পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেধরা পরশুরাম হরে আবার ছেলেধরার উপদ্রব স্বরু হইয়াছে । অজ্ঞলোকে রটাইতেছে—বালি ব্রিজের বনিয়াদ পোক্ত করিবার জন্য দশ হাজার ছেলে পুতিবে। বিজ্ঞলোকে বলিতেছেন—ছেলেরা এখানকার কৰ্ত্তব্য শেষ করিয়া বানপ্রস্থ অবলম্বন করিতেছে। গরম দলের মুখপত্র দৈনিক ধূমকেতু ভ্ৰকুটিকুটিল অক্ষরে প্রশ্ন করিয়াছে,— কোন জুরাত্মা স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশমাতৃকাকে সস্তানহারা করিতেছে ? দেশদ্রোহী চুনকালি পত্রিকা ছোট্ট অক্ষরে জবাব দিয়াছে—তং ত্বমসি ধূমকেতো । বংশলোচনবাবুর বৈঠকখানায় এই সম্বন্ধে আলোচনা হইতেছিল। তার ছোট ছেলে ঘেণ্ট, বলিল—‘বাবা, ছেলেধরা বাবা ধরে ? বল না বাবা।’ উকিল বিনোদবাবু বলিলেন—“তেমন-তেমন বাবা হ’লে ধরে বই কি । কিন্তু তুমি ভেবো না থোকা, আমরা রক্ষা করব ।’ 尊 ংশলোচনের শাল নগেন বলিল—“চাঢ়য্যে মশায়, আপনি সাবধানে চলা-ফেরা করবেন।’ ংশলোচন বলিলেন—“উনি ত প্রবীণ লোক, ওঁকে ধরবে কেন ? নগেন বলিল—‘মনেও ভাববেন না তা । হকুমানের আরক থাইয়ে তরুণ বানাবে, তারপর চালান দেবে।’ বংশলোচনের ভাগনে উদয় সভয়ে বলিল— তরুণদেরই ধরচে বুঝি ? কেদার চাটুয্যে হুক রাখিয়া কহিলেন—উদে, তুই কি রকম লেখাপড়া শিখেচিস দেখি। জোয়ান, যুবক আর তরুণ–এদের মধ্যে তফাৎ কি বলত। উদয় বলিল—‘জোয়ান হচ্চে যার গায়ে খুব জোর । যুবক মানে যুবা । তরুণ হ’ল গিয়ে মানে অর্থাৎ যাকে বলে—থামুন, অভিধান দেখে বলচি— চাটুয্যে কহিলেন—‘অভিধানে পাবি না, আজকাল মানে বদলে গেছে । আমি অনেক ভেবে-চিন্তে ষা বুঝেচি বলি শোন।—যার দাড়ি গোপ ছ-ই আছে তিনি হলেন জোয়ান, যেমন রবিঠাকুর, পি. সি. রায়। যার দাড়ি নেই কিন্তু গোপ আছে তিনি যুবক, যেমন মহাত্মা গান্ধী, আশু মুখুয্যে। আর, যার দাড়িও নেই গোপও নেই তিনি তরুণ, যথা—বঙ্কিম চাটুযে, শরৎ চাটুয্যে আর এই কেদার চাটুয্যে।’ উদয় বলিল –‘আর আমি ? নগেন মামা ? চাটুয্যে কহিলেন—তোর হলি ওই তিনের বার, যাকে বলে অপোগণ্ড। ধরতে হয় তোদেরই ধরবে ? উদয় চিন্তা করিয়া বলিল-“আমি দাড়ি রাখতুম, কিন্তু বউ বলে—” নগেন ধমক দিল—‘খবরদার উদে৷ ” চাটুয্যে মশায় বলিলেন—‘এবার যে ছেলেধরার উপদ্রব হয়েচে সেটা কিছুই নয়। হয়েছিল বটে পাচ বছর আগে, যেবার আমাদের মজিলপুরের চরণ ঘোষের ছেলে নিরুদ্দেশ হয়।’ বিনোদবাবু বলিলেন—“কি হয়েছিল বলুন না চাটুয্যে মশায় !’ চাটুয্যে মশায় বলিতে লাগিলেন । ত্তিক ছেলেটি শিশুকাল থেকেই বেশ চৌকস । যখন দশ বছর বয়েস, তখন সে তার বান্ধবীদের ব’লত—মেয়েগুনো আবার মানুষ ! মাথায় একগাদ চুল, আবার ফিতে-বাধা, আবার শুধু শুধু দাত বার ক’রে হাসে ! মারতে হয় এক ঘুষি । তারপর চোদ্দ বছর বয়সে সে তার পরম বন্ধুকে লিখলে-নারীর প্রেম ? কখনই নয়। ভাই বাটলু, এ জগতে কারো থাকবার দরকার নেই, শুধু তুমি আর আমি। কিন্তু দু-বছর যেতে না-যেতে তার যৌবন-নিকুঞ্জের পার্থী কী কী ক’রে