকালে বা অল্প পরে অখরাবং, স্বপনাবং, মধুমালতী প্রভৃতি কাব্য লিখিত হয়। মধ্য-ষোড়শ শতাব্দীর পূৰ্ব্বে কবীর দাদু ও নানক যে-সব ধৰ্ম্ম সঙ্গীত এবং বাণী রচনা করেন তাহ হিন্দী হইলেও ঠিক সাহিত্য নহে, ওগুলি যেন জীবনযাত্রার পক্ষে মন্ত্র, মুখস্থ করিয়া রাখিবার জন্ত রচিত । ভারতীয় বাদশাহদের দরবারে যে-সব পারসিক কাব্য এবং রামায়ণ মহাভারতেব সংক্ষিপ্ত অনুবাদ রচিত হয় তাহা উল্লেখ করিব না, কারণ পারসিক সাহিত্যের ইতিহাসে ইহার স্থান অতি হেয়, - ঠিক যেমন আমাদের লেখা ইংরাজী কাব্য ; অথচ পারস্তে জন্ম এমন পারসিক লেখক ও কয়েকজন ভারতে আসিয়৷ এইরূপ কাব্য লেখেন । ফলতঃ, রাজদরবারের সাহিত্য কখনও উচ্চ শ্রেণীতে উঠিতে পারে না, উহার প্রাণ নাই, বাহিরে বার্ণিশ আছে মাত্র। সে যুগের ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে দশ হাজারে একজনের বেশী আরবী ভাষা ব্যবহার করিতে পারিতেন না, ( চোখ বুজিয়া কোরাণ মুখস্থ করা অন্য কথা ), আর হয়ত পাচজন ফারসী ভাষায় লিখিতে বলিতে পারিতেন।